বাংলাদেশের স্থায়িত্ব ও স্থিতিশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা অবান্তর

সম্প্রতি ড. আকবর আলি খান রচিত ‘অবাক বাংলাদেশ- বিচিত্র ছলনাজালে রাজনীতি’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। এবারের একুশে বইমেলা উপলক্ষে প্রথমা প্রকাশন এটি প্রকাশ করে। কিন্তু বইটি এতই পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছে যে, ফেব্রুয়ারিতেই ২য় মুদ্রণ প্রকাশ করতে হয়েছে। ড. আকবর আলি খান খুব বেশি লেখেন না, আবার কমও লেখেন না। তার প্রতিটি গ্রন্থে স্বকীয়তার সুস্পষ্ট ছাপ রয়েছে। কলকাতার দেশ পত্রিকা মন্তব্য করেছে, ‘এই লেখক লিখতে জানেন।’ সব শিক্ষিত মানুষ কম-বেশি লিখতে পারেন। কিন্তু লিখতে পারা এবং লিখতে জানার মধ্যে বিরাট ফারাক রয়েছে। যারা লিখতে জানেন তারা শুধু লিখতেই পারেন না, তারা তাদের লেখাকে হৃদয়গ্রাহী রূপে উপস্থাপন করতে পারেন। তাদের লেখা পাঠকের মনের খোরাক জোগায়। প্রতিটি পাঠকের মনে অনেক প্রশ্ন থাকে। পাঠক খুঁজে বেড়ায় কোন বই পড়লে এ প্রশ্নগুলোর সদুত্তর পাওয়া যাবে।
লিখতে জানা লেখকদের লেখা হয় কালোত্তীর্ণ। ড. আকবর আলি খান এ বইটি লিখতে গিয়ে পাঠক মনের অনেক প্রশ্ন খুঁজে বেড়িয়েছেন এবং বইটির মধ্য দিয়ে এসব প্রশ্নের যুক্তিসঙ্গত উত্তর খোঁজারও চেষ্টা করেছেন। এ বইটি পড়তে গেলে পাঠককে অনেক সময় হেয়ালির মধ্যে পড়তে হয়। অনেক ক্ষেত্রেই তিনি পাঠককে সুস্পষ্ট উত্তর দেননি। সম্ভাব্য উত্তরগুলোর মধ্যে প্রতিটিতেই যে কিছু সত্য আছে তা তুলে ধরতে কোনো ধরনের শৈথিল্য লেখকের লেখায় প্রকাশ পায়নি। অনেক ক্ষেত্রে পাঠকের কাছেই সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। পূর্ব থেকে অনুমিত কোনো সিদ্ধান্ত বা বিশ্বাস তার লেখাকে আচ্ছন্ন করে ফেলেনি। আমাদের দেশে মুক্ত মনের মানুষ বা মুক্ত মনের লেখক নিয়ে অনেক কথা হয়। যাদের মুক্ত মনের লেখক বা মানুষ হিসেবে ঠাহর করা হয় যুক্তির কষ্টিপাথরে তাদের অনেকেই অন্ধ আবেগ বা অন্ধ বিশ্বাস দোষে দুষ্ট। এরকম কোনো অন্ধ বিশ্বাস আকবর আলি খান সযত্নে এড়িয়ে চলেন। এখানেই তার শ্রেষ্ঠত্ব। আকবর আলি খান যখন এ গ্রন্থের পাণ্ডুলিপি প্রস্তুত করছিলেন, তখন তিনি তার একমাত্র কন্যাকে হারান। তার স্ত্রীও রোগ শয্যায় শায়িত। এরকম পরিস্থিতিতে কারও পক্ষে স্থির থাকা সম্ভব নয়। সম্ভব নয় গভীর তাত্ত্বিক বিষয়গুলোকে নিয়ে চিন্তা করার এবং সেগুলো হৃদয়গ্রাহী করে পাঠকের কাছে হাজির করা। এ ক্ষেত্রে আকবর আলি খান উদ্ভাসিত হয়েছেন যুধিষ্ঠির রূপে। তিনি তার বইয়ের দ্বিতীয় অধ্যায়ে লিখেছেন, ‘বাংলাদেশে জাতীয়তাবাদ ভারত ও পাকিস্তানের জাতীয়তাবাদের তুলনায় অনেক বেশি শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। ‘জিন্দাবাদ’ তকবির না দিলেও এ জাতীয়তাবাদ টিকে থাকবে। জিন্নাহর পাকিস্তান ও গান্ধীর ভারতের তুলনায় শেখ মুজিবের বাংলাদেশ অনেক বেশি টেকসই। তবু আগামী দিনগুলোতে একে দুটি সমস্যার সম্মুখীন হতে হবে।
প্রথম সমস্যা হল আধিপত্যবাদ, যা জাতীয়তাবাদের স্বপ্ন সফল হওয়ার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে। দ্বিতীয়ত, বিশ্বায়ন এ জাতীয়তাবাদের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আকবর আলি খান বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদের জন্য দুটি প্রধান বিপদ সম্পর্কে যথার্থভাবেই ইঙ্গিত দিয়েছেন। বিশ্বায়নের কাছ থেকে বিপদ সম্পর্কে অনেকেই একমত হলেও আধিপত্যবাদের বিপদ সম্পর্কে এ দেশের সরব বুদ্ধিজীবীদের বেশিরভাগই একমত নন। তারা ভারত ও বাংলাদেশের স্বার্থের মধ্যে এক ধরনের সম্পূরকতা দেখতে পান। এমনকি এদের কেউ কেউ, দুর্ভাগ্যজনক হলেও ভাবতে চান বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে বিলীন হয়ে গেলেও খারাপ কী? অনেক কিছুই আছে যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি তার ভেতরকার শক্তি হারিয়ে ফেলতে পারে। ভারত যেভাবে অভিন্ন নদীগুলোর পানির ভাগাভাগি নিয়ে টালবাহানা করছে, এমনকি অভিন্ন নদীগুলোর পানি প্রত্যাহার করছে, তার ফলে নদীমাতৃক বাংলাদেশ কথাটির কোনো তাৎপর্যই অবশিষ্ট থাকবে না। পানির অভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশ একদিন পরিবেশগত মহাবিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। বাংলাদেশের মানুষ পরিবেশ উদ্বাস্তু হয়ে অন্য কোনো দেশে বা অন্য কোথাও জীবন রক্ষার তাগিদে বেরিয়ে পড়তে বাধ্য হবে। আকবর আলি খান বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ভারতীয় আধিপত্যবাদকে সবচেয়ে শক্তিমান আঞ্চলিক আধিপত্যবাদ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে তিনি ভারতীয় কূটনীতিবিদ জেএন দীক্ষিতের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়েছেন। দীক্ষিতের ভাষায়, ‘The point to be remembered is that India looms large in maû ways in Bangladesh's domestic politics and foreign policy. India is too overarching and too proximate to be ignored. It is also too proximate and assymetrical identity to have a close relationship with. This is the Bangladesh. আকবর আলি খান লিখেছেন, সৌহার্দ্যে ও প্রতিযোগিতায়, ভালোবাসায় ও বিদ্বেষে ভারত এবং বাংলাদেশের সম্পর্ক অনন্য। অভিন্ন জনগোষ্ঠী, একই ভাষা, ধর্মের বন্ধন ও সামগ্রিক ইতিহাসজুড়ে পারস্পরিক লেনদেন এদের নিবিড় বাঁধনে বেঁধেছে। অথচ আজ দুটি দেশ কাঁটাতারের বেড়ায় বিভক্ত। কয়েক দশক আগে এরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মুক্তি সংগ্রামে অংশ নিয়েছে। আজ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলজুড়ে প্রচণ্ড বাঙালি বিদ্বেষ দৃশ্যমান। তবু কোনো কোনো ক্ষেত্রে সহযোগিতার সুফলও দেখা যায়। প্রায় ৬৭ বছর পর ছিটমহল সমস্যার সমাধান হয়েছে। ট্রানজিট চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। তবু ৪টি প্রাচীন সমস্যার আশু কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। আকবর আলি খানের মতে সমস্যাগুলো হচ্ছে- পানি বণ্টন সমস্যা, গরু ও চোরাচালান, মানুষের চলাফেরার স্বাধীনতা এবং বাণিজ্য ঘাটতি ও বিনিয়োগ। তার মতে, পানি বণ্টন সমস্যার আশু কোনো সমাধান দেখা যাচ্ছে না। তাহলে কি বলতে হবে আশু না হোক, দূর ভবিষ্যতে সমস্যাটির সমাধান হবে? এ মুহূর্তে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন ভারত সফর উপলক্ষে তিস্তা চুক্তি নিয়ে নানাজন নানা মত ব্যক্ত করছেন। প্রশ্ন হল- তিস্তা চুক্তি হলেও কি বাংলাদেশ তার কাক্সিক্ষত হিস্যা এ নদী থেকে লাভ করবে? আমার কিন্তু তা মনে হয় না। তিস্তা নদীতে বাঁধ দিয়ে জলবিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে।
বিশেষ করে সিকিমে এ প্রয়াস চলছে। অন্যদিকে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে তিস্তার পানি সেচের জন্য প্রত্যাহার করা হচ্ছে। বাংলাদেশের ভেতরে তিস্তা বাঁধ দিয়েও শুষ্ক মৌসুমে উল্লেখ করার মতো পানি ধরে রাখা যাচ্ছে না। কারণ উজানে পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশ অংশে তিস্তার প্রবাহ অনেক ক্ষীণ হয়ে গেছে। শুষ্ক মৌসুমে বড়জোর সাত-আটশ’ কিউসেক পানি পাওয়া যায়। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অভিন্ন নদীতে কোনো দেশ একতরফাভাবে পানির প্রবাহ রুদ্ধ করতে পারে না। তিস্তাতে বাঁধ দিয়ে ভারত সে কাজটিই করেছে। আন্তর্জাতিক নদীর পানি বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতার নীতি অনুসরণ করতে হয়। এমন কিছু করা যাবে না, যার ফলে অন্য পক্ষের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়। আমরা বাংলাদেশে সে রকম ক্ষতিরই সম্মুখীন। সমতাভিত্তিক পানি বণ্টনের জন্য ভারতকে নিশ্চয়তা দিতে হবে। এটাকে বলা হয় চুক্তির গ্যারান্টি ক্লজ। ভারত যদি বাঁধগুলো অপসারণ করতে না চায়, তাহলে একটা প্রযুক্তিগত সমাধানে আসতে হবে। যার ফলে বাংলাদেশ তার প্রাপ্য পানির ন্যায্য হিস্যা পায়। ১৯৯৬ সালে গঙ্গার পানি চুক্তি হয়েছিল। এ চুক্তির মেয়াদ ৩০ বছর। দুর্ভাগ্যের বিষয় শুষ্ক মৌসুমে অনেক সময় বাংলাদেশ চুক্তি মোতাবেক পানি পায় না। অথচ অভিন্ন নদীর ক্ষেত্রে সব পক্ষের জন্য গ্রহণযোগ্য সমাধান করা গেলে সবারই কিছু কিছু মঙ্গল হতো। বিদ্বেষ ও অসন্তোষ হ্রাস পেত। ভারত অভিন্ন নদীর পানি নিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। কারণ নদীগুলোর উজান অংশ ভারতে পড়েছে। এ ভৌগোলিক সুবিধা এবং বিশাল দেশ হওয়ার সুবিধা ব্যবহার করে ভারত তার মনমতো সমাধান বাংলাদেশের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছে।
এসব দেখে মাঝে মাঝে প্রশ্ন জাগে, মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টিতে ভূমিকা রেখে কতটুকু মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছে? সত্যিকারের মহানুভবতা ক্ষণিকের নয়। সময়কে অতিক্রম করে যায়। জাতীয়তাবাদের সীমাবদ্ধতা হয়তো এমনটি যে, নিজ স্বার্থের প্রতি অন্ধ পক্ষপাতিত্ব জাতীয়তাবাদকে সংকীর্ণতার গলিতে প্রবেশ করিয়ে দেয়। সম্ভবত এ নিষ্ঠুর বাস্তবতার সঙ্গে আমাদের অনেক কাল কাটাতে হবে। আকবর আলি খান ২৬ মার্চ প্রথম আলোতে যে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন তার শিরোনাম হল ‘বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবে স্থায়ী ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র।’ তিনি তার গ্রন্থে বাংলাদেশের টেকসই বৈশিষ্ট্যের ব্যাপারে যে মত দিয়েছেন এ সাক্ষাৎকারটি তারই একটি বিস্তারিত ব্যাখ্যা। ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় বাংলাদেশের অনেক টেকসই অবস্থানসংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, ‘এদিক থেকে দেখা যাক, বাংলাদেশ যদি না থাকে তাহলে কী হবে? হয় এটা ভারতের নয়তো পাকিস্তানের অংশ হবে। আমি মনে করি না, ভারতের পক্ষে বাংলাদেশের জনসংখ্যা গ্রহণ করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশে ১৫ কোটি মুসলমান আছে। ১৫ কোটি মুসলমান ভারতের নাগরিক হলে ভারতের রাজনীতি বদলে যাবে, বর্ণহিন্দুদের প্রভাব ক্ষুণ্ণ হবে। ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল এটা মানবে না। অন্যদিকে ১৬ কোটি বাঙালি ভারতের বাঙালিদের সঙ্গে যোগ হলে ২৩ কোটি বাঙলাভাষী অপরাপর প্রদেশগুলোর জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে হাজির হবে, তাদের মধ্যে বিরাট প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। সুতরাং ভারতের পক্ষে কোনোভাবেই বাংলাদেশকে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। আর ১৬ কোটি বাংলাদেশীকে বাদ দিয়ে তো বাংলাদেশকে গ্রহণ করা আরও অসম্ভব।’ এর পরপরই তার প্রতি প্রশ্ন ছিল, তার মানে মুসলমান হিসেবে, বাঙালি হিসেবে বাংলাদেশই এই ভূ-খণ্ডের অধিকাংশ জনগণের রাজনৈতিক ঠিকানা? জবাবে তিনি বলেছেন, ‘ঠিক তাই। আর পাকিস্তানে তো আমরা গিয়েই জেনেছি সেটি অসম্ভব। পাকিস্তান এখনও বাঙালিদের প্রতি বিরূপ। সুতরাং এ দিক থেকে বাংলাদেশ সুস্পষ্টভাবে স্থায়ী ও স্থিতিশীল রাষ্ট্র। পক্ষান্তরে, ভারতে বিভিন্ন জাতির মুক্তি সংগ্রাম রয়েছে, তাদের কেউ কেউ সফলও হতে পারে। পাকিস্তানের একই অবস্থা। সুতরাং ভারত ভাঙার আশংকা আছে, পাকিস্তানও ভেঙে যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ ভাঙার কোনো আশংকা নেই।’ আকবর আলি খানের বক্তব্য থেকে এটাই প্রতীয়মান হয়, ভারত ১৯৪৭-এর স্বাধীনতার পর আজ পর্যন্ত সত্যিকার অর্থে সেক্যুলার হতে পারেনি। তাই যদি হতো ভারতের রাজনীতিবিদরা বাড়তি মুসলমান জনসংখ্যা নিয়ে কেন শংকিত বোধ করেন? এখন তো ভারতে হিন্দুত্ববাদের জয়জয়কার। এ ক্ষেত্রে বলা যায় কংগ্রেসের মধ্যে হিন্দুত্ববাদ ছিল অঘোষিত এবং বিজেপির মধ্যে এ ব্যাপারে কখনই কোনো রাখঢাক ছিল না। সত্যিকার অর্থে ভারত ভাগের জন্য শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসকেই দায়ী করতে হয়। আকবর আলি খানের সাক্ষাৎকার থেকে জানা যায়, পাকিস্তান না হলে কেবিনেট মিশন পরিকল্পনা মাফিক ৩টি রাষ্ট্র হতো। এ পরিকল্পনা ব্রিটিশ সরকার, কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ- সবাই মেনে নিয়েছিল।
তাহলে একভাগে থাকত যুক্ত বাংলা ও আসাম, পশ্চিম পাকিস্তানের অঞ্চল হতো এক ভাগ, বাকি ভারত থাকত এক ভাগে। মুসলিম লীগ শেষ পর্যন্ত কেবিনেট মিশন প্ল্যানে রাজি ছিল, কিন্তু কংগ্রেস মানেনি। কংগ্রেস অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী হয়ে এটার বিরোধিতা করে। মাওলানা আবুল কালাম আজাদের মন্তব্য উল্লেখ করে আকবর আলি খান বলছেন, (এটা আসলে মাওলানা আজাদেরই মন্তব্য), এটা মস্ত বড় ভুল হয়ে গেল। এ ভুলেরই খেসারত হল পূর্ব পাকিস্তান। লাখ লাখ মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে গেল, বহু মানুষ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় প্রাণ হারাল। তারপরও সমস্যার সমাধান হল না। কাজেই পূর্ব পাকিস্তানের জন্ম হল এক ঐতিহাসিক দুর্ঘটনা। বাংলাদেশের আবির্ভাব সেই দুর্ঘটনারই সংশোধন। ইতিহাসে দুর্ঘটনা বলে কিছু আছে কি? ইতিহাস তার আপন গতিতে এগিয়ে চলে। এ গতি প্রবাহে কোনো ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হলে ইতিহাস তার নিজ নিয়মে ভিন্ন পথে এগিয়ে চলে। বাংলাদেশকে ভারত কখনও গিলে খাবে না। অথবা বাংলাদেশ অন্তর্ভুক্ত হতে চাইলেও ভারতের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। এ বিশ্লেষণের প্রতি একমত হতেই হয়। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায় দেশটাকে নিয়ে আমরা কী করছি? এখানে সুশাসনের অবস্থা কী? এই রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানগুলো নাজুক হয়ে পড়ছে কেন? আমরা যদি নিজেরা এ পরিস্থিতি রোধ করতে না পারি তাহলে বাইরের শক্তি অবান্তর প্রমাণিত হলেও ভেতরের দুর্বলতা দুর্বলতা হিসেবেই অব্যাহত থাকবে। বাংলাদেশের বিপদ এ দুর্বলতার মধ্যেই নিহিত।
ড. মাহবুব উল্লাহ : অধ্যাপক ও অর্থনীতিবিদ

No comments

Powered by Blogger.