সৌদি আরবে পরিবর্তন আসছে?

সৌদি আরবে কী কী পরিবর্তন হয়েছে জানতে চাইলে অনেকে সচরাচর বলে থাকেন, হবে। তবে তার জন্য সময় লাগবে। বাস্তবে কিন্তু দেশটিতে কয়েক মাসের মধ্যেই পরিবর্তনের আভাস মিলছে। স্থানীয় এক সফল নারী ব্যবসায়ী বললেন, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসের মধ্যে নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পাবেন—এমন দাবির পক্ষে তিনি এক পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গে বাজি ধরেছেন। তবে এখন মনে হচ্ছে,
ব্যাপারটা ঘটতে বছর গড়িয়ে যাবে। আর আপাতত কেবল ৪০ বছরের বেশি বয়সী নারীরাই গাড়ি চালানোর সুযোগ পেতে পারেন। নারীদের গাড়ি চালানোর সুযোগ পাওয়ার বিষয়টি সৌদি আরবে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্কের বিষয়। রাজপরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ লোকজনের মধ্যেও এ বিষয়ে নানা রকমের ভবিষ্যদ্বাণী শোনা যাচ্ছে। কেউ বলছেন, অল্প বয়সী নারীরাও শিগগির গাড়ি চালানোর সুযোগ পাবেন। এটা একটা অর্থনৈতিক বিষয়ও বটে। একাধিক গবেষণার ফল বলছে, মেয়েদের গাড়ি চালাতে দিলে সৌদি অর্থনীতিও চাঙা হবে। সৌদি আরবের শাসকেরা এখনো বেশ রক্ষণশীল। সেখানে বহু সাধারণ মানুষও পুরোনো ধাঁচের জীবনযাত্রা বহাল রাখার পক্ষপাতী। তারপরও বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশটির সমাজে বড় ধরনের পরিবর্তনের জন্য চাপ ক্রমেই বাড়ছে। রিয়াদের গালফ রিসার্চ সেন্টারের বিশ্লেষক জন সফাকিয়ানাকিস বলেন, ‘সময় বদলে যাচ্ছে। তেল বিক্রি করে সৌদি আরবের আয় বছর কয়েক আগেই অর্ধেকে নেমে এসেছে। তাই এখন বিভিন্ন ক্ষেত্রে পরিবর্তন জরুরি। বিমানটি এত দিন একটা ইঞ্জিনে চলেছে। এখন কয়েকটি ইঞ্জিন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।’ বলা বাহুল্য, ‘একটা ইঞ্জিন’ বলতে তেল ও গ্যাসের ওপর সৌদি অর্থনীতির ৯০ শতাংশ নির্ভরতার দিকেই ইঙ্গিত করেছেন সফাকিয়ানাকিস। নতুন এই বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে সৌদি শাসকেরা ভিশন ২০৩০ নামের এক মহাপরিকল্পনা নিয়েছেন। গত বছর এটি প্রকাশ করা হয়েছে। ৩১ বছর বয়সী উপ-যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান এই উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা তৈরির জন্য নামীদামি বেশ কয়েকজন পরামর্শককে দায়িত্ব দিয়েছিলেন।
সৌদি আরবে সরকারি চাকরির বেতন ও প্রণোদনা কমেছে। প্রবৃদ্ধির একটি চালিকাশক্তি হিসেবে বেসরকারি খাত বিকশিত হচ্ছে। একজন ব্যবসায়িক নির্বাহী বললেন, তাঁরা এখন ভালো দাম না পেলে সরকারের কাছে পণ্য বিক্রি করছেন না। ভিশন ২০৩০ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের সম্ভাবনা কম। তারপরও একটা লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করাটাকেই অর্জন হিসেবে দেখা হচ্ছে। ৮১ বছর বয়সী সৌদি বাদশাহ সালমানের প্রিয় ছেলে হিসেবে পরিচিত উপ-যুবরাজ এই পরিকল্পনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সে কারণেই পরিবর্তনের সম্ভাবনাটা বেশি। দেশটির দুই-তৃতীয়াংশ মানুষই তরুণ বা কম বয়সী। তাঁদের অনেকে পশ্চিমা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। সৌদি আরবে চলচ্চিত্র প্রদর্শন নিষিদ্ধ। রেস্তোরাঁয় নারী-পুরুষের বসার জায়গা আলাদা। সেখানে আত্মীয় ছাড়া কোনো নারীর সঙ্গে বসে খাওয়াদাওয়ার নিয়ম নেই। তবু এক বছরে ছোটখাটো হলেও তাৎপর্যপূর্ণ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে। রাস্তায় রাস্তায় আগে যে কঠোর ধর্মীয় পুলিশ ছিল, এখন তারা নেই। কঠোরতা শিথিলের অংশ হিসেবে এই বাহিনীকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। জনগণের জন্য বিনোদনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ দেশবাসীর জীবনে কিছু আনন্দ জোগানোর দায়িত্ব নিয়েছে। তবে তাতে সীমারেখা থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.