পরিবারের সদস্যদের জড়ানোর চেষ্টা ছিল

পদ্মা সেতু নির্মাণে দুর্নীতির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ ও অবস্থানকে দৃঢ়ভাবে চ্যালেঞ্জ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়েছে মন্ত্রিসভা। গতকাল সোমবার মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে প্রসঙ্গটি নিয়ে অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়। বৈঠকে নিয়মিত আলোচ্যসূচির পাশাপাশি কানাডার আদালতের রায় এবং পদ্মা সেতু বিষয়ে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের অবস্থান নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সময় বলেন, তাঁর পরিবারের সদস্যদের এই কল্পিত ঘটনায় জড়ানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু কানাডার আদালতের রায়ে প্রমাণিত হলো যে কোনো দুর্নীতি হয়নি। গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ওই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও পদ্মা সেতু বিষয়ে আলোচনায় অংশ নেন তোফায়েল আহমেদ, মোহাম্মদ নাসিম, আনিসুল হক, রাশেদ খান মেনন, মতিয়া চৌধুরী প্রমুখ তাঁদের কেউ কেউ এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে সাধারণ প্রস্তাব ওঠানোর কথা বলেন। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক মন্ত্রী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী আলোচনায় অংশ নিয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যদের জড়ানোর বিভিন্ন অপতৎপরতার কথা উল্লেখ করেন।
সরকারের একজন জ্যেষ্ঠ মন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর একজন উপদেষ্টার নাম উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁরা বিশ্বব্যাংকের শর্ত মেনে ওই সময়ে চারজনকে গ্রেপ্তার করতে প্রধানমন্ত্রীকে পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে এক মন্ত্রী, এক উপদেষ্টা ও এক সচিব ছিলেন। এর মধ্যে একজন সচিব গ্রেপ্তারও হন। বিষয়টি জানার পর প্রধানমন্ত্রী তাঁকে মুক্তির ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেন। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে বিশ্বব্যাংকের ঋণ প্রত্যাহারের পেছনে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, অধ্যাপক ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে রাখতে সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন তাঁকে (প্রধানমন্ত্রীকে) টেলিফোনে কয়েকবার অনুরোধ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আইন অনুযায়ী এটা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী ব্যাংকের উপদেষ্টা হিসেবে ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকে রাখার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেটি তাঁরা মেনে নেননি। গত শুক্রবার কানাডার একটি আদালত পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ খারিজ করে দেন। এরপর থেকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে। গতকাল মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, মন্ত্রিসভা সন্দেহজনক অভিযোগের ভিত্তিতে প্রতিশ্রুত অর্থ প্রদান স্থগিত করার জন্য বিশ্বব্যাংকের নিন্দা জানায়।
তিনি বলেন, এর মাধ্যমে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশকে তার কাঙ্ক্ষিত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। যথাসময়ে পদ্মা সেতু নির্মিত হলে মোট দেশজ উৎপাদনের প্রবৃদ্ধি আরও ১ দশমিক ২ শতাংশ অর্জিত হতো। এর ফলে জিডিপি হতো ৮ শতাংশ। সেতু নির্মাণে বিলম্বের কারণে দেশ এই অগ্রগতি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, মন্ত্রিসভার সদস্যরা বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানানোর দৃঢ় অবস্থানের প্রশংসা করেন। সচিব বলেন, মন্ত্রিসভা মনে করে, কানাডার আদালতের রায়ে প্রমাণিত যে বিশ্বব্যাংক তাদের অভিযোগ প্রমাণ করতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। অথচ বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতির বিপুল ক্ষতি হয়েছে। মন্ত্রিসভায় এই অভিমত ব্যক্ত করা হয় যে কানাডার আদালতের রায় বাংলাদেশের অবস্থানকে সুসংহত এবং বিশ্বদরবারে সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর করেছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, গতকালের বৈঠকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রিসভা মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের সহায়তায় ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর জন্য মালয়েশিয়ার সরকারকে ধন্যবাদ জানায়। তিনি বলেন, বিশ্বের মধ্যে মালয়েশিয়াই প্রথম রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছে।
বিমান চলাচলে বিঘ্ন ঘটালে মৃত্যুদণ্ড বেসামরিক বিমান চলাচলে যেকোনো ধরনের বিঘ্ন সৃষ্টির ঘটনা প্রমাণিত হলে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার বিধান যুক্ত করে নতুন আইন করা হচ্ছে। সর্বোচ্চ এই শাস্তির বিধানসংবলিত বেসামরিক বিমান চলাচল আইন, ২০১৭-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এর আগে মৃত্যুদণ্ডের বিধান ছাড়া খসড়াটি গত বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রিসভায় নীতিগত ও পরে চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। কিন্তু আইন মন্ত্রণালয়ের আইনি মত (ভেটিং) শেষে এটি জাতীয় সংসদে ওঠানোর আগমুহূর্তে সর্বোচ্চ শাস্তির বিষয়টি নতুনভাবে সংযোজন করা হলো। মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের বলেন, আন্তর্জাতিক বেসামরিক বিমান পরিবহন সংস্থার (আইসিএও) দিকনির্দেশনা অনুযায়ী বেসামরিক বিমান পরিবহন অধ্যাদেশ, ১৯৬০-এর হালনাগাদ করা হয়েছে। গতকাল মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করেছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৭-এর খসড়া এবং বাংলাদেশ পারমাণবিক শক্তি কমিশন আইন, ২০১৭-এর খসড়া। এ ছাড়া খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন, ২০১৭-এর খসড়ায় একটি সংবিধিবদ্ধ সংস্থা প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব করা হয়েছে। বস্ত্র খাতের ভিশন ও মিশন নিয়ে বস্ত্রনীতি হালনাগাদ করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.