সিলেটে আ.লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তরুণ নিহত

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে সাইফুল ইসলাম (১৮) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল রোববার সকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সমর্থকদের সঙ্গে বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের এই সংঘর্ষে ১৬ জন আহত হয়েছেন। উপজেলার বাংলাবাজারে এ সংঘর্ষ হয়। এই নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মো. আতাউর রহমান দাবি করেছেন, নিহত সাইফুল তাঁর সমর্থক। সাইফুলের লাশ নিয়ে আতাউরের সমর্থকেরা দুই ঘণ্টা ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন।
ওসমানীনগর উপজেলা পরিষদের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৬ মার্চ। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া আতাউর রহমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক মো. আখতারুজ্জামান চৌধুরী (জগলু চৌধুরী) বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন। প্রার্থী হওয়ায় তাঁকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির মো. শিব্বির আহমদও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। গ্রামবাসী ও পুলিশ সূত্র বলেছে, আখতারুজ্জামানকে নিয়ে গত শনিবার বিকেলে উপজেলার সাদীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহসভাপতি কবির উদ্দিন ওই ইউনিয়নের বাংলাবাজারে গণসংযোগে যান। কবির উদ্দিন সেখানে পাশের জগন্নাথপুর উপজেলার উত্তর কালনীরচর গ্রামের আল-আমিনসহ ছয় তরুণকে আখতারুজ্জামানের পক্ষে কাজ করতে বলেন। ওই তরুণেরা নিজেদের আতাউর রহমানের সমর্থক বলে জানান। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। বাংলাবাজার ওসমানীনগরের দক্ষিণ কালনীরচরের বাজার। শনিবার বিকেলের কথা-কাটাকাটির জেরে গতকাল সকালে দক্ষিণ কালনীরচর গ্রামে আতাউরের সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়। কিন্তু সকাল ১০টার দিকে বাংলাবাজারে আবারও আল-আমিনসহ তাঁর পক্ষের লোকজনের সঙ্গে কবিরের পক্ষের লোকজনের কথা-কাটাকাটি হয়।
সাড়ে ১০টার দিকে আল-আমিনের পক্ষ কয়েকজনের ওপর হামলা চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, নিহত সাইফুল ছিলেন আল-আমিনের সঙ্গে। সংঘর্ষের সময় তিনি কয়েকজনকে নিয়ে মিছিল শুরু করলে তাঁদের লক্ষ্য করে কে বা কারা ছররা গুলি ছোড়ে। এ সময় দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। একপর্যায়ে সাইফুল মাটিতে পড়ে গেলে প্রতিপক্ষের কয়েকজন তাঁকে মারধর করে চলে যান। সাইফুল গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর আরও দুই দফা সংঘর্ষ হয়। নিহত সাইফুল উত্তর কালনীরচর গ্রামের সফরউদ্দিনের ছেলে। সংঘর্ষে আহত ব্যক্তিরা হলেন বিল্লাল মিয়া (২৫), ফুল মিয়া (২০), আফজল মিয়া (৪০), আদিল আহমদ (৩০), আবদুল হক (৬০), আবদুর রউফ (৫৫), জাহিদ (২০), আতাউর (২৭), শরিফ (২২), সোহেল (৩০), আবদুস সোবহান (৩০), তরিক মিয়া (৪০), চেরাগ আলী (৪০), আল-আমিন (২৪), আহমদ আলী (৩০) ও আবদাল মিয়া। সংঘর্ষের পর দুপুর ১২টার দিকে সাইফুলের লাশ নিয়ে আতাউরের সমর্থকেরা তাজপুর কদমতলা এলাকায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক অবরোধ করেন। বেলা দুইটায় অবরোধ তোলা হয়। পরে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের একটি দল সাইফুলের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। আহত ব্যক্তিদের সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশ বলেছে, নিহত সাইফুলের বুকে, পিঠে ও চোখে বন্দুকের ছররা গুলির ক্ষত রয়েছে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে সুরতহাল প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল আউয়াল চৌধুরী বলেন, পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পাঁচটি ফাঁকা গুলি করে। পুলিশ হামলাকারীদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলে মহাসড়ক অবরোধ তুলে নেওয়া হয়। আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকার পক্ষের সমর্থকদের বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে নিতে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নানা দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে। নিহত তরুণ ও তাঁর বাবা আমার সমর্থক। ঘটনাটি পরিকল্পিতভাবে ঘটানো হয়েছে।’ তবে অভিযোগ অস্বীকার করে আখতারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, তাঁর পক্ষে এলাকায় জোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় ভোটের আগেই সন্ত্রস্ত হয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী অভিযোগ তুলছেন। এটি আসলে দুই দল গ্রামবাসীর সংঘর্ষ। নির্বাচনী কোনো বিষয় ছিল না। যে ছেলেটি মারা গেছেন, তাঁর বাড়ি পাশের জগন্নাথপুর উপজেলায়। অন্য উপজেলার বাসিন্দা নৌকার সমর্থক হলে তো বলা যায়, আওয়ামী লীগের প্রার্থী বহিরাগতদের নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সিলেটের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজ্ঞান চাকমা বলেন, ঘটনাটি দুই প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর দ্বন্দ্ব থেকে ঘটেছে। ঘটনাস্থল থেকে হামলাকারী সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।

No comments

Powered by Blogger.