চারজনের ১০ বছরের কারাদণ্ড, দুজন খালাস

রাজধানীর শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে পরিত্যক্ত পানির পাইপে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যুর মামলায় চারজনকে ১০ বছর করে সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাঁদের প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। গতকাল রোববার ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান এ মামলার রায় ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ হওয়ায় অপর দুজনকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন আদালত। আদালত বলেছেন, আসামিদের চরম অবহেলার কারণে জিহাদের অকালমৃত্যু হয়েছে। কারাদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত চারজন হলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এস আর হাউসের মালিক আবদুস সালাম, বাংলাদেশ রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন ও ইলেকট্রিশিয়ান জাফর আহমেদ। খালাস পাওয়া দুজন হলেন রেলওয়ের সহকারী প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম ও দীপক কুমার ভৌমিক। রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে ১১ জন সাক্ষী উপস্থাপন করেছে। সাক্ষ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, আসামিরা পুরাতন কূপটিকে বাতিল করার পর নতুন আরেকটি কূপ খনন করা হয়। নতুন কূপ খননকাজে পুরাতন কূপ থেকে পানি উত্তোলন করেছেন। আসামিরা কাজের পর কূপ অরক্ষিত ফেলে রাখেন। রায়ে বলা হয়, অরক্ষিত নলকূপের ঢাকনা খোলা রাখায় তাতে পড়ে শিশু জিহাদের মৃত্যু হয়। রেলওয়ের নিয়ম মেনে যদি কূপটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হতো, তবে এ ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো যেত। আসামিদের চরম অবহেলার কারণে শিশু জিহাদের অকালমৃত্যু হয়েছে। রায়ে বলা হয়, রাষ্ট্রপক্ষ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। তাই তাঁদের ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। একই সঙ্গে প্রত্যেককে দুই লাখ টাকা জরিমানা করা হলো। জরিমানার টাকা দিতে ব্যর্থ হলে তাঁদের আরও দুই বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। রায়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শিশু মো. জিহাদের বাবা ও এই মামলার বাদী নাসির উদ্দিন ফকির। তিনি বলেন, এ রায়ে তিনি সন্তুষ্ট নন। দুজনকে খালাস দেওয়ার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। তিনি আশা করেছিলেন, ছয়জনেরই সর্বোচ্চ সাজা হবে, কিন্তু সেটা হয়নি। আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সাংবাদিকদের বলেন, এই রায়ের বিরুদ্ধে তাঁরা উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। ২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর বিকেল চারটার দিকে শাহজাহানপুর রেলওয়ে কলোনিতে বাসার পাশে পরিত্যক্ত পানির পাম্পের কাছে অন্য শিশুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে পাম্পের একটি পরিত্যক্ত দেড় ফুট ব্যাসের গভীর পাইপে পড়ে যায় চার বছরের শিশু জিহাদ। ফায়ার সার্ভিস দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টার অভিযানেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি। পরদিন বেলা তিনটার দিকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার অভিযান স্থগিত ঘোষণা করে। এরপর একদল উদ্যমী তরুণের চেষ্টায় জিহাদের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় জিহাদের বাবা শাহজাহানপুর থানায় মামলা করেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে কর্তব্যে অবহেলা ও বিপজ্জনকভাবে গভীর পাইপের মুখ খোলা রাখার অভিযোগ আনা হয়। গত বছরের ৪ অক্টোবর ছয়জন আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ১১ জন এবং আসামিপক্ষে ৩ জন সাক্ষী উপস্থাপন করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.