এখন কি রুশবিরোধী হয়ে উঠছেন ট্রাম্প?

পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে রাশিয়ার যে তিক্ত সম্পর্ক চলছিল, সেখান থেকে সরে আসবেন বলে কথা দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনী প্রচারণার সময় জোর দিয়ে বলেছিলেন, তিনি ক্ষমতায় এলে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী সম্পর্ক থাকবে না; বরং দুই দেশের সম্পর্ক যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বন্ধুত্বপূর্ণ হবে।
কিন্তু ট্রাম্প গদিতে বসার মাসখানেক পার হতেই বাতাস ঘুরতে শুরু করেছে। ট্রাম্পের রাশিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃস্থাপনের পরিকল্পনা দৃশ্যত ঝুলে গেছে। শুধু তা-ই নয়, হোয়াইট হাউসে রুশবিদ্বেষী মুখের সংখ্যা বাড়তে থাকায় সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই। ট্রাম্প প্রথম থেকেই বলে এসেছেন, তিনি রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একটি ‘চুক্তি’ করবেন। এ ছাড়া রাশিয়ার অঘোষিত বিরোধী শক্তি ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে আগের মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখবেন না বলেও ইঙ্গিত দিয়েছেন ট্রাম্প। কিন্তু এখন পর্যন্ত পুতিনের সঙ্গে বৈঠকের দিনক্ষণই ঠিক করে উঠতে পারেননি তিনি।
ট্রাম্প কিছুদিন আগেও বলেছেন, ন্যাটো ‘মেয়াদোত্তীর্ণ’ হয়ে গেছে, সেখানে পয়সা কড়ি ঢেলে লাভ নেই। তাঁর সমালোচনা থেকে ইইউ পর্যন্ত বাদ পড়েনি। কিন্তু গত সপ্তাহে ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স মিউনিখে নিরাপত্তা সম্মেলনে বলে এসেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আগের মতোই ন্যাটো ও ইইউর সঙ্গে দৃঢ়ভাবে থাকবে। এটি ট্রাম্পেরই অবস্থান বলে সেখানে সবাইকে আশ্বস্ত করেন। এর কয়েক দিন আগে ব্রাসেলসে পেন্টাগন-প্রধান জেমস ম্যাটিস ন্যাটোকে যুক্তরাষ্ট্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ বলে আখ্যায়িত করেন। এর ফলে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশ্রুতি যে থমকে গেছে, তা অনেকটাই পরিষ্কার। ট্রাম্প প্রথমে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে যাঁকে নিয়োগ দিয়েছিলেন সেই মাইকেল ফ্লিন অনেক আগে থেকেই রুশপন্থী। পুতিনের সঙ্গে ফ্লিনের ব্যক্তিগত জানাশোনার কথাও কারও অজানা ছিল না। ট্রাম্প শপথ নেওয়ার আগেই ফ্লিন রুশ কূটনীতিকদের সঙ্গে মস্কোর ওপর থেকে মার্কিন অবরোধ তুলে নেওয়া নিয়ে কথা বলেছিলেন। এ কারণে ফ্লিনকে সরিয়ে দেন ট্রাম্প। গত সপ্তাহে ফ্লিনের স্থলে যাঁকে বসানো হয় সেই ম্যাক মাস্টারের চিন্তাভাবনা ফ্লিনের ঠিক উল্টো। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র তথা সারা বিশ্বের প্রথম হুমকি হলো রাশিয়া। সিনেট আগামী সপ্তাহে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক হিসেবে যাঁর নিয়োগ অনুমোদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে, সেই ড্যান কোস্টও একজন রুশবিরোধী লোক।
ওয়াশিংটনের থিংকট্যাংক ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং প্রতিষ্ঠানটির পররাষ্ট্রনীতি শাখার পরিচালক ব্রুস জোনস বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র বড় ধরনের বাঁক নিচ্ছে।’ তিনি মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনও রাশিয়াকে হয়তো হুমকি বলে মনে করা শুরু করেছে। সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জ্যাক সুলিভান বলেছেন, তিনি মনে করেন হোয়াইট হাউস এখনো তাঁর পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করে উঠতে পারেনি। সুলিভান মনে করেন, হোয়াইট হাউসে যদি আরও রুশবিরোধী লোকজন নিয়োগ দেওয়া হয় তা হলেও এই সিদ্ধান্তে আসা যাবে না যে ট্রাম্প রুশবিরোধী অবস্থা নিয়েছেন। ট্রাম্প যে মনোভাবের লোক তাতে তিনি যেকোনো সময় পুতিনকে ফোন করে কথা বলতে পারেন। চুক্তিও করে বসতে পারেন।

No comments

Powered by Blogger.