ভাই, বন্ধু এবং আড্ডা

হৃদয় খান ও হাবিব
২৩ এপ্রিল। এবিসি রেডিওর ‘প্রাণ লেয়ার দ্য এইচকে শো’ অনুষ্ঠানের অতিথি হাবিব। সঞ্চালক হৃদয় খান। দুই ঘণ্টার এই অনুষ্ঠান শুরু হবে রাত নয়টায়। শব্দ পরীক্ষা আর প্রস্তুতির জন্য ঘণ্টা খানেক আগেই চলে এলেন দুজন। যেহেতু হাতে একটু সময় আছে, তাই পাশে প্রথম আলোর স্টুডিওতে ফটোসেশনটা হলে মন্দ হবে না। রাজি হলেন তাঁরা। অন্য রকম এক আড্ডার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। প্রস্তুত হচ্ছেন আলোকচিত্রী। হাবিব আর হৃদয়ের মাঝে আলাপ শুরু হয়ে গেছে। নানা প্রসঙ্গ। মন দিয়ে শুনছেন হৃদয় খান। মাঝে মাঝে নিজেও নতুন প্রসঙ্গ আনছেন। এর ফাঁকেই ছবি তোলা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করতেই হৃদয় বললেন, ‘অনুষ্ঠানের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি।’ ‘প্রাণ লেয়ার দ্য এইচকে শো’ অনুষ্ঠানে নিজেদের অন্য রকম কিছু প্রসঙ্গ নিয়ে আলাপ করবেন তাঁরা। হাবিব আর হৃদয় খান। দুজনই জনপ্রিয়। তাঁদের সম্পর্ক বেশ গভীর। দুজনের মধ্যে আছে নিয়মিত যোগাযোগ। গান নিয়ে আলোচনা করেন। শুধু নিজেদের গান নয়, তাঁদের আলোচনায় উঠে আসে অনেক কিছু। কিন্তু প্রচারমাধ্যমে তাঁদের একসঙ্গে তেমন দেখা যায় না। হাবিব আর হৃদয়ের সম্পর্কটা কী ধরনের? ‘তিনি আমার বড় ভাই। শুরু থেকেই তাঁকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করি। কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের।’ বললেন হৃদয় খান। শুনে হাসলেন হাবিব। এই হাসি সম্মতির। হৃদয় খানের শুরুটা হয়েছিল ২০০৭ সালে। ওই বছর বাজারে আসে তাঁর প্রথম অ্যালবাম হৃদয় মিক্স। কিন্তু হাবিবের শুরুটা হয়েছিল ২০০৩ সালে। হাবিব ফিচারিং কায়া, অ্যালবামের নাম কৃষ্ণ। হৃদয়ের গানে হাবিবের কোনো প্রভাব ছিল? হাবিব বললেন, ‘আমি আমার মতো গান করি, হৃদয়ের গান তাঁর মতো।’ হৃদয় বললেন, ‘আমি কিন্তু হাবিব ভাইয়ের গান শুনে উদ্বুদ্ধ হয়েছিলাম।’ তাঁদের দুজনেরই শখ বেড়ানো। যখন ছোট ছিলেন, তখন বাবা-মায়ের সঙ্গে বেড়াতে যেতেন। এখন আর সেই দিন নেই। হাবিব এখন ইচ্ছে হলে ছেলেকে নিয়ে বের হয়ে যান। লং ড্রাইভ, ঘুরতে যাওয়া, খাওয়া-দাওয়া কিংবা মজা করা হাবিব আর হৃদয়ের কাছে যেন নেশা। মাঝে মাঝে নাকি হাবিব আর হৃদয় মিলে লং ড্রাইভে চলে যান। ওই সময় তাঁদের সঙ্গে থাকে সুন্দর কিছু গান। এবার প্রথম প্রেম। কে কবে প্রথম প্রেমে পড়েছিলেন? হাবিবের মুখে মুচকি হাসি। বললেন, ‘প্রথম প্রেম কি না জানি না, তবে প্রথম ভালো লাগা কাজ করেছিল, তখন আমার বয়স ৮ কিংবা ৯। আব্বা (সংগীতশিল্পী ফেরদৌস ওয়াহিদ) প্রতি সপ্তাহে সোনারগাঁও হোটেলে নিয়ে যেতেন সাঁতার শেখানোর জন্য। সেখানে এক বড় আপুও আসতেন সাঁতার কাটতে। ওই আপুকে খুব ভালো লাগত।’ হৃদয়ের ব্যাপারটা একদম অন্য রকম। ভালো লাগা নয়, বরং শুরুতেই তিনি প্রেমে পড়ে যান। বললেন, ‘১৩ বছর বয়সে প্রথম প্রেমে পড়েছিলাম।’ ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতার কথা বললেন হাবিব। বছর কয়েক আগে তিনি চট্টগ্রামে যাচ্ছেন। সঙ্গে কয়েকজন বন্ধু। গভীর রাত। গাড়ি চালানোর সময় হঠাৎ দেখেন, বিপরীত দিক থেকে পাশাপাশি তিনটি ট্রাক দ্রুতগতিতে আসছে। নিজেদের গাড়ির গতিও বেশি থাকায় তা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়নি। গাড়িটি উল্টে রাস্তার পাশের এক পুকুরে পড়ে যায়। আহত হলেও বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যান তাঁরা। একই অভিজ্ঞতা হৃদয় খানেরও। রাস্তায় প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানো তাঁর শখ। একবার তেমনিভাবে চালানোর সময় তাঁর গাড়ি উল্টে রাস্তার পাশের গভীর খাদে গিয়ে পড়ে। মুহূর্তেই গাড়ির ভেতর পানি ঢুকে যায়। গাড়ির দরজা খোলা মুশকিল হয়ে পড়ে। হৃদয় বললেন, ‘ঘটনাটি এখনো আমার কাছে সিনেমার মতো মনে হয়। কারণ, সেদিন আমি যেভাবে প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলাম, তা শুধু সিনেমায়ই দেখা যায়।’ এখন যাঁরা গান করছেন, তাঁদের ব্যাপারে হাবিব আর হৃদয়ের মন্তব্য জানতে চাই। এ সময়ের গানকে হাবিব তুলনা করেন গোলাপের সঙ্গে। বললেন, ‘গোলাপে যেমন সুন্দর পাপড়ি আছে, তেমনি কাঁটাও আছে। এখন যাঁরা গান করছেন, অনেকেই শুধু সুন্দর পাপড়ি দেখতে পাচ্ছেন। কিন্তু কাঁটা নিয়ে কিছু বলছেন না। সবার উচিত সবকিছুকে গুরুত্ব দিয়ে গান তৈরি করা। যেন অনুভূতিগুলো স্পষ্ট হয়।’ হৃদয় খান তাঁর ব্যস্ততা নিয়ে বললেন, ‘ব্যস্ততার শেষ নেই। টিভির অনুষ্ঠান, কনসার্ট, এবিসি রেডিওর এইচকে শো—সব মিলিয়ে এখন বেশি ব্যস্ত। আর হৃদয় মিক্স সিরিজের নতুন অ্যালবামের কাজ করছি।’ হাবিব হেসে বললেন, ‘আমি এখন ব্যস্ত আছি ডায়েট নিয়ে। নতুন কিছু মিউজিক ভিডিও তৈরির পরিকল্পনা করছি। তাতে আমি অভিনয় করব। এ কারণে এখন থেকেই স্বাস্থ্যের ব্যাপারে সচেতন।’ রাত বাড়ছে, আড্ডা শেষ করতে হবে। শেষ প্রশ্ন, দুজনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা? হাবিব বললেন, ‘কখনো ভাবিনি বড় হয়ে গান করব। আমার ভক্ত থাকবে, আমি তাদের এত ভালোবাসা পাব। যেহেতু এখন গানই আমার সব হয়ে গেছে, তাই গান নিয়ে থাকব।’ হৃদয় বললেন, ‘যত দিন বেঁচে থাকব, আমার সঙ্গে থাকবে গান।’তবে দুজনই সামনে নতুন কিছু করবেন, তেমনটাই জানালেন। তবে নতুন কাজের ব্যাপারে এখনই মুখ খুলতে চাননি তাঁরা।

No comments

Powered by Blogger.