‘ক্রিকেটের ভাষা আমি ভালোই বুঝি’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র এক বছরের পথচলায় নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মুস্তাফিজুর রহমান। আইপিএলেও চলছে মুস্তাফিজ-শো। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের জার্সি গায়ে এখন পর্যন্ত ছয় ম্যাচে সাত উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের এই তরুণ বাঁ-হাতি পেসার। তবে শুধু উইকেটের সংখ্যা দিয়ে মুস্তাফিজকে বিচার করা যাবে না। অতুলনীয় বোলিং বৈচিত্র্যে গোটা আইপিএলের মুখ হয়ে উঠেছেন মুস্তাফিজ। তার কাটার, স্লোয়ার, ইয়র্কারের কোনো জবাব খুঁজে পাচ্ছেন না প্রতিপক্ষের ব্যাটসম্যানরা। আর ধারাভাষ্যকাররা খুঁজে পাচ্ছেন না জুতসই বিশেষণ! মুস্তাফিজকে নিয়ে মুগ্ধতা ঝরছে সবার কণ্ঠেই। তর্কসাপেক্ষে এই শতাব্দীর সেরা পেসার ডেল স্টেইন যেমন কাল সর্বকালের সেরাদের একজন ওয়াসিম আকরামের সঙ্গে মুস্তাফিজের তুলনা করেছেন, ‘এক্স-ফ্যাক্টর ও দক্ষতায় মুস্তাফিজুর আমাকে ওয়াসিম আকরামের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। আমি বলছি না যে, আকরামের মতো সুইং করাতে পারে মুস্তাফিজ,
কিন্তু তাকে বল করতে দেখাটা সত্যিই অসাধারণ। ডান-হাতি বোলারদের গতি ও অফ-কাটারের সঙ্গে আমরা পরিচিত। এখন আমরা একজন বাঁ-হাতি পেসারকে পেয়েছি। তার কাটার ও স্লোয়ার এমন অতুলনীয়, যা আগে কখনও কেউ দেখেনি।’ মুস্তাফিজকে নিয়ে মাতামাতি চলছে ভারতীয় মিডিয়ায়ও। সমস্যা একটাই। সেভাবে ইংরেজি বলতে না পরায় মিডিয়ার সামনে কিছুটা মুখচোরা মুস্তাফিজ! তবে এ নিয়ে কোনো আক্ষেপ নেই তার। বল হাতে যে দারুণ সপ্রতিভ ২০ বছর বয়সী এই কাটার মাস্টার। তার বোলিংয়ের ভাষা বোঝার সাধ্য নেই কারও। মঙ্গলবার ভারতের শীর্ষস্থানীয় দৈনিক ‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’কে এক সাক্ষাৎকারে মুস্তাফিজ জানালেন, ক্রিকেটের ভাষা ভালোই জানা আছে তার। সংক্ষিপ্ত সাক্ষাৎকারে আইপিএলেও নিজের সাফল্যের রহস্যটা জানালেন মুস্তাফিজ।
প্রশ্ন : খুব বেশি মানুষ আশা করেনি যে, এখানে এতটা সফল হবেন আপনি। আইপিএলের মতো একটি চ্যালেঞ্জিং টুর্নামেন্টে কীভাবে এটা সম্ভব করে তুললেন?
মুস্তাফিজ : এটা সম্ভব হয়েছে আমার আত্মবিশ্বাস ও শীর্ষপর্যায়ে ভালো করার আকাক্সক্ষার জন্য। আমি জানি, যেখানেই খেলি না কেন, সামনে আসা প্রতিটি সুযোগ আমাকে কাজে লাগাতে হবে। আইপিএলে খেলতে আসার সময় আমার লক্ষ্য ছিল এখানে নিজের ছাপ রেখে যাওয়ার। এজন্য কঠোর পরিশ্রম করি আমি। এখন মানুষ আমার পারফরম্যান্সের প্রশংসা করায় ভালো লাগছে।
প্রশ্ন : আপনার অফ-কাটারের রহস্য কী? কীভাবে এটা এমন নিখুঁত পর্যায়ে নিয়ে গেছেন?
মুস্তাফিজ : রহস্যটা আমি নিজেও জানি না। সম্ভবত এটা আমার সহজাত প্রতিভা। বেড়ে ওঠার সময় আমার একজন কোচ আমাকে এটা রপ্ত করতে বলেছিলেন। আমি শুধু চেষ্টা করেছি। ডেলিভারিটা ক্রমেই খুব ভালো হতে থাকল। তখন থেকেই এটা নিয়ে আমি লেগে আছি। ফল তো দেখছেনই।
প্রশ্ন : সানরাইজার্সে আপনার অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার একবার বলেছিলেন, আপনার সঙ্গে ম্যাচের পরিকল্পনা ভাগাভাগি করাটা সহজ নয়। কারণ, ইংরেজিতে আপনি খুব একটা সড়গড় নন। অধিনায়কের সঙ্গে যথাযথ কথা না বলেও কীভাবে এমন দুর্দান্ত বোলিং করে যাচ্ছেন?
মুস্তাফিজ : এটা সত্যি যে আমি ইংরেজি বা হিন্দি খুব ভালো বুঝি না। কিন্তু দিনশেষে এটাও সত্যি যে, ক্রিকেটের একটি নিজস্ব ভাষা আছে। সেটা আমি বেশ ভালোই বুঝি। আমি জানি, আমার কাছে কী আশা করা হয়। আমি যাতে সবচেয়ে বেশি পারদর্শী, সেটাই করার চেষ্টা করি। অধিনায়ক কী চান, সেটাও বোঝার চেষ্টা করি। এখন পর্যন্ত সব ভালোই হচ্ছে।
প্রশ্ন : বেশ কয়েকজন বড় ব্যাটসম্যানের উইকেট নিয়েছেন। এর মধ্যে কোনটা আপনার কাছে সবচেয়ে প্রিয়? এমন কোনো ব্যাটসম্যানই কি আছেন, যিনি আপনাকে নির্ঘুম রাত উপহার দিয়েছেন?
মুস্তাফিজ : না, আমার কোনো পছন্দের উইকেট নেই। প্রতিটি উইকেটই আমাকে সমান আনন্দ দেয়। আর বিশ্বে এমন কোনো ব্যাটসম্যান নেই যে আমাকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে পারে। আমি জানি, নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী পারফর্ম করতে পারলে সব ব্যাটসম্যানকেই আটকানোর পথ খুঁজে বের করতে পারব।
প্রশ্ন : আপনি বলতে চাইছেন, একজন বিরাট কোহলিও আপনাকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে পারেন না? কিংবা একজন এমএস ধোনি, যিনি টি ২০ বিশ্বকাপের ম্যাচে সেই বিখ্যাত স্প্রিন্টে আপনাকে হারিয়ে বাংলাদেশকে বিদায় করে দিয়েছিলেন?
মুস্তাফিজ : তারা সবাই অনেক বড় খেলোয়াড়, কিন্তু আমি নিজের শক্তির জায়গায় অবিচল থাকার চেষ্টা করি। পরিষ্কার করে বলতে চাই, বাঙ্গালোরের ম্যাচটা পরের দিনই পেছনে ফেলে এসেছি আমি। ক্রিকেটে আপনি অতীত আঁকড়ে পড়ে থাকতে পারেন না। আমি এটাও জানি না যে, ধোনির দলের (পুনে) বিপক্ষে আমাদের খেলা কবে। তবে যখনই আমাদের দেখা হবে, আমি আমার সেরাটাই দেব। ওয়েবসাইট।

No comments

Powered by Blogger.