মুসলিম ভোট ধরে রাখতে মরিয়া তৃণমূল

পশ্চিমবঙ্গে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট অক্ষুণ্ন রাখতে তৃণমূলের পক্ষ থেকে জোরালো প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে। দলটি ফুরফুরা শরীফের পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকি, জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দ তথা রাজ্য এআইইউডিএফ প্রধান মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী এমনকি দিল্লি জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সাইয়্যেদ আহমদ বুখারীর সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে।   বুধবার রাজ্য সচিবালয় নবান্নে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী তাকে বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার আহ্বান জানিয়েছেন। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলা এই বৈঠক নিয়ে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বিশেষ মুখ খুলতে না চাইলেও মিডিয়া সূত্রে প্রকাশ, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তিনি ১২ টি আসনের দাবি জানিয়েছেন। তৃণমূলের পক্ষ থেকে নাকি ৫ টি আসন দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়েছে। এমনকি জেতা আসনে প্রার্থী করে সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীকে মন্ত্রী করারও আশ্বাস দেয়া হয়েছে বলে খবর রটেছে। যদিও তৃণমূল বা এআইইউডিএফ-এর পক্ষ থেকে এ সংক্রান্ত খবরের সত্যতা নিশ্চিত করা হয়নি।   অন্যদিকে, মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী তৃণমূলে যোগ দেবেন কি না তা নিয়েও জল্পনা শুরু হয়েছে। সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী অবশ্য এ নিয়ে স্পষ্ট করে কিছু জানান নি। তিনি বলেছেন, ‘দলে যোগ দেব কি না এখনই এ নিয়ে কোনো কথা বলব না। আগামী দিনেই পরিষ্কার হয়ে যাবে কী হবে। তবে তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করব।’ এ নিয়ে সাসপেন্স কায়েম থাকলেও ১২ ফেব্রুয়ারি কোলকাতা নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে তৃণমূল কংগ্রেসের জেনারেল কাউন্সিলের বৈঠকে যোগ দেবেন বলে স্বীকার করেছেন সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বার বার ওই সভায় যাওয়ার জন্য বলাতেই নাকি তিনি ওই বৈঠকে যাবেন।   গত নভেম্বরে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরীর আমন্ত্রণে কোলকাতার শহীদ মিনারে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ-এর সভায় উপস্থিত হয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।   অন্যদিকে, গত বৃহস্পতিবার দিল্লির জামে মসজিদের ইমাম মাওলানা সাইয়্যেদ আহমদ বুখারীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন তৃণমূলের এক সময়ের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড মুকুল রায়। মমতার নির্দেশেই তিনি মাওলানা বুখারির সঙ্গে দেখা করেন। বিধানসভা ভোটে তৃণমূলকে সমর্থন করার জন্য তাকে অনুরোধ জানিয়েছেন মুকুল রায়।   এদিকে, রাজ্যে ক্ষমতাসীন তৃণমূল সরকারকে পরাজিত করতে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের মধ্যে আলাপ আলোচনা শুরু হয়েছে। যদিও রাজনৈতিকভাবে এরা দীর্ঘকাল ধরে পরস্পরের বিরোধী এবং চরম শত্রু বলে পরিচিত।   গত ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের নিরিখে দেখা যাচ্ছে তৃণমূল ৩৯.৭৯ শতাংশ, বামফ্রন্ট ২৯.৯৫ শতাংশ, কংগ্রেস ৯.৬৯ শতাংশ, বিজেপি ১৭.০২ শতাংশ এবং অন্যান্য ৩.৫৫ শতাংশ ভোট পেয়েছে। যদিও বিধানসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রে সাম্ভাব্য বাম–কংগ্রেস জোট কতটা সফল হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।   কংগ্রেসের দাবি, জোট হলে তৃণমূল থেকে অনেক ভালোমানুষ তাদের সঙ্গে যোগ দেবে। অন্যদিকে, এতদিনের রাজনৈতিক শত্রু বামফ্রন্টের সঙ্গে জোট করলে কংগ্রেসের মধ্যে থেকে ভাঙন ধরার আশঙ্কা রয়েছে।   বস্তুত, বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের মধ্যে জোট তৎপরতা শুরু হওয়ায় রাজ্যের প্রায় ৩০ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট যাতে এদিক-ওদিক না হয় সেজন্য এখন থেকে ঘর গোছাতে শুরু করেছে তৃণমূল। কারণ, এই সংখ্যালঘু ভোট যদি একচেটিয়া কোনো দলের দিকে যায় তাহলে সেই দলেরই পাল্লা ভারি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.