প্রেসিডেন্ট হতে পারেন সু চি! সেনাবাহিনীর সঙ্গে এনএলডির ‘ইতিবাচক’ আলোচনা

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর সঙ্গে ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) সমঝোতার গুঞ্জন সঠিক প্রমাণ করে শেষমেশ প্রেসিডেন্ট হতে পারেন অং সান সু চি। গতকাল সোমবার ঘোষণা করা হয়েছে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শুরুর তারিখও। আগামী ১৭ মার্চ এই ভোট গ্রহণ শুরু হবে। খবর রয়টার্স ও দ্য গার্ডিয়ানের।
মিয়ানমারের স্থানীয় গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে গতকাল দ্য গার্ডিয়ান বলেছে, সংবিধানের যে ধারার কারণে গণতন্ত্রকামী নেত্রী সু চির প্রেসিডেন্ট হতে বাধা রয়েছে, তা অপসারণে তাঁর ও প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর মধ্যে সমঝোতা ঠিকমতোই এগোচ্ছে।
তবে এদিন রয়টার্সের খবরে বলা হয়, সেনাবাহিনীর এমপিদের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল টিন সান নাইং এই বার্তা সংস্থাকে বলেছেন, ‘সংবিধানের ৫৯ (এফ) ধারা নিয়ে সেনাবাহিনী ও এনএলডির মধ্যে কোনো আলাপ-আলোচনা হয়নি। এটা স্থগিত হতে পারে না। এটা সংবিধানবিরোধী। এ নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনাও হয়েছে। তাই আবার প্রস্তাব বা আলোচনার সুযোগ নেই।’
সেনাবাহিনীর এই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘ধারাটি জেনেবুঝেই সংবিধানে রাখা হয়েছে, যেন বিদেশি আগ্রাসন থেকে দেশের মানুষকে বাঁচানো যায়।’
গার্ডিয়ান-এর খবরে বলা হয়, মিয়ানমারের সরকারপন্থী দুটি টেলিভিশন চ্যানেলের খবর অনুযায়ী, ওই ধারা স্থগিত করার বিষয়ে সু চি ও সেনাপ্রধানের মধ্যে সমঝোতায় ‘ইতিবাচক ফল’ বেরিয়ে আসতে পারে।
সু চির নেতৃত্বে গত ৮ নভেম্বরের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বিপুলভাবে জয়ী হয় এনএলডি। কিন্তু ধারাটির কারণে তাঁর প্রেসিডেন্ট হওয়ায় বাধা রয়েছে। ধারায় বলা হয়েছে, মিয়ানমারের কোনো নাগরিকের স্বামী বা স্ত্রী কিংবা সন্তান বিদেশি হলে তিনি প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না। সু চির প্রয়াত স্বামী একজন ব্রিটিশ নাগরিক। আবার দুই ছেলেও মিয়ানমারের নাগরিক নন।
গত রোববার রাতে মিয়ানমারের স্কাই নেট ও মিয়ানমার ন্যাশনাল টেলিভিশনে সম্প্রচার করা খবরে সু চি ও সেনাপ্রধান মিন অং হলাইংয়ের মধ্যে সমঝোতায় ইতিবাচক ফল বের হওয়ার সম্ভাবনার কথা জানানো হয়।
ধারাটি স্থগিত বা বাতিল করতে হলে পার্লামেন্টে দুই-তৃতীয়াংশ এমপির সমর্থন প্রয়োজন। পার্লামেন্টে সেনাবাহিনীর অনির্বাচিত সদস্যদের জন্য ২৫ শতাংশ আসন সংরক্ষিত। এ ছাড়া সেনাবাহিনী-সমর্থিত দলের কিছু নির্বাচিত এমপিও রয়েছেন পার্লামেন্টে। যার অর্থ, এনএলডির পক্ষে এককভাবে ধারাটি পাল্টানো অসম্ভব।
এই ধারা পাল্টানো নিয়ে এনএলডির কেন্দ্রীয় কমিটির অন্যতম সদস্য এমপি কেয়াউ এইচটিউ বলেন, ‘আমার ধারণা, সবকিছু ঠিকমতোই হবে। আমাদের নেত্রী অং সান সু চির প্রেসিডেন্ট হওয়ার পক্ষে সমঝোতায় ইতিবাচক ফলই বয়ে আসবে।’
তবে এ ব্যাপারে রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইয়ান মেয়ো থেইনের মন্তব্য কিছুটা সতর্কতামূলক। তাঁর কথা, ‘সু চি প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন, এটা এখনই নিশ্চিত করে বলাটা হবে বেশ আগাম। শুধুই টেলিভিশনের সংক্ষিপ্ত ঘোষণার ওপর নির্ভর করে আমরা প্রকৃত মন্তব্য করতে পারি না।’
গত নভেম্বরে সাধারণ নির্বাচন শেষ হলেও নতুন প্রেসিডেন্ট এখনই দায়িত্ব নিতে পারবেন না। এ জন্য তাঁকে ৩১ মার্চ বা ১ এপ্রিল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নতুন সরকার গঠনেও অপেক্ষা করতে হবে ওই সময় পর্যন্ত। কেননা, বর্তমান থেইন সেইন সরকারের মেয়াদ শেষ হবে মার্চের শেষ নাগাদ। আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-প্রক্রিয়াটিও বেশ দীর্ঘ।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-প্রক্রিয়া সামনে রেখে সবে পার্লামেন্টে শপথ নিয়েছেন এমপিরা। ভোটাভুটিতে প্রেসিডেন্ট পদের জন্য তিনজন প্রার্থী বেছে নিতে তাঁরা এখন বৈঠকের তারিখ ঘোষণা করবেন।
রয়টার্স বলেছে, এনএলডির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ সদস্য গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, এ মাসেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচন-প্রক্রিয়া শুরু করবেন তাঁরা। তবে গতকাল পার্লামেন্টে সিদ্ধান্ত হয়, এটি শুরু হবে ১ এপ্রিল নতুন সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের দুই সপ্তাহ আগে। নির্দিষ্ট করে এই সময়টা ১৭ মার্চ বলে জানান স্পিকার ম উইন খাইং থান।

No comments

Powered by Blogger.