নির্বাচন কমিশনের প্রহসন আর কতকাল? by ইকতেদার আহমেদ

নির্বাচনে অনেক কেন্দ্রে সংঘর্ষ ঘটলেও ইসি ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে
জনমতের প্রতিফলনে সংখ্যাগরিষ্ঠের শাসন হলো গণতন্ত্র। গণতন্ত্রের জন্য এ দেশের মানুষের দীর্ঘ ত্যাগ ও সংগ্রামের ইতিহাস রয়েছে। এ দেশের সংবিধানের প্রস্তাবনায় রাষ্ট্রের মূল লক্ষ্য হিসেবে যে দু’টি বিষয়ের কথা বলা হয়েছে তা হলো- গণতন্ত্র ও শোষণমুক্ত সমাজ। যেকোনো দেশে এ দু’টি কার্যকর করা গেলে তা দেশের সব নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্মের দিকে ফিরে তাকালে দেখা যায়, জনমতের প্রতিফলনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভকারী দলটিকে রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করতে না দেয়ার কারণেই এ দেশের মানুষ মুক্তি তথা স্বাধীনতা সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল। স্বাধীনতা-পরবর্তী এ দেশের মানুষের প্রত্যাশা ছিল জনমতের প্রতিফলনে যখন যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী হবে, তখন সে দল রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করবে। এ সত্যটি স্থানীয় নির্বাচনের চেয়ে জাতীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য।
বাংলাদেশে ক্ষমতাসীন দলের অধীন যতগুলো জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, এর কোনোটিতেই ক্ষমতাসীন দল জনমতের প্রকৃত প্রতিফলনে বিজয়ী হতে পারেনি। স্থানীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রেও দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন দলের ইচ্ছার প্রতিফলনে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফলাফল নির্ধারিত হয়েছে।
আমাদের দেশে জাতীয় ও স্থানীয় উভয় নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব সাংবিধানিক ও আইনগতভাবে নির্বাচন কমিশনের ওপর ন্যস্ত করা হলেও দলীয় সরকারের আমলে কোনো নির্বাচন কমিশনকে কখনো স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে এ দায়িত্বটি পালন করতে দেখা যায়নি। বর্তমান নির্বাচন কমিশন নবম সংসদ নির্বাচন-পরবর্তী দলীয় সরকারের মাধ্যমে নিয়োগ পায়। দলীয় সরকারের অধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশন দশম সংসদ নির্বাচন, তৎপরবর্তী উপজেলা পরিষদ নির্বাচন, ঢাকার বিভাজিত ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন এবং সদ্যসমাপ্ত ২৩৫টি পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দায়িত্ব পালন করে।
দশম সংসদ নির্বাচন দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি বর্জন করায় এবং সে নির্বাচনে সংসদের মোট আসনসংখ্যার অর্ধেকেরও বেশি আসনের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় গণতন্ত্রের সংজ্ঞানুযায়ী আদৌ সেটি নির্বাচন ছিল কি না এটি প্রশ্নবিদ্ধ। অতঃপর ছয় ধাপে যে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় তাতে প্রধান বিরোধী দল অংশ নিয়েছিল, কিন্তু প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল যে হারে আসনপ্রাপ্ত হয়েছিল, পরবর্তীকালে চারটি ধাপে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে আসন পাওয়া ব্যাপক কমে যায়। প্রধান বিরোধী দলের আসন পাওয়ার ক্ষেত্রে জনমতের সাথে এ ধরনের অসামঞ্জস্য তারতম্যের কোনো সন্তোষজনক ব্যাখ্যা দেশবাসী নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে পায়নি। এরপর তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ক্ষেত্রে দেখা গেল কেন্দ্র দখল, জাল ভোট দেয়া, প্রতিপক্ষ প্রার্থীর এজেন্টদের ভোটকক্ষ থেকে বের করে দেয়া, ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে সিল মারা ও প্রতিদ্বন্দ্বী দলের নেতাকর্র্মীসহ সাধারণ ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়াসহ বিভিন্নœ অনিয়মের কারণে আনুষ্ঠানিক ভোটগ্রহণ পর্ব শুরু হওয়ার ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী দলের প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হয়।
আমাদের দেশসহ পৃথিবীর সবখানে জাতীয় নির্বাচনের চেয়ে স্থানীয় নির্বাচন অধিক প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হয়। আর সে নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহারের অনমুতি দেয়া হলে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাত্রা যে বাড়ে তা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নির্বাচন অবলোকনে প্রত্যক্ষ করা গেছে। বাংলাদেশে এবারই প্রথম দলীয় প্রতীকে পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন, যদিও কমিশনারদের ক্ষেত্রে এটি প্রযোজ্য ছিল না।
সদ্যসমাপ্ত ২৩৪টি পৌরসভা নির্বাচনে আটজন মেয়র প্রার্থী ও শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সবাই ক্ষমতাসীন দলের অথবা এর অঙ্গসংগঠনগুলোর সদস্য। এ ধরনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এত অধিকসংখ্যক প্রার্থীর নির্বাচিত হওয়া অস্বাভাবিক। নির্বাচন কমিশনের উচিত ছিল শুরুতেই বিষয়টি খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা না করায় প্রথম থেকেই নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা বিষয়ে দেশবাসী সন্ধিহান ছিল।
আমাদের দেশে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না এবং নির্বাচন কমিশন দলীয় সরকারের আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করে, এ অভিযোগের ব্যাপারে বিরোধী দলের মধ্যে কখনো ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়নি। দশম সংসদ নির্বাচনসহ এর অব্যবহিত পর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন এবং বিভাজিত ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন যে কলুষিত, অস্বচ্ছ ও অনিয়মে ভরপুর ছিল তা দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে নির্বাচনগুলোর গ্রহণযোগ্যতা এবং বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বিষয়ে নানাবিধ প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্থাপিত বিষয় খণ্ডন করতে গিয়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিষয়ে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে একাধিকবার বলা হয়েছে, সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার্থে এ নির্বাচনটি করা হয়েছে এবং অচিরেই সব দলের অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। কিন্তু সে নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হওয়ার পর প্রায় দুই বছর সময় চলে গেলেও অচিরেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের আশ্বাস মুখের বাণীর মধ্যেই আবদ্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশের ১০টি সংসদীয় নির্বাচনের ইতিহাসে যে চারটি নির্বাচন অনিয়ম ও কলুষতায় পরিপূর্ণ, এগুলো হলো- তৃতীয়, চতুর্থ, ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচন। তৃতীয় ও চতুর্থ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানকালীন নির্বাচন কমিশন থাকলেও ফলাফল ঘোষণার কাজটি তৎকালীন সামরিক শাসক আর্মড ফোর্সেস ডিভিশনের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছিলেন। ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনটি দশম সংসদ নির্বাচনের মতো একদলীয় ও ভোটারবিহীন ছিল। দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় ও এর আগে যে ধরনের সহিংসতা হয়েছিল, ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচন এবং সেটি অনুষ্ঠিত হওয়ার আগেও অনুরূপ সহিংসতা প্রত্যক্ষ করা গিয়েছিল। ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা পোস্টবক্স বৈ অন্য কিছু ছিল না। এ দু’টি নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে নিয়োজিত বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসকেরা ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের সহায়তায় কমিশন বরাবর যে ফলাফল প্রেরণ করেছেন, কোনো ধরনের যাচাই-বাছাই ছাড়াই ওই ফলাফলকে সঠিক ধরে নির্বাচন কমিশন বিজয়ীর নাম ঘোষণা ও গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার দায়িত্ব সম্পন্ন করে।
দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগেও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, নিছক সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা প্রতিপালনের জন্য তারা এ নির্বাচনটির ব্যবস্থা করেছেন এবং অচিরেই তারা সব দলের অংশ নেয়ার মধ্য দিয়ে একাদশ সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবেন।
ষষ্ঠ ও দশম সংসদ নির্বাচন উভয়টিই অনিয়ম ও কলুষতায় ভরপুর ছিল। এ দু’টির মধ্যে যে মৌলিক পার্থক্য তা হলো- প্রথমটি অনুষ্ঠিত হওয়া পরবর্তী তৎকালীন ক্ষমতাসীন সরকার তার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এবং জনগণের আকাক্সক্ষা ও বিরোধী দলের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে স্বল্পতম সময়ের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন পরবর্তী সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় অশেষ অবদান রাখেন। অপর দিকে দ্বিতীয়টি অনুষ্ঠিত হওয়া পরবর্তী ক্ষমতাসীন সরকার জনগণের আকাক্সক্ষাকে জলাঞ্জলি দিয়ে এবং বিরোধী দলের দাবি অবজ্ঞা ও উপেক্ষা করে দীর্ঘ দুই বছর পরও নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথ সুগম না করে সংসদের নির্ধারিত মেয়াদ পূর্ণ করার অপচেষ্টায় লিপ্ত থেকে দেশে শান্তি ও স্থিতিশীলতার পথে অন্তরায় সৃষ্টি করে চলেছে।
নির্বাচন কমিশনকে সংবিধান ও বিভিন্ন নির্বাচনী আইনের অধীন যে ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, তা সংসদ নির্বাচনসহ যেকোনো স্থানীয় নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও দক্ষতার সাথে পরিচালনার জন্য পর্যাপ্ত। যেকোনো নির্বাচনের সুষ্ঠুতা নিশ্চিত করার জন্য নির্বাচন কমিশন সরকারের কাছ থেকে তার অধীনে থাকা যেকোনো ধরনের জনবলের সহায়তা চাইতে পারে। এবার নির্বাচনকালীন সেনা মোতায়নের দাবি উত্থাপিত হয়েছিল, কিন্তু নির্বাচন কমিশনের পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও সে দাবি অগ্রাহ্য করা হয়।
বর্তমান নির্বাচন কমিশন যাদের সমন্বয়ে গঠিত, এরা সবাই তাদের পেশাভিত্তিক কর্মজীবন থেকে অবসরে যাওয়ার পর সরকারের আকাক্সক্ষায় নিয়োগ পেয়েছেন। সরকারের আকাক্সক্ষায় নিয়োগ পাওয়ার কারণে তারা সরকারের প্রতি বিশ্বস্ত থাকবেন এটি স্বাভাবিক, কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, তাদের আচরণ বিরোধী দলের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট হবে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের আচরণ যে পক্ষপাতদুষ্ট, এ প্রশ্নে কোনো বিতর্ক নেই। আর এ পক্ষপাতদুষ্টতার কারণে ক্ষমতাসীন দল ছাড়া অপর সব রাজনৈতিক দল ও দেশবাসীর কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতা শূন্য। বিরোধী দল এদের আজ্ঞাবহ ও মেরুদণ্ডহীন আখ্যা দিয়ে আসছিল। সম্প্রতি বিরোধী দলের কিছু নেতা গণতন্ত্র ও মানবতাকে কলুষিত করার জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তাদের বিচার দাবি করেছেন। এ দাবির প্রতি দেশের সাধারণ জনমানুষের সমর্থনের বিষয়টি স্পষ্ট। আশার কথা, প্রধানমন্ত্রীর ছোটবোন শেখ রেহানার স্বামী ড. শফিক আহম্মেদ সিদ্দিক বিবেকবান ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তি সমন্বয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার ওপর সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। তার এ বক্তব্য থেকে অনুধাবন করা যায়, বর্তমান নির্বাচন কমিশনের পক্ষপাতদুষ্টতার বিষয়টি সরকারের জন্যও বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছে।
দশম সংসদ নির্বাচনসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলো কী মাত্রায় অস্বচ্ছ ও কলুষিত, দেশবাসীর মধ্যে অনেকে তা প্রত্যক্ষভাবে এবং অনেকে গণমাধ্যমের বদৌলতে অবলোকন করতে সমর্থ হয়েছেন। এরূপ অস্বচ্ছ ও কলুষিত নির্বাচন পরিচালনার সাথে যারা সম্পৃক্ত তাদের জীবনের এ পর্যায়ে এসে অনিয়ম ও অস্বচ্ছ কার্যকলাপের সহযোগী হওয়া অপ্রত্যাশিত। কিন্তু সবাইকে হতবাক ও বিস্মিত করে তাদের জন্য যা অত্যাশিত তারা তা-ই করে চলেছেন।
২০০৮ সালের ডিসেম্বরে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল, ওই নির্বাচনে এ দেশের প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছিল। এর দীর্ঘ সাত বছর পর সদ্যসমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে উভয় দল দলীয় প্রতীকের ভিত্তিতে সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়। বর্তমান সরকার ও বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীন অনুষ্ঠিত দশম সংসদ নির্বাচন, তৎপরবর্তী অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচন ও বিভাজিত ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন মারাত্মকভাবে বিতর্কিত হওয়ায় দেশবাসীর মধ্যে আশার সঞ্চার হয়েছিল অন্তত সদ্যসমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে অনুষ্ঠানের সুযোগ দিয়ে দলীয় সরকার ও দলীয় নির্বাচন কমিশনের অধীন যে সুষ্ঠু নিবাচন সম্ভব, এ সত্যটি প্রতিষ্ঠার প্রয়াস নেবেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, সত্যটি প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় দলীয় সরকার ও দলীয় নির্বাচন কমিশনের অধীন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন যে সম্ভব নয়, বিরোধী দলের এ দাবিটি সব ধরনের বিতর্ক পরিহারপূর্বক প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
সদ্যসমাপ্ত পৌরসভা নির্বাচনে নির্বাচন কমিশন অতীতের অনুরূপ নির্বাচনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে তার দ্বিগুণ অর্থ, অর্থাৎ প্রায় ২০০ কোটি টাকা ব্যয় করেছে। নির্বাচনী ব্যয়ের এ সম্পূর্ণ অর্থ দেশের সাধারণ জনগণের দেয়া করের টাকা। একটি কলুষিত, ত্রুটিপূর্ণ ও বিতর্কিত নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সরকারের বিভিন্ন বিভাগের যারা সহায়তা দিয়েছেন তারা সবাই মূলত অন্যায়ের পক্ষে নিজেদের অবস্থান ব্যক্ত করেছেন। আর স্পষ্টত এর মধ্য দিয়ে দলীয় সরকার ও দলীয় নির্বাচন কমিশনের অধীন অনুষ্ঠিত যেকোনো নির্বাচন জনগণের ভোটের নামে যে প্রহসন ছাড়া আর কিছু নয় তারই বার্তাবহ।
লেখক : সাবেক জজ; সংবিধান, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষক
iktederahmed@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.