ভারতকে টুকরো টুকরো করার ষড়যন্ত্র করছে বিজেপি by নুরুন্নবী ভূঁইয়া

ভারত সিপিআইএম পলিট ব্যুরো সদস্য ও ভারত ত্রিপুরা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার বলেছেন, ২৩ বছর আগের এই দিনটিতে ৫০০ বছরের ঐতিহ্য বাবরি মসজিদ ভেঙে দিয়ে ভারতকে কালিমালিপ্ত করেছিল বিজিবি, আরএসএস ও বিশ্বহিন্দু পরিষদসহ তাদের সহযোগীরা। বাবরি মসজিদ ভাঙার জন্য কংগ্রেসও কম অংশে দায়ী নয়। রোববার ত্রিপুরার সোনামুড়া থেকে আগরতলা পর্যন্ত বামফ্রন্টের তিনটি নির্বাচনী সমাবেশে তিনি এই কথা বলেন। তিনি আরো বলেন, ভারতকে টুকরো টুকরো করার ষড়যন্ত্র বিজেপি আরএসএস বিশ্বহিন্দু পরিষদের।
আজ সোমবার ত্রিপুরার পত্রিকা দৈনিক দেশের কথা’র প্রথম পাতায় ’’বাবরি মসজিদ ভেঙ্গে ভারতকে কালিমালিপ্ত করেছে সংঘ পরিবার, কংগ্রেস কম দায়ী নয়’’ শিরোনামে প্রকাশিত খবরে এই তথ্য জানাগেছে।
তিনটি সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মানিক সরকার আরো বলেছেন, ১৯৯২ সালের এই দিনে ৫০০ বছরের পুরনো বাবরি মসজিদ ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছিল বিজেপি, আরএসএস, বিশ্বহিন্দু পরিষদ। তখন ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নরসীমা রাওয়ের নেতৃত্বে কংগ্রেস সরকার। বাবরি মসজিদ ভাঙার জন্য বিজেপির চক্রান্ত অগ্রিম জানতে পেরে আমাদের পার্টির তখনকার সাধারণ সম্পাদক হরকিষাণ সিং সুরজিত ও পলিট ব্যুরো সদস্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু প্রধানমন্ত্রী নরসীমা রাওকে মসজিদ রক্ষায় কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছিলেন। আমাদের পার্টির রাষ্ট্রপতি শাসন জারির বিরোধী হলেও বাবরি মসজিদ রক্ষার স্বার্থে উত্তর প্রদেশে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির জন্য দাবি জানিয়েছিল কিন্তু নরসীমা রাও মসজিদ রক্ষার কোনো পদক্ষেপ নিলেন না। মসজিদের গায়ে আঁচড় দিতে দেয়া হবে না বলে কল্যাণ সিংহ নেতৃত্বাধীন উত্তর প্রদেশের বিজেপি সরকারের মুখের কথায় ভরসা রেখেছিলেন তিনি। কেন্দ্রে তখনকার কংগ্রেস সরকার শক্ত পদক্ষেপ নিলে ঐহিত্যবাহী বাবরি মসজিদ সাম্প্রদায়িক বিজেপি আরএসএস এবং বিশ্বহিন্দু পরিষদসহ তাদের সহযোগীদের হাতে মাটিতে মিশে যেত না। তাই বাবরি মসজিদ ভাঙার দায় কংগ্রেস এড়াতে পারে না।
মুখ্যমন্ত্রী আরো বলেছেম, রাজীব গান্ধি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীনই আরএসএস বিশ্বহিন্দু পরিষদের কথায় বাবরি মসজিদের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। তখন থেকে রাম মন্দির নির্মাণের ইশু আরও বড় করে তোলার সুযোগ পায় বিজেপি। তাদের সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপের সুযোগ করে দেয় কংগ্রেস। দাঙ্গা করে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। জনবিরোধী অর্থনৈতিক নীতির পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক কার্যকলাপকে প্রশ্রয় দিয়ে দেশের ভারতের সর্বনাশ ডেকে এনেছে কংগ্রেস। এই কংগ্রেসই ভোট এলে দেশাত্মবোধক গানের ক্যাসেট বাজিয়ে দেশপ্রেমিক বনে প্রচার চালায়। আর কংগ্রেস ভোটের স্বার্থে গোপনে সাম্প্রদায়িকতাকে মদত দেয়।
মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার আরো বলেছেন, ভারতকে টুকরো টুকরো করার ষড়যন্ত্র বিজেপি আরএসএস বিশ্বহিন্দু পরিষদের। এখন তো তারা কে কী খাবেন, কী পরবেন তাও ঠিক করে দিচ্ছে। লেখক, শিল্পী, বুদ্ধিজীবীদের কাজে বাধা দিচ্ছে। বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর ধর্মের নামে যে অসহিষ্ণু পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে তার প্রতিবাদে বিশিষ্টজনেরা তাদের পুরস্কার ফিরিয়ে দিচ্ছেন। যারা এসব কার্যকলাপের প্রতিবাদ করছে তাদের দেশদ্রোহী আখ্যা দিয়ে দেশ ছাড়ার হুমকি দিচ্ছে। কংগ্রেসের মতো বিজেপির গরিব মারা অর্থনীতি ও বড়লোক তোষণ নীতির বিরুদ্ধে দেশের শ্রমিক কৃষকসহ সব অংশের মানুষ যখন বড় বড় আন্দোলন সংগঠিত করছেন, তখন আন্দোলনকে দুর্বল করতে জাত-পাত-ধর্মের নামে সাম্প্রদায়িক তাস খেলা হচ্ছে। ব্রিটিশদের কায়দায় মানুষকে মানুষ থেকে আলাদা করতে ধর্মের নামে বিভেদের রাজনীতি করছে। হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধাচ্ছে। দেশের একতা, সংহতি, সার্বভৌমত্ব রক্ষা করতে এর বিরুদ্ধে দলমত নির্বিশেষে সব অংশের মানুষকে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.