‘বাংলাদেশের চেয়ে ভালো জায়গা নেই’ -ফের অস্ট্রেলিয়ার নিরাপত্তা জুজু

আগামী বছর জানুয়ারিতে মাঠে গড়াবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ। দ্বিতীয়বারের মতো এই আসর আয়োজন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এর  আগে ২০০৪ সালে এই আসরের আয়োজক ছিল বাংলাদেশ। আগামী অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের জন্য শুভকামনা জানালেন শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট গ্রেট কুমার সাঙ্গাকারা। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কাউন্ট ডাউন অনুষ্ঠানে  সাঙ্গাকারা বলেন, ‘ক্রিকেটের জন্য বাংলাদেশ একটি আদর্শ জায়গা। লোকে এখানে ক্রিকেট ভালোবাসে তুমুলভাবে। এখানে সুযোগ-সুবিধা অসাধারণ। আশা করি তরুণরা এখানে এসে ক্রিকেট উপভোগ করবে। ক্রিকেট খেলার জন্য বাংলাদেশের চেয়ে ভালো জায়গা আর নেই।’ কিন্তু আসর মাঠে গড়ানোর আগেই অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট বোর্ড  ও সে দেশের সরকার নিরাপত্তা নিয়ে শুরু করেছে আবারও নাটক। গতকাল রাজধানীর একটি হোটেলে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের কাউন্ট ডাউন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, ‘আসলে নিরাপত্তার প্রশ্নটা আগেই উঠেছিল। যা এখনও আছে। আমি শুনেছি অস্ট্রেলিয়া আইসিসিকে বলেছে তারা বাংলাদেশে আসতে ভয় পাচ্ছে। এই বিষয়ে আমি যদি কথা বলি তাহলে বলতে হয়, নিরাপত্তা ঝুঁকি পৃথিবীর সব জায়গায় আছে। বাংলাদেশের চেয়ে অন্য দেশে এরচেয়ে বেশি নিরাপত্তা ঝুঁকি আছে। সাম্প্রতিক তথ্য অনুসারে আমেরিকা, ইউরোপ ও ভারতে নিরাপত্তা সমস্যা রয়েছে। এ কারণে খেলা বন্ধ থাকতে পারে না।’ এ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইসিসির মহাব্যবস্থাপক (ক্রিকেট) জিওফ অ্যালারডাইস এবং বাংলাদেশের তরুণ দুই পেস বোলার মুস্তাফিজুর রহমান ও তাসকিন আহমেদ তাজিম। অনুষ্ঠানে সাঙ্গাকারা থেকে শুরু করে আইসিসি মহাব্যবস্থাপক জিওফ অ্যালারডাইস বাংলাদেশের আয়োজন নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। সবার কণ্ঠেই ছিল বাংলাদেশের প্রশংসা। তবে নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও পরিষ্কার করতে বিসিবি সভাপতি বলেন, ‘আমাদের সরকার অন্যান্য দেশের চেয়ে বেশি নিরাপত্তা নিশ্চিত করছে। আমার মনে হয় খেলার জন্য বাংলাদেশের চেয়ে নিরাপদ স্থান নেই। আমাদের এশিয়া কাপ আছে। বিপিএল চলছে। কেউ বলতে পারবে না ক্রিকেটের জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ নয়। অস্ট্রেলিয়া আগেই নিরাপত্তা প্রশ্ন তুলেছিল। এখন আবার তারা একই প্রশ্ন তুলছে। আইসিসির নিরাপত্তা পর্যবেক্ষকরা সন্তুষ্ট। আইসিসি এবং আমাদের যা করা দরকার আমরা সেটা করছি। কেউ যদি প্রশ্ন তোলে সেটা তাদের ব্যাপার। আশা করি শুধু অস্ট্রেলিয়াই নয়, অন্যান্য দেশও বাংলাদেশের নিরাপত্তা আয়োজন দেখতে আসবে।’ আগামী বছর ২৭শে জানুয়ারি মাঠে গড়াবে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ আসর। ১৯ দিনের টুর্নামেন্টে ম্যাচ হবে ৪৮টি। ঢাকা, চট্টগ্রাম সিলেট ও কক্সবাজারের আটটি ভেন্যুতে হবে ম্যাচগুলো। প্রথম দিনে চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্বাগতিক বাংলাদেশ খেলবে বর্তমান চ্যাম্পিয়ন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ‘এ’ গ্রুপে এই দুই দলের সঙ্গী স্কটল্যান্ড ও নামিবিয়া। ‘বি’ গ্রুপে খেলবে শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, কানাডা ও ২০০৪ ও ২০০৬ সালের চ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান। ‘সি’ গ্রুপে ১৯৯৮ সালের চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের সঙ্গী ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও ফিজি। আর ‘ডি’ গ্রুপ আখ্যা পাচ্ছে  টুর্নামেন্টের ‘গ্রুপ অফ ডেথ’ নামে। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আছে তিনবার শিরোপা জয়ী অপর দল ভারত, নিউজিল্যান্ড ও নেপাল। ১৪ই ফেব্রুয়ারি টুর্নামেন্টের ফাইনাল হবে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে।
অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে উঠে এলেও এর  বিশ্বকাপ খেলা হয়নি কুমার সাঙ্গাকারার। এ নিয়ে মজা করে সাঙ্গাকারা বলেন, ‘ওই সময় আমি যথেষ্ট ভালো ছিলাম না। তাই যুব বিশ্বকাপ খেলা হয়নি। তবে তরুণদের জন্য এটি অসাধারণ এক প্ল্যাটফর্ম। পেশাদারিত্ব, প্রত্যাশার চাপের সঙ্গে মানিয়ে নেয়াসহ ভবিষ্যতের অনেক শিক্ষাই এখান থেকে হয়ে যায়। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ভালো করে অনেকে ঘরোয়া ক্রিকেটে সুযোগ পায়, সরাসরি জাতীয় দলেও জায়গা হয় অনেকের। বিরাট কোহলির কথা বলতে পারি। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই ওর আবির্ভাব। আজ সে ভারতের অধিনায়ক, আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন।’ তাসকিন বলেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলার পরই আমি মূল বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন দেখতে থাকি। এ বছর অস্ট্রেলিয়ায় সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আশা করি এবারও অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলা অনেকেই ভবিষ্যতে খেলবে বড়দের বিশ্বকাপে।’ আর সদ্য অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ খেলে আসা বাংলাদেশ জাতীয় দলের তরুণ তারকা মুস্তাফিজ বলেন, ‘এই দলের মিরাজ (মেহেদি হাসান), শান্ত (নাজমুল হোসেন), ইমনদের (জয়রাজ শেখ) সঙ্গে আমি খেলেছি। জাকির (হাসান) আছে, সবাই খুব ভালো ক্রিকেটার। ওরা সামর্থ্য অনুযায়ী খেলতে পারলে আমরা টুর্নামেন্টে অনেক ভালো করবো।’

No comments

Powered by Blogger.