‘মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার ভেতর রড ঢুকিয়ে দেই’ by মোহাম্মদ আবদুল ওয়াদুদ

সহপাঠীদের হাতে স্কুলছাত্র সাগর খুন
সাগরের মৃত্যু নিশ্চিত করতে ঘাতকরা গলার ভেতর রড ঢুকিয়ে দেয়। এমন লোমহর্ষক নির্যাতন থেকে বাঁচার আকুতি জানালে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। একপর্যায়ে সাগর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লে লাশ গুম করতে বরুমচড়া খালে ফেলে দিয়ে যে যার মতো ঘরে চলে যায়। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জিজ্ঞাসাবাদে দুই স্কুলছাত্র পুলিশের কাছে লোমহর্ষক খুনের বিস্তারিত বর্ণনাও দিয়েছেন। তাদের বর্ণনা শুনে পুলিশ ও অভিভাবকরাও হতবাক হয়েছেন।
হাইস্কুলের কোনও শিক্ষার্থী এভাবে কিলার হয়ে যেতে পারে, তা কেউ কোনদিন ভাবতেও পারেননি। যে বন্ধু শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাগরের সকাল, বিকাল, সন্ধ্যা কাটতো- তারাই কিনা ঘাতক হয়ে উঠলো! এ ঘটনা যেন সিনেমার কাহিনীকেও হার মানায় বলে অনেকেই মন্তব্য করেন। ওই দুই ঘাতক স্কুল শিক্ষার্থী হলেন-মোহাম্মদ রাসেল (১৪), মোহাম্মদ মুছা (১৬)।  তারা পুলিশকে জানিয়েছেন, বয়সে ছোট হলেও সাগর সব সময় ক্রিকেট ও ফুটবলে তাদের চেয়ে পারদর্শী। এক ধরনের ঈর্ষা থেকে প্রতিদ্বন্দ্বী বন্ধুকে চিরতরে সরিয়ে দিতে তিন শিক্ষার্থী মিলে খুনের পরিকল্পনা করেন। বটতলী রুস্তুমহাটে মিলাদে যাওয়ার কথা বলে মূল রাস্তায় আসলে তারা প্রথমে পেছন দিক থেকে সাগরের মাথায় লোহার রড দিয়ে প্রচণ্ড আঘাত করেন। পরে মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তারা রড দিয়ে মারতে থাকেন শরীরের নানা জায়গায়। সাগর তাদেরকে পা ধরে বাঁচার আকুতি জানালে নির্যাতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেন তারা। এরপর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলার ভেতর রড ঢুকিয়ে দেন। এ সময় ঘাতকরা উল্লাস করতে থাকেন এবং সাগরের মাথা, কান, গলা, অণ্ডকোষসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ছুরিকাঘাত করেন। একপর্যায়ে সাগর মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। পরে সাগরের লাশ গুম করতে বরুমচড়া খালে ফেলে দিয়ে যে যার মতো ঘরে চলে যায়। পুলিশ জানায়, এ ধরনের একটি হত্যাকাণ্ডের পরও তিনজন শিক্ষার্থী খুনি ছিল একেবারেই শান্ত এবং স্বাভাবিক। ঘরে খাওয়া দাওয়াসহ সবকিছু তারা যথানিয়মেই করছিল। এ চাঞ্চল্যকর হত্যাকাণ্ডের পর আনোয়ারা থানার ওসি আবদুল লতিফের নেতৃত্বে একদল পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকালে সাগরের দুই সঙ্গী রাসেল ও মুছাকে আটক করেন। এর আগেই পালিয়ে যান অপর সঙ্গী আরাফাত। বৃহস্পতিবার রাতভর জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশের কাছে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। আনোয়ারা থানার ওসি বলেন, অত্যন্ত লোমহর্ষক কায়দায় সাগরকে হত্যা করা হয়। গতকাল শুক্রবার দুপুরে এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। পলাতক খুনি আরাফাতকে আটকের চেষ্টা চলছে। এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে সাগরের দাফন সম্পন্ন হয়। এ সময় হাজার- হাজার মানুষ জানাজায় অংশ গ্রহণ করেন। এরআগে বৃহস্পতিবার সকালে সাগর খুনের খবর এলাকায় ছড়িয়ে পড়লে দিনভর বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় হাজার হাজার নারী-পুরুষ সাগরের বাড়িতে ভিড় জমায়। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা নার্গিস পারভিন বলেন, এরকম হত্যাকাণ্ডে ধিক্কার জানানোর ভাষা জানা নেই। অভিভাবকদের উচিত তাদের সন্তানদের বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা এবং সচেতন হওয়া। স্বজনরা জানায়, সাগরের স্বপ্ন ছিল শহরের নামী স্কুলে পড়ালেখার পাশাপাশি ভাল ক্রিকেটার হওয়া। কিন্তু তার সেই স্বপ্ন সফল হতে দেয়নি ঘাতকরা। ঘটনার পর থেকেই সজলের মা জোহরা খাতুন দফায় দফায় জ্ঞান হারাচ্ছিলেন। পুলিশ সাংবাদিকদের জানায়, হত্যাকাণ্ডের শিকার সাগর বরুমচড়া নলদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার পিএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন। গত সোমবার তার পরীক্ষা শেষ হয়। এরপর মঙ্গলবার দিনভর সে একই গ্রামের মোহাম্মদ রাসেল (১৪), মোহাম্মদ মুছা (১৬) ও মোহাম্মদ আরাফাতের (১৫) সঙ্গে পাড়ার মাঠে ক্রিকেট খেলেন। এরমধ্যে নিহত সাগর ছাড়া উপরোক্ত ৩ জনই বটতলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই দিনের খেলায়ও মেধাবী শিক্ষার্থী সাগরের দলের কাছে হেরে যান তাদের দল। এরপর ওই ৩ জনের ভেতর ক্রোধ আরও বেড়ে যায়। খেলা শেষে রাতে বটতলী রুস্তুমহাটে একটি মিলাদ শরীফে যাওয়ার কথা বলে সাগরকে তারা ঘর থেকে ডেকে নেন। কিন্তু রাতে তারা ৩ জন ফিরে আসলেও সাগর ঘরে ফিরেনি। এ ঘটনায় সাগরের বাবা আবদুস ছবুর বাবুর্চি আনোয়ারা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। প্রসঙ্গত, নিখোঁজের দুইদিন পর বুধবার গভীর রাতে পুলিশ আনোয়ারা উপজেলার বরুমচড়া ইউনিয়নের হজরত শাহ মোহছেন (র:) খাল থেকে সজল খাঁন সাগর (১১) নামের ওই স্কুলছাত্রটির ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধার করেন।

No comments

Powered by Blogger.