দায়সারা ইসি by বেলায়েত হোসাইন

আগামী ৩০শে ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে দেশের ২৩৫টি পৌরসভার নির্বাচন। দলীয় প্রতীকে এই প্রথম স্থানীয় নির্বাচন হচ্ছে। এরই মধ্যে প্রার্থীরা তাদের মনোনয়নপত্রও দাখিল করেছেন। কিন্তু নির্বাচনী কার্যক্রমের প্রাথমিক কাজগুলোও ভালোভাবে শুরু করতে পারেনি কমিশন। অনেকটা দায়সারাভাবে কাজ করে যাচ্ছে ইসি। নির্বাচন পরিচালনার ম্যানুয়েল ছাপানো থেকে শুরু করে অনেক কার্যক্রমই চলছে ধীর গতিতে। এছাড়া কমিশনের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোও যে যার মতো করে চলছে। সমন্বয় নেই এক দপ্তরের সঙ্গে অন্য দপ্তরের। এমনকি ছুটি বাতিল করা হলেও, বেশির ভাগ কর্মকর্তাই অফিসে আসছেন না। গত ৩রা ডিসেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন ছিল। এর দুদিন পর গতকাল রাতে প্রার্থীদের পরিসংখ্যান জানাতে পেরেছে নির্বাচন কমিশন। কমিশন সূত্র বলছে, কোনো স্থানীয় নির্বাচনে এটাই প্রথম ঘটনা। এর আগে দেশের সব ক’টি উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। যা পরিমাণে পৌরসভার দিগুণ ছিল। কিন্তু রাতের মধ্যেই পরিসংখ্যন দেয়া হয়েছিল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব কাজের জন্য একজন ডাটা এন্ট্রি অপারেটর রাখা হতো আগে। এবার সেটাও করা হয়নি। যদিও এই নির্বাচনের জন্য ১০০ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ করেছে নির্বাচন কমিশন। এদিকে, রিটার্নিং কর্মকর্তাদের জন্য নির্বাচন পরিচলনার দিক-নির্দেশনামূলক বই ‘পৌরসভা নির্বাচন ম্যানুয়াল’ এখনও সরবরাহ করা হয়নি কমিশনের পক্ষ থেকে। কমিশন সূত্রে জানা গেছে, প্রেসে এর খসড়া কপি গেলেও পাঠানো হয়নি সংশোধিত কপি। আগামীকাল পাঠানো হবে বলে জানান এক কর্মকর্তা। কমিশন সূত্রে জানা যায়, রিটার্নিং কর্মকতাসহ সংশ্লিষ্টদের বিভিন্ন দিক-নির্দেশনা দিয়ে এ পর্যন্ত ৯টি পরিপত্র জারি করেছে ইসি। কিন্তু প্রার্থিতা গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যোগ্যতা ও অযোগ্যতা বিষয়ের নিয়ম সংবলিত ৬ নম্বর পরিপত্রটি অজানা কারণে পাঠানো হয়নি রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়গুলোতে। ৩রা ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময়ে এসে এ পরিপত্রটি জারি করে নির্বাচন কমিশন। এ নিয়ে কমিশনে নানা প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রার্থিতা গ্রহণ শেষ হয়ে যাওয়ার পর এই ধরনের পরিপত্র পাঠানোর কোন অর্থই হয় না। এদিকে কমিশন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী নির্বাচনী কর্মকাণ্ডে সহযোগিতা করার স্বার্থে কর্মকর্তাদের গতকাল ও আজকের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু গতকাল শুক্রবার সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত কমিশনে অবস্থান করে কমিশনাররাসহ বেশির ভাগ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের অনুপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। সিইসিসহ ৪ নির্বাচন কমিশনারের একজনও ছিলেন না অফিসে। এমনকি সচিব, অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম-সচিবকেও দেখা যায়নি। শুধু কয়েকজন উপ-সচিবসহ নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার কিছু কর্মকর্তার উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। এর মধ্যে একজন উপ-সচিবের কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, তিনি সোফায় ঘুমাচ্ছেন। এনিয়ে ইসিতে ব্যাপক হাসাহাসিও হয়। কমিশন সূত্র বলছে, ২৩৫টি পৌরসভার সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলরদের জন্য ১ কোটি ৪০ লাখ ব্যালট পেপার ছাপানোর কথা রয়েছে। যদিও এখন পযন্ত ২০ লাখও ছাপা হয়নি। এছাড়া মেয়র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার পর তাদের জন্য ব্যালট-পেপার ছাপানো শুরু হবে। এদিকে কমিশনের বিভিন্ন দপ্তর ঘুরে দেখা যায়, নির্বাচন উপলক্ষে কর্মকর্তাদের কারও মধ্যে তেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা নেই। সবাই যে যার মতো করে চলছেন। কারও সঙ্গে কারও সমন্বয় নেই। কমিশন সূত্র বলছে, সাধারণত এই ধরনের বড় কোন নির্বাচনের আগে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে বৈঠক করা হয়। সবাইকে তাদের দায়িত্ব বণ্টন করে দেয়া হয়। কিন্তু পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে দপ্তরগুলোর সঙ্গে কোন বৈঠক করেনি কমিশন। ফলে সমন্বয়হীনতায় ভুগছে সবাই। নির্বাচন কমিশন সচিব সিরাজুল ইসলাম মানবজমিনকে বলেন, প্রার্থীদের পরিসংখ্যান তৈরি হচ্ছে। শিগগির গণমাধ্যমকে জানিয়ে দেয়া হবে। তিনি দাবি করেন, সবাই যার যার দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া কর্মকর্তাদের অনুপস্থিতির বিষয়ে তিনি বলেন, সবার তো থাকার দরকার নেই। যাদের কাজ আছে তারাই থাকবেন। এদিকে গতকাল কুমিল্লার দাউদকান্দি পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করেন দুইজন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী। মো. শাহজাহান মিয়া ও নাজমা আক্তার নামের ওই দুই প্রার্থী লিখিত অভিযোগ করে বলেন, সকল কাগজপত্র নিয়ে গেলেও রিটার্নিং কর্মকর্তা তাদের মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেননি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে কমিশনের প্রতি আহ্বান জানান তারা।
প্রসঙ্গত, সারা দেশের ৩২৩টি পৌরসভার মধ্যে ২৩৫টি-তে আগামী ৩০শে ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গত ৩রা ডিসেম্বর মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিন ছিল। আজ ও আগামীকাল চলবে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই। আগামী ১৩ই ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন।
এদিকে রাত সাড়ে নয়টায় নির্বাচন কমিশন থেকে প্রার্থীদের তথ্য জানানো হয়। জনসংযোগ পরিচালক আসাদুজ্জামান আরজু জানান, ২৩৫ পৌরসভায় তিন পদে সর্বমোট ১৩৬৮৯জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তাদের মধ্যে মেয়র পদে ১২২৩জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৭৯৮জন এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২৬৬৮ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।

No comments

Powered by Blogger.