‘আড়ালে ছিলেন রাঘব বোয়ালরা’ by ওয়েছ খছরু

দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বিচলিত ছিলেন না গোলাপগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু। বললেন, ‘শুধু এবারই নয় প্রতি নির্বাচনেই দলের ঘরে বিরোধীরা সরব ছিল। এবারও তারা সরব রয়েছে। কিন্তু পাপলুর ভোটব্যাংক অরক্ষিত রয়েছে। জনগণের ওপর ভরসা করেই আমি পৌর নির্বাচনে অতীতে প্রার্থী হয়েছি। এবারও একই ভাবে জনগণের ওপর আস্থা রেখেই প্রার্থী হয়েছি।’ মনোনয়নপত্র দাখিলের পরদিন সিলেটের আলোচিত পৌর মেয়র জাকারিয়া আহমদ পাপলু গতকাল মানবজমিনকে এ কথা জানান। গেল দুই বার মেয়র পাপলু দলীয় পরিচয়ে নির্বাচন করেননি। এরপরও জয় হয়েছে তারই। এ কারণে পৌর শহরে তার অবস্থান পাকাপোক্ত রয়েছে। আওয়ামী লীগের জাঁদরেল নেতাদের সঙ্গে টক্কর দিয়ে পাপলু পৌর অধিপতির চেয়ার দখল করে আছেন অনায়াসে। এবার আওয়ামী লীগের মেয়র পদে চেয়ারম্যান পাপলুর মনোনয়ন নিয়ে অনেক নাটকীয় ঘটনা ঘটেছে। এই নাটকীয়তায় তিনি বিচলিত ছিলেন না। বরং দলের নেতাদের সঙ্গে লড়াই করেছেন বীরদর্পে। জেলা নেতাদের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেয়ার সুপারিশ করা করা হয়েছিল জেলা আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ মিসবাহ আহমদকে। এ একারণে কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকায় দুই বারের পৌর মেয়র পাপলুকে পাশ কাটিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয় মিসবাহকে। বিষয়টিও চাউর হয় গোলাপগঞ্জে। শেষে নাটকীয়ভাবে মেয়র পাপলুই হয়েছেন নৌকার কাণ্ডারী। তার চেয়ে অনেক প্রবীণ ও প্রভাবশালী নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সিরাজুল জব্বার চৌধুরী কিংবা লন্ডন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রাবেলও মনোনয়ন পাননি। মেয়র পাপলুর কাছে তারা ফের ধরাশায়ী হলেন দলীয় রাজনীতিতে। গতকাল মানবজমিনের কাছে মনোনয়ন নিয়ে দলীয় নাটকের কথা খোলাসা করলেন পাপলু নিজেই। জানালেন, তিনি দুই বারের নির্বাচিত মেয়র। দলীয়ভাবে নির্বাচন না করলেও দুটি নির্বাচনে তার পক্ষে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা কাজ করেছেন। এবারও দলীয় নেতারা তার পক্ষে রয়েছেন। এ কারণে স্বভাবতই তার সঙ্গেই থাকবে নৌকার সমর্থন। বিষয়টি তিনি কয়েক দিন আগে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিলেটের সিনিয়র নেতাদের অবগত করেছিলেন। ঢাকায় যাওয়ার পথে বিমানবন্দরে সিলেট জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের ভিআইপি লাউঞ্জে পেয়ে যান তিনি। এই সুযোগে তিনি নিজে দলের জেলা পর্যায়ের নেতাদের কাছে জানান দেন- এবারও তিনি দলের হয়ে গোলাপগঞ্জে মেয়র পদে নির্বাচন করবেন। নিজের প্রার্থিতা জানিয়ে তিনি বিমান যোগে জরুরি কাজে ঢাকা চলে যান পাপলু। কিন্তু স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা গোলাপগঞ্জে গিয়ে তাকে আনুষ্ঠানিক না জানিয়েই গোলাপগঞ্জে এসে বৈঠকে বসেন। অসমর্থিত সূত্র থেকে জানলেও ওই বৈঠকে তিনি ঢাকা থাকায় উপস্থিত থাকতে পারেননি। তবে, তার সমর্থিত গোলাপগঞ্জের কয়েকজন নেতাকে তিনি বৈঠকে পাঠান। কিন্তু সিলেটের নেতারা তার প্রতিনিধির প্রস্তাব গ্রহণ না করে জানান, দলের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন করতে হবে। এ কারণে মেয়র পাপলু প্রথমে স্বাক্ষর ছাড়া এবং পরবর্তীতে ফ্যাক্সের মাধ্যমে নিজের স্বাক্ষর সংবলিত একটি আবেদন করেন। কিন্তু সেই আবেদনটি জেলা পর্যায়ের নেতারা গ্রহণ না করে সৈয়দ মিসবাহ আহমদের নাম ঢাকায় প্রস্তাব করেন। মেয়র পাপলু বলেন, এ ঘটনার পর তিনি ঢাকা থেকে সিলেটে চলে আসেন। নিজেও কিছুটা মর্মাহত হন। তিনি বাড়ি থাকলে বৈঠকে না গেলে বেয়াদবী হতো। কিন্তু ঢাকায় থাকায় তাকে পাশ কাটিয়ে মেয়র পদে মনোনয়নের জন্য সৈয়দ মিসবাহর নাম প্রস্তাব করা হয়। মেয়র প্রার্থী জাকারিয়া আহমদ পাপলু বলেন, এ ঘটনায় তিনি মর্মাহত হন। কাউকে কিছু না জানিয়েই বসে থাকেন। বিষয়টি দলের হাই কমান্ডের নজরে এলে ডাক পড়ে তার। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে তিনি নিয়ে আসেন দলীয় মনোনয়ন। বলেন, এই নাটকের জন্য তিনি স্থানীয় নেতাদের দুষলেন না। পেছনে ছিল অনেক রাঘব-বোয়াল। তারাই আড়ালে থেকে এসব নাটকের অবতারণা ঘটিয়েছেন। জানালেন, ‘দলের কাছে  আমি ঋণী। গেল দুই বার দলের প্রতীক ছিল না। এবার নৌকা প্রতীক পেয়েছি। এখন দলের অপর দুই প্রার্থী দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি অনুগত থেকে মনোনয়পত্র প্রত্যাহার করে নিলে জয় হবে নৌকার।’

No comments

Powered by Blogger.