মেরুদণ্ড সোজা হতে কত দেরি পাঞ্জেরি? by ডক্টর তুহিন মালিক

এক. নিজের স্বাধীনতা কে না চায়? এটা চায় না, এমন মানুষ বোধহয় তাবৎ বিশ্বে খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। প্রাণিকুলও কভু খাঁচায় বন্দিজীবনের পরাধীনতাকে মেনে নিতে পারে না। জীবজগতের প্রধান জৈবিকত্বই হচ্ছে তার আত্মস্বাধীনতা। সে কারণেই হয়তো কবি বলে গেছেন ‘স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় রে; কে বাঁচিতে চায়? পরাধীনতার শৃঙ্খল কে পরিবে পায় রে; কে পরিবে পায়?’ কবি যদি বেঁচে থাকতেন তবে কবিচক্ষুতে নির্ঘাত অবলোকন করে যেতেন যে, আমাদের নির্বাচন কমিশনই সৃষ্টিকুলে একমাত্র যারা নিজেদের স্বাধীনতাকে চায় না। আশরাফুল মাখলুকাতের ১৬ কোটি বঙ্গসন্তান যতই তাদেরকে স্বাধীনতা ঘোষণার আবেদন জানাক না কেন, তারা নিজেদের পরাধীনতাকেই শ্রেষ্ঠতর বলে মেনে নিয়েছে। ২০১৫ সালের পুরো ডিসেম্বর মাসে জাতীয় জীবনে সবচেয়ে বহুল প্রচলিত শব্দ ’মেরুদণ্ডহীনতা’ যাদের জন্য প্রযোজ্য, সেই ইসি তাদের মেরুদণ্ডহীনতার দণ্ডকে মাথা পেতে নিতেও কোনো রকম কার্পণ্য করছে না। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবারো নির্বাচন কমিশনকে মেরুদণ্ডহীন আখ্যা দিয়েছেন। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস, এরশাদের মতো সদা-পরিবর্তনীয় মানুষও আজ ইসিকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছেন, আপনাদের মেরুদণ্ড আছে কি না প্রমাণ দিতে হবে। গণমাধ্যমে আচরণবিধি ভঙের নিত্যনতুন অভিযোগ প্রচারিত হলেও ইসি এগুলোর কোনো ‘সত্যতা খুঁজে পাচ্ছে না’। এরশাদ সাহেবের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন এবার পৌর নির্বাচনে মনোনয়নপত্র বাছাই করে একসাথে ১৫৭ জন মেয়র প্রার্থীসহ ৮৯৭ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেখিয়ে দিলো তারা এতটাই ক্ষমতা রাখে। অথচ তাতেও তাদের কোনো সুনাম হয়নি! মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীরা যদি বিএনপির হয়ে যায় তাতে খামাখা ইসি একা কেন দোষী হবে? তারা তো আওয়ামী লীগের ’বিদ্রোহী’ প্রার্থীদেরও মনোনয়নপত্র বাতিল করেছে, কই তাতে তো আওয়ামী লীগ কোনো টুঁ শব্দ পর্যন্ত করল না। ইসি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বৈধ বলে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছেন তাকে বিনাযুদ্ধে জয়ী হতে দেবে না। কঠিন শপথ। সময় থাকুক আর নাই থাকুক, ব্যালট পেপার নতুন করে ছাপাতে হোক আর পুড়িয়ে ফেলা হোক, হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে দেখাতে হবে কতটা শক্ত তাদের মেরুদণ্ড। ইসি নির্বাচনী আইন-কানুন প্রয়োগ করল সেগুলো আবার নাকি সরকারি দলের প্রার্থীর পক্ষেই যাচ্ছে বলে অভিযোগ। এ দিকে ইসির কোনো নোটিশের জবাব দেয়ার কোনো প্রয়োজন দেখছেন না সরকারের এডিসি, রিটার্নিং অফিসার, ইউএনও, এসপি, ওসিরা। প্রশাসন পর্যন্ত তাদেরকে মেরুদণ্ডহীন ভাবছে নাকি? ইজ্জত বাঁচাতে অসহায় ইসি এবার দ্বারস্থ হলেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর। বিধি ভঙ্গের অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীকে একটু দেখার জন্য না হয় অনুরোধই জানানো হলো। তাতেও এত সমালোচনা! যদিও বিধি ভঙ্গের অভিযোগ দেখার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের, প্রধানমন্ত্রীর নয়। তাতে কী, প্রধানমন্ত্রী তো খেলার মাঠ থেকে শুরু করে সব কিছুই একক সিদ্ধান্তেই করছেন। সর্বক্ষমতা তো দেশের প্রধানমন্ত্রীর হাতেই ন্যস্ত। আর সামান্য একটা পৌর নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়টা প্রধানমন্ত্রী যদি অনুগ্রহ করে একটু দেখে দেন তাতে কী-বা আসে যায়?
দুই. নির্বাচন কমিশন যে কতটা উদার এটা কিন্তু কারো চোখে পড়ল না। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার্থে তারা বেশি উদ্বিগ্ন বলে প্রকাশ্যে সাংবাদিকদের জানায় ইসি। নিজেদের ভাবমূর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন না হয়ে সরকারের ভাবমূর্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করতে পারাটা চাট্টিখানি কথা নয়। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ইসির ভাবমূর্তির ‘ভাব’ আর ‘মূর্তি’ যেভাবে হারিয়ে গেছে তা পুনরুদ্ধারের অযথা চেষ্টা না করে বরং সরকারের ভাবমূর্তি নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ায় দোষটা কিসের? সুশীলসমাজ খামাখা বলে যে, ইসি একটা সাংবিধানিক পদ ও সংবিধান প্রদত্ত সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। নিজের সর্বময় ক্ষমতা প্রয়োগ না করে নির্বাচনী প্রতিযোগিতার অভিযুক্ত আরেকটি দলের সভানেত্রীর কাছে এহেন আত্মসমর্পণ স্পষ্টত সংবিধান লঙ্ঘন। অযথা ইসির কমিশনারদের সাংবিধানিক শপথের কথাগুলো মনে করিয়ে দিয়ে কেন এভাবে বিব্রত করা হচ্ছে? কমিশনাররা কোনো ধরনের রাগ, ভয়, লোভ, অনুরাগ-বিরাগের বশবর্তী না হয়ে নির্বাচন কমিশনারের মতো সাংবিধানিক একটি পদে দায়িত্ব পালনের শপথ নিয়েছেন সত্য, কিন্তু তাই বলে এত দিন পর কেন ‘সাংবিধানিক দোহাই’ দেয়া হচ্ছে? তাও আবার সংবিধান লঙ্ঘনের মতো মৃত্যুদণ্ডতুল্য অপরাধের কথা এভাবে প্রকাশ্যে বলতে হবে? ওরে বাবা, দণ্ডহীনতার জন্য মৃত্যুদণ্ড? এ আবার কেমন আইন? পঞ্চদশ সংশোধনী পাসের মাধ্যমে সংবিধান পরিবর্তন করে এ দণ্ড যদিও আরোপ করা হয়ে থাকে, তবু এটা নিশ্চিতভাবেই নির্বাচন কমিশন বা সরকারি দলের জন্য প্রযোজ্য নয়, সেটা কি সুশীলরা জানে না?
তিন. সংবিধান না হয় ইসিকে সর্বময় ক্ষমতা অর্পণ করেছে, তাই বলে ইসিকে এত চাপ দিলেই কি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়ে যাবে? যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। সরকারি দলের হানিফ সাহেব বলছেন, ‘নির্বাচন কমিশন বিএনপির প্রতি সহানুভূতিশীল, সরকারি দলের প্রতি কঠোর।’ আর এ দিকে বিএনপিও বলছে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের দলীয় সংগঠন। অথচ নির্বাচন কমিশন এত কষ্ট করে মাঠপর্যায়ে যেসব তদন্ত চালাচ্ছে তার ফল যদি বিএনপির প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে চলে যায় তার জন্য ইসি কেন দোষী হবে? সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের সামাল দেয়ার কথা মুখে বললেই হলো, সামাল দেয়া তো দূরের কথা একটু সালাম না দিয়ে দেখুন, অবস্থা কী দাঁড়ায়! তারপরও কেন বলা হচ্ছে, কমিশনের কাছে এত সর্বময় ক্ষমতা ও যথেষ্ট আইন থাকা সত্ত্বেও সেটার প্রয়োগ করা হচ্ছে না? ফেনী, চাঁদপুর, সিলেট, শরীয়তপুর, কুমিল্লাসহ অসংখ্য পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র নিয়মবহির্ভূতভাবে বাতিল কি ইসি নিজেদের স্বার্থে করেছে? সরকারি দলের লোকজনের চাপও যে তাদেরকেই সইতে হয়। এটার জন্য তো কেউ তাদের কোনো প্রশংসা করে না। আইনে আছে পৌরসভার নির্বাচন করতে হলে মনোনয়নপত্র জমার আগে উপজেলা থেকে পদত্যাগ করতে হবে। এই অপরাধে নির্বাচন কমিশন আমিনুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলেও আবুলকে তো বরখাস্ত করেছে। আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিতে পারলেও ভোট গ্রহণ, ভোট গণনা, ব্যালট ছিনতাই, নির্বাচনী সহিংসতা, প্রার্থী হতাহতের বিষয়ে কিভাবে ব্যবস্থা নেয়া হবে, সেটা নিয়ে এত আগে ভাবতে কে বলেছে? এত টেনশন কেন? নির্বাচনের সময় ঠিকই দেখতে পারবেন ৪ শতাংশ ভোট কী করে ৪০ শতাংশ হয়ে যায়। শান্তিপূর্ণ পরিবেশে অবাধ-নিরপেক্ষ ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ বিটিভিতে ঠিকই দেখতে পাবেন আপনারা। এবার সাংবাদিকেরা ভোটারশূন্য ভোটকেন্দ্রে কুকুরের ছবি যাতে ছাপতে না পারেন তার জন্য ‘জনস্বার্থে’ ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকার সীমিত করে দেয়া হয়েছে। জনগণ ঘরে বসেই আরামে ভোটের সব খবরাখবর জানতে পারবে বিটিভি আর দলীয় নেতাদের চ্যানেলগুলোতে।
চার. নির্বাচন কমিশন তো ‘কঠোর’ ব্যবস্থা নিয়েছেই। সাতক্ষীরার কলারোয়ার রিটার্নিং অফিসারকে সাময়িক বরখাস্ত পর্যন্ত করা হয়েছে। অথচ বলা হচ্ছে ‘অনিয়ম প্রশ্রয় দেয়ায় এই কর্মকর্তাকে শাস্তি দিলেও অনিয়মের সুবিধাভোগী সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।’ নির্বাচন পরিচালনাবিধির ৯০ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিশন তাৎক্ষণিক ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করতে পারবে বলা হলেও এটা যে করতেই হবে, সেটা কে বলল? রিটার্নিং অফিসারকে বরখাস্ত কি অনিয়মের প্রমাণ হতে পারে? এত আইন-কানুন দেখালে তো আর শান্তিমতো ‘দায়িত্ব পালন’ করা যাবে না। আর আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ স্বাস্থ্যমন্ত্রী আর তথ্যমন্ত্রীর মতো ভিআইপিদের বিরুদ্ধে উঠলেই কি আর ব্যবস্থা নেয়া যায়? জনগণ কি দেখে না ময়মনসিংহের ফুলপুরের রিটার্নিং অফিসার সুন্দর করে প্রতিবেদন লিখে দিলেন যে, ‘দুই মন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায়নি।’ শুধু দুদক একাই কেন দায়মুক্তির প্রতিষ্ঠান হবে? নির্বাচন কমিশনেরও অধিকার আছে দুদকের এই রেকর্ডে ভাগ বসানোর। তাই ‘পাছে লোকে কিছু বলে’ চিন্তা না করে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত মন্ত্রী-এমপিদের দায়মুক্তি দিয়ে দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। ক্ষমতাসীন দলের তিন এমপির আচরণবিধি লঙ্ঘনের অপরাধও ক্ষমা করে দিয়েছে ইসি। এর আগে তথ্য ও ধর্মমন্ত্রীকেও ‘মানবিক কারণে’ ক্ষমা করে দেয় তারা। অথচ তাদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ডের বিধান আছে। প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিলের ক্ষমতাও আছে ইসির। আর চাঁদপুরের ছেংগারচরের রিটার্নিং অফিসার না হয় বিএনপি প্রার্থীর শিক্ষাসনদ ছিঁড়ে দিয়ে মনোনয়নপত্রকে বাতিল করেছে, তাতে এমন কী রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার পরিবর্তন হয়ে গেল? স্থানীয় নির্বাচনে কি ক্ষমতার বদল হয়?
পাঁচ. বর্তমান নির্বাচন কমিশন এবং প্রধানমন্ত্রীর অধীনে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বিএনপি যদি যেত তাহলে এ রকমই যে অবস্থা হতো এটা কিন্তু ভাবা ঠিক নয়। জাতীয় নির্বাচনে ক্ষমতা পরিবর্তন হয় বলে এর চেয়ে আরো বেশি ভয়াবহ অবস্থা হতো বলে কেন অযথা ভয় দেখাচ্ছেন? তা ছাড়া এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে গত বছরের উপজেলা নির্বাচন এবং এ বছরের ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে ইসির সমালোচনা করেই বা কে কী করতে পেরেছে? ইসি নিজেদের পর্যাপ্ত জনবলকে রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগের বদলে জনপ্রশাসনের লোকদের রিটার্নিং অফিসার বানিয়ে কি অপরাধ করেছে? জনপ্রশাসনের নিয়োগ, বদলি বা পদোন্নতিসহ চাকরির সব শর্ত সরকার নিয়ন্ত্রণ করলে ইসির কথা তারা শুনবেই বা কেন? পুলিশ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কথা না শুনে কি ইসির কথা শুনবে? তা ছাড়া জনপ্রশাসনের কোনো কর্মকর্তাকে শাস্তি দিতে চাইলেই তো আর শাস্তি দেয়া যাবে না। খুব বেশি হলে ইসি তাদেরকে প্রত্যাহার করতে পারবে। বড় শাস্তি দিতে হলে তো সরকারের সমর্থন লাগবে। আর সরকার নিজের ক্ষতি করে নিজের কর্মকর্তাকে শাস্তিই বা কেন দিতে যাবে? কাগজে কলমে নির্বাচন কমিশন পরাশক্তি হলেও বর্তমান ইসি যে জনপ্রশাসনের কর্মকর্তাদের মতোই সরকারের ‘চাকরি’ করে চলেছে, সেই কমিশনাররা বিশ্বাস করলেও আপনারা কেন বিশ্বাস করতে চাচ্ছেন না? এরশাদ সাহেব বলেছেন, সকাল ৯টার মধ্যেই ভোট শেষ হয়ে যাবে। বিএনপি জানতে চেয়েছে, এটা প্রধানমন্ত্রীর বার্তা কি না? এরশাদ সাহেব তো প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত। তার মানে তিনি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ বার্তাবাহক। তার কথা তো আর ফেলনা হওয়ার নয়। বার্তাবাহক তো নিজে থেকে কোনো কথা বলতে পারেন না। আসলে এরশাদ সাহেব মনের দুঃখেই এই রকম কথা বলে থাকেন। গত ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তাকে যেভাবে সিএমএইচে বন্দী করে গলফ খেলানো হলো সেই একই প্রক্রিয়ায় এবারের নির্বাচনেও ১৫০টি পৌরসভায় জাতীয় পার্টি প্রার্থী দেয়ার পরও ১০০টিতে প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হলো। তাই এরশাদ সাহেবের শারীরিক ও মানসিক অবস্থাটাও বিবেচনাযোগ্য হওয়া উচিত।
ছয়. ইতোমধ্যেই দুই ডজনেরও বেশি পৌরসভায় প্রতিপক্ষের ওপর হামলা ও বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাফ হোসেন চৌধুরী সস্ত্রীক হামলার শিকার হয়েছেন। নির্বাচনী সহিংসতায় মাটিরাঙ্গায় বিএনপি নেতাসহ একাধিক হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্র, রামদা, চাপাতি, হাতুড়ি নিয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রচারণায় অংশ নিচ্ছে। সরকারদলীয়দের হাতেই মার খাচ্ছে দলীয় বিদ্রোহীরা। আবার বিদ্রোহীরাও সমানে পিটাচ্ছে দলীয় প্রার্থী-সমর্থকদের। কুষ্টিয়ায় আওয়ামী কোন্দলে দলীয় প্রার্থীকে হাতুড়ি দিয়ে পেটানো হয়েছে। চৌদ্দগ্রামে আওয়ামী দুই পক্ষের সংঘর্ষে গাড়ি ভাঙচুর ও মহাসড়ক অবরোধ করা হয়েছে। সোনারগাঁওয়ে দলীয় সংঘর্ষে একজন মারা গেছে। অথচ পুলিশ এখনো নির্বিচারে বিএনপি-জামায়াতের লোকজনকেই গ্রেফতার করে যাচ্ছে। বিএনপি দলবল নিয়ে নির্বাচন কমিশনে গিয়ে সেনা মোতায়েনের দাবি জানালে সিইসি তাৎক্ষণিকভাবে দাবি প্রত্যাখ্যান করলেন। সেনা মোতায়েন করা হলে দলীয় সেনাদের কী হবে? মাঠে সেনাবাহিনী নেমে গেলে কখন কী ঘটে যায়, এর দায়ই বা কে নিতে যাবে? ইসির মেরুদণ্ড নেই তো কী হয়েছে? শুধু নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেই কি সবকিছু ঠিকঠাক হয়ে যাবে? প্রশাসন-পুলিশ-র‌্যাব কি বিএনপির পক্ষে? ইসি কি একাই মেরুদণ্ডহীন? স্বয়ং দেশের রাষ্ট্রপতিও তো ক্ষমতাহীন। দেশ গণতন্ত্রহীন। অর্থনীতি বিনিয়োগহীন। র‌্যাব-পুলিশ বাধাহীন। মানুষ নিরাপত্তাহীন। সরকার ভোটবিহীন। বিরোধীরা আন্দোলনহীন। মজলুমরা বিচারহীন। দুর্নীতি সীমাহীন। সুশীলরা প্রতিবাদহীন। জনগণ গুরুত্বহীন। তাই সর্বক্ষেত্রেই এখন একই প্রত্যাশা, মেরুদণ্ড সোজা হতে কত দেরি পাঞ্জেরি?
লেখক : সুপ্রিম কোর্টের আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
e-mail: drtuhinmalik@hotmail.com

No comments

Powered by Blogger.