কারাগারে স্বামীরা প্রচারণায় স্ত্রীরা by কাজী সুমন

রাজনৈতিক মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন বেশ কয়েকজন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থী। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় অনেকে রয়েছেন আত্মগোপনে। এলাকায় জনপ্রিয় হওয়ায় দল থেকেও মনোনয়ন পেয়েছেন তারা। তবে ভোটের আর এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও মাঠে প্রচারণায় অংশ নিতে পারেননি এসব প্রার্থী। তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন স্ত্রীরা। দিন-রাত চষে বেড়াচ্ছেন ভোটের মাঠ। ভোটারদের কাছে স্বামীর জন্য চাইছেন ভোট। জানা গেছে, দুজন মেয়র প্রার্থী ও ৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থী এবার কারাগারে থেকে নির্বাচন করছেন। তারা সবাই বিএনপি ও জামায়াত নেতা। এ ছাড়া পরোয়ানা থাকায় একজন মেয়র প্রার্থী ও একডজন কাউন্সিলর প্রার্থী আত্মগোপনে রয়েছেন। তাদের পক্ষে কৌশলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। প্রার্থীরা মোবাইল ফোনে এলাকার ভোটারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। অনেকে রাতের আঁধারে চুপিসারে গণসংযোগ করছেন।
হবিগঞ্জে নির্বাচন অনুষ্ঠেয় ৫টি পৌরসভায় মধ্যে সদরের মেয়র প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জি কে গউছ কারাগারে থেকে নির্বাচন করছেন। বর্তমান এই মেয়রের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন স্ত্রী ফারহানা গউছ হ্যাপি, ছেলে মঞ্জুরুল কিবরিয়া প্রীতম ও পরিবারের সদস্যরা। প্রতিদিনই গণসংযোগ করছেন গউছপত্নী। ভোটারদের কাছে স্বামীর উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরছেন তিনি। যশোরে অনুষ্ঠেয় ৬টি পৌরসভার মধ্যে চৌগাছায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জামায়াত নেতা কামাল আহমেদ কারাগারে রয়েছেন। অত্যন্ত গোপনীয়তার সঙ্গে তার প্রচারণা চালাচ্ছেন কামাল আহমেদের স্ত্রী জাহানারা পারভীন জলি, পরিবারের সদস্য ও দলের নেতাকর্মীরা। কামাল আহমেদের নির্বাচনী এজেন্ট ও উপজেলা জামায়াতের আমীর গোলাম মোরশেদ মানবজমিনকে জানান, আমাদের দলের প্রার্থী দীর্ঘদিন কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র ছিল। এছাড়া দীর্ঘদিন শিক্ষকতা করেছেন। এলাকায় জনপ্রিয় হওয়ায় প্রার্থিতা দাখিলের পরপরই তাকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তবে ভোটারদের কাছ থেকে বেশ সাড়া পাচ্ছি। সু্‌ষ্ঠু নির্বাচন হলে বিপুল ভোটে জয়ী হবো। কারারুদ্ধ প্রার্থীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বগুড়ায়। ওই জেলার ৯টি পৌরসভার নির্বাচন হবে। কোন মেয়র প্রার্থী কারাগারে না থাকলেও ৪ জন কাউন্সিলর প্রার্থী কারান্তরীণ রয়েছেন। তারা হলেন- বগুড়া সদর পৌরসভার ১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শাহ মেহেদী হাসান হিমু, ৮নং ওয়ার্ডের সাবেক কমিশনার ও জামায়াত নেতা এরশাদুল বারী এরশাদ, ১১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও জেলা যুবদলের সভাপতি সিপার আল বখতিয়ার এবং ১৫নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও শহর যুবদলের সভাপতি মাসুদ রানা। কারাগারে থেকেই তারা নির্বাচনে মনোনয়ন দাখিল করেছেন। গত ১৪ই ডিসেম্বরের পর থেকে তাদের পক্ষে নির্বাচনী মাঠ চষে বেড়াচ্ছে তাদের স্ত্রীরা। সরকারদলীয় প্রার্থীদের হুমকি-ধামকি, ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে দিন-রাত স্বামীর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তারা। জামায়াত নেতা এরশাদুল বারী এরশাদের পক্ষে তার স্ত্রী শাহেদ আরা সুলতানা রোজী প্রচারণা চালাচ্ছেন। তিনি বলেন, ভোটারদের ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। এই পরিবেশ বজায় থাকলে এবং ভোটাররা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট দেয়ার সুযোগ পেলে তার স্বামী অবশ্যই বিজয়ী হবেন। স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা হিমুর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তার স্ত্রী জিনাত পারভীন স্নিগ্ধা। তিনি বলেন, তার স্বামী মিথ্যা মামলায় কারাগারে। এলাকায় তার জনপ্রিয়তা রয়েছে। এ কারণে কারাগারে থেকে আবারও প্রার্থী হয়েছেন। যুবদল নেতা মাসুদ রানার পক্ষে স্ত্রী রেহেনা বেগম প্রচারণা চালাচ্ছেন। যুবদল নেতা বখতিয়ারের পক্ষে মাঠে নেমেছেন তার স্ত্রী আয়েশা জামান বখতিয়ার। এছাড়া বিভিন্ন মামলায় আসামি হওয়ায় আত্মগোপনে থাকায় ৭নং ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ও জাসাস জেলা সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন পশারী হিরুর পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার। একইভাবে ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের প্রার্থী হারুন উর রশিদ ও গোলাম মোস্তফার পক্ষে তাদের স্ত্রীরা দিনরাত মাঠে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। এদিকে মৌলভীবাজারে নির্বাচন অনুষ্ঠেয় ৪টি পৌরসভার মধ্যে কোন দলের মেয়র প্রার্থী কারাগারে নেই। তবে সদর পৌরসভার কাউন্সিলর প্রার্থী ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সরওয়ার মজুমদার ইমন কারাগারে থেকে মনোনয়ন দাখিল করেন। এরপর তার স্ত্রী ও পরিবারের সদস্য প্রচারণা চালান। সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। চাঁপাইনবাবগঞ্জে নির্বাচন অনুষ্ঠেয় ৪টি পৌরসভার মধ্যে কোন মেয়র প্রার্থী কারাগারে নেই। তবে সদর পৌরসভায় কাউন্সিলর প্রার্থী ছৈবুর রহমান কারাগারে থেকে নির্বাচন করছেন। তার প্রচারণা চালাচ্ছে পরিবারের সদস্যরা। কোন মেয়র প্রার্থী কারাগারে নেই। তবে কলারোয়ায় কাউন্সিলর প্রার্থী যুবদল নেতা আবদুল মুজিব কারাগারে থেকে নির্বাচন করছেন। তার প্রচারণা চালাচ্ছেন স্ত্রী ও ছোটভাই আবদুল আজিজসহ পরিবারের সদস্যরা। ওদিকে জয়পুরহাটের ৩টি পৌরসভার মধ্যে কোন মেয়র প্রার্থী কারাগারে না থাকলেও আত্মগোপনে রয়েছেন দুজন। তারা হলেন- সদরে জামায়াতের মেয়র প্রার্থী হাসিবুল আলম ও কাউন্সিলর প্রার্থী বিএনপি নেতা গুলজার আহমেদ। মামলা থাকায় এখনও এলাকায় প্রকাশ্যে প্রচারণায় অংশ নিতে পারেননি। তাদের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন পরিবারের সদস্য ও দলের নেতাকর্মীরা। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আত্মগোপনে থাকা প্রার্থীদের পক্ষে কৌশলে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। পোস্টার লাগানো হচ্ছে রাতের আঁধারে। গণসংযোগ করা হচ্ছে মোবাইল ফোনে। এদিকে ময়মনসিংহের গফরগাঁও পৌরসভায় নির্বাচন স্থগিত হওয়ায় ৮টিতে নির্বাচন হচ্ছে। ওই জেলায় কোন মেয়র কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থী কারাগারে নেই। সবাই নির্বাচনী মাঠে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। রাজশাহীর ১৩টি পৌরসভায় কোন মেয়র প্রার্থী কারাগারে নেই। তবে কাটাখালী পৌরসভায় স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী জামায়াত নেতা মাজেদুর রহমান আত্মগোপনে থেকেই মনোনয়ন দাখিল করেছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় এখনও তিনি এলাকায় প্রচারণা চালাতে পারেননি। তার প্রচারণা চালাচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। গাইবান্ধার ৩টি পৌরসভার মধ্যে কোন প্রার্থী কারাগারে না থাকলেও গোবিন্দগঞ্জ পৌরসভায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী ফারুক আহমেদ আত্মগোপনে রয়েছেন। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা থাকায় থানা বিএনপির এই সভাপতি নির্বাচনী প্রচারণায় এখনও অংশ নেননি। তার পক্ষে পরিবারের সদস্য ও দলের নেতাকর্মীরা এলাকায় গণসংযোগ করছেন। এদিকে কুমিল্লায় ৬টি, চাঁদপুর ৫টি, মুন্সীগঞ্জ দুটি, সিরাজগঞ্জে ৬টি, ঠাকুরগাঁওয়ে ২টি, বরিশালে ৬টি, চট্টগ্রামে ১০টি, পটুয়াখালীতে ২টিসহ ২৩৩টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এসব কোন মেয়র কিংবা কাউন্সিলর প্রার্থী কারাগারে নেই।

No comments

Powered by Blogger.