নিবন্ধন ছাড়াই চলছে অর্ধলক্ষাধিক কিন্ডারগার্টেন

কোনো ধরনের নিয়মনীতি বা নিবন্ধন ছাড়াই সারা দেশে চলছে অর্ধলক্ষাধিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল। নীতিমালা অনুসারে প্রতিটি কিন্ডারগার্টেন বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব মালিকানা থাকার কথা থাকলেও কেউ মানছেন না এ নিয়ম। অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা না থাকলেও আদায় করা হচ্ছে মোটা অঙ্কের টিউশন ফি। লিখিত-অলিখিতভাবে নানা নামে ফি আদায় তো আছেই। নেই মানসম্মত শিক্ষক। সামান্য বেতন দিয়ে রাখা হচ্ছে শিক্ষক। রাজধানীর কয়েকটি স্কুল সরজমিন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অভিভাবকরা বলছেন, ৬ বছরের আগে শিশুদের সরকারি স্কুলে ভর্তি করানো যায় না। অনেক অভিভাবক ৪ বছর হলেই সন্তানদের স্কুলে ভর্তি করান। ৬ বছরের পরও অনেকেই কিন্ডারগার্টেন রাখেন। কারণ মহানগর ও জেলা পর্যায়ে অনেক সরকারি স্কুলের আসন সংকট। অভিভাবকদের এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে কিছু প্রতিষ্ঠান মোটা অঙ্কের টিউশন ফি আদায় করছে। এদিকে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের মালিকরা বলছেন, সরকারের নিয়মনীতি মেনেই আমরা প্রতিষ্ঠান চালাচ্ছি। বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক সমিতির হিসাব অনুযায়ী, দেশের প্রায় ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেনে পড়ালেখা করছে প্রায় ১ কোটি শিশু। শহর অঞ্চলের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আসনসংখ্যা সীমিত হওয়ায় অভিভাবকদের একমাত্র ভরসা কিন্ডারগার্টেন। কিন্তু এখানেও স্বস্তি মিলছে না।
এ রকম পরিস্থিতিতে গত বছর সরকার কিন্ডারগার্টেন নীতিমালা সংশোধন করে এবং বছরের জুনের মধ্যে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের মাধ্যমে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর থেকে নিবন্ধন নিতে বলা হয়। অথচ নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছে মাত্র হাজার দেড়েক প্রতিষ্ঠান। তাও সব শর্ত পূরণ না করায় একটিও নিবন্ধন নিতে পারেনি। আর এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেখভালের জন্য কোনো মনিটরিং ব্যবস্থাও নেই প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের। এ অবস্থায় দেশের প্রায় ৫০ হাজার কিন্ডারগার্টেন চলছে ইচ্ছামাফিক।
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, নীতিমালা আমাদের আছে। কিন্তু এটা বাস্তবায়ন করতে হবে। সেজন্য কাজ করছি। সরকারি নিয়মনীতি মেনে কিন্ডারগার্টেনগুলোকে তাগিদ দিচ্ছি। তার পরও যারা করবে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্র জানায়, কিন্ডারগার্টেনগুলো পরিদর্শন করে তথ্য সংগ্রহের জন্য জেলা পর্যায়ের উপপরিচালকদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এত কিন্ডারগার্টেনের তথ্য তাদের পক্ষে সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এখন উপজেলা ও সহকারী উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারদের এ দায়িত্ব দেয়া হচ্ছে।
নীতিমালায় বলা আছে, প্রতিটি কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিজস্ব মালিকানা অথবা ভাড়ায় মহানগর এলাকায় অন্তত ৮ শতাংশ, পৌর এলাকায় অন্তত ১২ শতাংশ ও অন্যান্য এলাকায় ৩০ শতাংশ ভূমি এবং এ ভূমির ওপর অন্তত তিন হাজার বর্গফুটের কমপক্ষে ছয় কক্ষের ভবন থাকতে হবে। ভাড়া নেয়ার প্রমাণ হিসেবে লিখিত চুক্তি দেখাতে হবে।
এ ছাড়াও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির জন্য ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা, প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন তিনজন মহিলা শিক্ষকসহ কমপক্ষে ছয়জন শিক্ষক থাকতে হবে। জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। শিক্ষকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত একজন, মেধাবী শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের মধ্য থেকে নির্বাচিত একজন, অভিভাবকদের মধ্যে নির্বাচিত দুজন, উদ্যোক্তা বা প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত বা মনোনীত তিনজন এবং পাশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে নিয়ে ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করতে হবে। মহানগর এলাকার জন্য ৫০ হাজার, জেলা সদর ৩০ হাজার, উপজেলা সদর ও পৌরসভা ২৫ হাজার এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৫ হাজার টাকার নিজস্ব তহবিল থাকবে হবে। একই পরিমাণ অর্থ নিবন্ধনের জন্য জমা দিতে হবে। পাঠ্যক্রমবহির্ভূত কোনো বই পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হলে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের অনুমতি নিতে হবে। এ ব্যাপারে কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক সমিতির চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমান বলেন, নিবন্ধনের যেসব শর্ত দেয়া হয়েছে তা মেনে নিবন্ধন নেয়া সম্ভব না। নিবন্ধন নীতিমালায় আরও সহজ করার দাবি জানান তিনি।

No comments

Powered by Blogger.