'রাজপুত্রের' মৃত্যু কুঁড়ে ঘরে!

উড়িষ্যার ব্রিটিশ রাজ-যুগের 'প্রিন্সলি স্টেটের' সবশেষ রাজকুমার, ব্রাজরাজ শত্রিয়া বীরবর চামুপাতি সিং মহাপাত্রা
'ফুর্তিবাজ রাজকুমার' নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু সময় যে সব সময় এক থাকে না। ফুর্তিতে অর্থ-কড়ি লুটিয়ে কাঙ্গালে পরিণত হন ভারতের উড়িষ্যার ব্রিটিশ রাজ-যুগের 'প্রিন্সলি স্টেটের' সবশেষ রাজকুমার, ব্রাজরাজ শত্রিয়া বীরবর চামুপাতি সিং মহাপাত্রা। তার সহায় সম্বল বলতে কিছু ছিল না। গ্রামবাসীদের দয়া-দাক্ষিণ্যে বেঁচে ছিলেন। গত সোমবার (৩০ নভেম্বর) একটি জরাজীর্ণ কুঁড়ে ঘরে শেষ নিঃশ্বাস ফেলেন তিনি। তার মৃত্যুর খবর সোমবার প্রকাশ করেছে পাকিস্তানের স্থানীয় পত্রিকা দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন। ১৯৮৭ সাল থেকে উড়িষ্যার তিগিরিয়া গ্রামে জরাজীর্ণ এক ঘরেই দিনযাপন করছিলেন তিনি। অথচ এক সময় এই তিগিরিয়ার রাজা ছিলেন তিনি। থাকতেন চোখ ধাঁধানো এক প্রাসাদে। হাতিশালে হাতি আর ঘোড়াশালে ঘোড়া ছিল। দল-বল নিয়ে শিকারে বের হতেন হাতিতে চড়ে। আর তিনি যখন ফুর্তির মেজাজে থাকতেন তখন প্রতিযোগীতায় নামতেন ২৫টি মদেরা গাড়ি নিয়ে।
কিন্তু ১৯৪৭ সালে ভারত ব্রিটিশ-শাসন মুক্ত হলে মহাপাত্রার জীবন-যাপনে আমূল পরিবর্তন আসে। তিনি তার রাজ্যের শুল্ক আয় হারান। তারপরও রাজ্য সরকারের কাছ থেকে তিনি বছরে ১৩০ পাউন্ড পেতেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তা খুব কম ছিল বলে ১৯৬০ সালে তিনি তার প্রাসাদ ৯০০ পাউন্ডে বিক্রি করেন। এরপর তার অবস্থা আরো করুণ হয়ে যায়। সর্বশেষ রাজবংশের অধিকার প্রত্যাহার করে নেন প্রধামন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি। এর ফলে মহাপাত্রা বছরে যে ১৩০ পাউন্ড পেতেন তাও বন্ধ হয়ে যায়। সবশেষ একটি সাবেক দাতব্য সংস্থা তাকে সাহায্য করত। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেই সামান্য অর্থই ছিল ভরসা। তবে গ্রামবাসীরা তাকে অনেক সাহায্য করেছেন। তারাই প্রতিদিন রাজপুত্রের খাবার-দাবারের ব্যবস্থা করতেন।

No comments

Powered by Blogger.