আলোচনায় সমশের

রাজনীতি থেকে সমশের মবিন চৌধুরীর আকস্মিক বিদায় রাজনীতির ময়দানে আলোচনার ঝড় তুলেছে। তবে বিএনপির তুলনায় এ ঘটনা বেশি আলোড়ন তুলেছে ক্ষমতাসীন মহলে। বৃহস্পতিবার সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগের ঘোষণার পরপরই আওয়ামী লীগ একে স্বাগত জানায়। গতকাল এ নিয়ে কথা বলেছেন আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা। আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সমশের মবিনের রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণা বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির হতাশাব্যঞ্জক বহিঃপ্রকাশ। নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান বলেছেন, আরও অনেকেই বিএনপি ছাড়বে।
যদিও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, রাজনীতি থেকে সমশের মবিন চৌধুরীর বিদায় বিএনপিতে কোন প্রভাব ফেলবে না। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, অদৃশ্যমান কোন ঘটনা থাকলে সমশের মবিনকে ফেরানো সম্ভব নয়। দলটির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম বলেছেন, তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিবিদ নন। গতকাল অবশ্য সমশের মবিন চৌধুরী নিজে গণমাধ্যমকে কিছু বলেননি।
সমশের মবিন চৌধুরী হঠাৎ করে কেন রাজনীতি ছাড়লেন তা নিয়ে রাজনীতির অন্দরমহলে নানা আলোচনা রয়েছে। সর্বশেষ কয়েক মাসে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তার এক ধরনের শীতল সম্পর্ক বিরাজ করছিল। কারামুক্তির পর থেকে তিনি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেননি। তাছাড়া, বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের পরিকল্পনায় তিনি ছিলেন কি-না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে বিএনপির ভেতরে সবচেয়ে বেশি আলোচিত হচ্ছে সমশের মবিনের অবসর ঘোষণার সময় নিয়ে। তিনি এমন এক সময়ে অবসরে গেলেন যখন বিএনপির ওপর ক্ষমতাসীনদের চাপ বাড়ছে। যখন বিএনপি চেয়ারপারসন দেশের বাইরে অবস্থান করছেন। বিএনপি নেতারা দীর্ঘদিন থেকেই অভিযোগ করে আসছেন, তাদের দল ভাঙার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্রের অভিযোগের সঙ্গে দল ত্যাগ বা রাজনীতি ত্যাগের সম্পর্ক আছে কি-না তা স্পষ্ট নয়। যদিও বাংলাদেশে রাজনীতি থেকে অবসরে যাওয়ার ঘটনা একেবারেই কম।
অদৃশ্যমান কোন ঘটনা থাকলে ফেরানো সম্ভব নয়: গয়েশ্বর
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, সমশের মবিন চৌধুরীর রাজনীতি থেকে অবসরের সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে দেখছি না। কারও রাজনীতি করার অধিকার যেমন থাকে তেমনি না করার অধিকারও থাকে। যদি দলেরও ওপর তার কোন মান-অভিমান থাকে তাহলে দলের দায়িত্ব হবে সেই অভিমান ভাঙানো। আর যদি অদৃশ্যমান কোন ঘটনা থাকে তাহলে দলের পক্ষে সেই অভিমান ভাঙানো সম্ভব নয়। দলের কঠিন পরিস্থিতিতে এই কূটনীতিক নেতার  অবসরের সিদ্ধান্তে কিছুটা বিস্ময় প্রকাশ করে বিএনপির নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই নেতা বলেন, এই মুহূর্তে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশে নেই। এই অবস্থায় দলের কারও সঙ্গে আলোচনা না করে তার অবসরের সিদ্ধান্তে আমি কিছুটা বিস্মিত হয়েছি। বিএনপি তাকে ফেরানোর চেষ্টা করবে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে গয়েশ্বর রায় বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন তার  অবসরের এই সিদ্ধান্তকে কিভাবে নেন- সেটাই এখন বড় বিষয়। দলের চেয়ারপারসন দেশে ফিরলে তার  সঙ্গে আলোচনা করে সমশের মবিনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তিনি বলেন, বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা-হামলা, নির্যাতনসহ সরকারের অনেক ধরনের দৃশ্যমান চাপ রয়েছে। তবে সমশের মবিনের এই সিদ্ধান্তে আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুবুল আলম হানিফের অভিনন্দনকে ভাল লক্ষণ নয় বলে মনে করেন তিনি।
তিনি তৃণমূল থেকে উঠে আসা রাজনীতিক নন: নজরুল
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, সমশের মবিন চৌধুরী আমাদের মতো তৃণমূল উঠে আসা রাজনীতিক নন। তিনি আগে সরকারি চাকরি করতেন। মাত্র কয়েক বছর হলো রাজনীতিতে এসেছিলেন তিনি। তাই তার পক্ষে  মামলা-হামলা, জেল-জুলুমসহ মানসিক ও রাজনৈতিক চাপ নেয়া সম্ভব হয়নি। বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, সমশের মবিন চৌধুরী চিঠি লিখেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে। এই মুহূর্তে তিনি দেশে নেই। চেয়ারপারসন দেশে ফিরলে তার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এছাড়া, বিএনপি চেয়ারপারসন তার পদত্যাগপত্র গ্রহণ করেন কিনা- সেটা একটা বিষয় রয়েছে। দলের এই কঠিন পরিস্থিতিতে অবসরের সিদ্ধান্তের বিষয়ে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের অনুপস্থিতিতে তার এই সিদ্ধান্তকে অনেকে অনেক দৃষ্টিতে দেখছে। তবে তিনি অসুস্থতার কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়া, দীর্ঘ পাঁচ মাস ধরে তাকে পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে না। এটা নিয়েও এক ধরনের মানসিক চাপের মধ্যে ছিলেন তিনি।
নেতিবাচক রাজনীতির বহিঃপ্রকাশ: ওবায়দুল কাদের
বিএনপি থেকে সমশের মবিন চৌধুরীর পদত্যাগ ও রাজনীতি ছাড়ার ঘোষণাকে বিএনপির ‘নেতিবাচক রাজনীতির হতাশাব্যঞ্জক বহিঃপ্রকাশ’ বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। সমশের মবিনের পদত্যাগকে বিএনপির ‘অভ্যন্তরীণ কলহের করুণ পরিণতি’ বলেও মনে করেন তিনি। গতকাল সকালে নোয়াখালীর চৌমুহনীতে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ বিষয়ে কথা বললে উপরোক্ত মন্তব্য করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, সমশের মবিন চৌধুরী একজন সাবেক কূটনীতিক হিসেবে বিএনপির পলিসি নিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতায় ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন। বিদেশীদের কাছে নালিশ জানানোর বিষয়টা তিনিই পালন করতেন। তিনিও বিএনপিতে টিকতে পারলেন না। তিনি বলেন, আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে, সমশের মবিন চৌধুরীর এই পদত্যাগ বিএনপির নেতিবাচক রাজনীতির হতাশাব্যঞ্জক বহিঃপ্রকাশ। এর আগে এলাকার সড়ক সংস্কার কাজের অগ্রগতি ঘুরে দেখেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। পরে তিনি স্থানীয়  সরকারি কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশ নেন। প্রশাসনের কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এসময় তার সঙ্গে ছিলেন।
বিএনপি ভেঙে খান খান হয়ে যাবে: হানিফ
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দল ভাঙার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না বলে দাবি করেছেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ। তিনি আরও বলেছেন, বিএনপিতে ভাঙন শুরু হয়েছে। এই ভাঙনে  বিএনপি খান খান হয়ে যাবে। গতকাল সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের সহ-সম্পাদকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে আয়োজিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি। জেল হত্যা দিবস উপলক্ষে আগামী ২রা নভেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত জনসভাকে সফল করার লক্ষ্যে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে আওয়ামী লীগ। হানিফ বলেন, আওয়ামী লীগ দল ভাঙার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নয়। দল ভাঙার রাজনীতি করতেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। আওয়ামী লীগের এ ধরনের কোন তৎপরতা নেই। বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের দুর্নীতি, সন্ত্রাসের কারণে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে হতাশা এসেছে। এই হতাশা থেকেই অনেকে পদত্যাগ করছে। তিনি বলেন, বিএনপির সন্ত্রাসীমূলক কর্মকাণ্ড কোন বিবেকমান মানুষ মেনে নিতে পারে না। আমরা বিশ্বাস করি বিএনপিতে এখনও যারা স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করেন তারা বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসবেন। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগের এই শীর্ষ নেতা বলেন, আপনি আপনার পুত্র তারেক রহমানকে নিয়ে লন্ডনে বসে সরকারের বিরুদ্ধে যতোই ষড়যন্ত্র করেন না কেন এতে সরকারের কিছুই করতে পারবেন না। বরং আপনার ষড়যন্ত্র যতো গভীর হবে আপনার দলও ততোই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দলে যে ভাঙন দেখা দিয়েছে তাতে বিএনপি ভেঙে খান খান হয়ে যাবে। আপনি সেই অপেক্ষায় থাকুন। মতবিনিময় সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক ড. আব্দুর রাজ্জাক, দলের দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এস এম কামাল, এনামুল হক শামীম, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সুজিৎ রায় নন্দী, সহ-সম্পাদক শাহে আলম ও ইসহাক আলী খান পান্না প্রমুখ।
আরও অনেকেই বিএনপি ছাড়বে: শাহজাহান খান
শুধু শমসের মবিন চৌধুরী নয়, আরও অনেকেই বিএনপি ছেড়ে চলে যাবেন বলে মন্তব্য করেছেন নৌ-পরিবহন মন্ত্রী শাহজাহান খান। গতকাল রাজধানীর পোস্তগোলা শ্মশানঘাট থেকে ঢাকা নদী বন্দর পর্যন্ত আড়াই কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ পরিদর্শন শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এমন কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, বিএনপি একটি আদর্শহীন দল। যার আদর্শ নেই, তার কোন গুণাবলীও নেই। বীজগণিতের মতো রাজনীতির অংক মেলাতেও সূত্র লাগে। কিন্তু বিএনপির কোন সূত্র নেই। শাহজাহান খান আরও বলেন, তারেক রহমান দেশে যে রাজনীতি চালু করেছেন, কোন ভদ্রলোক তাদের সঙ্গে যাবেন না। যারা যান, তাদের মধ্যে কোন মানবিক মূল্যবোধ নেই। তিনি  বলেন, যারা বিএনপি ছেড়ে যাচ্ছেন, তারা বুঝতে পেরেছেন বিএনপির কোন ভবিষ্য?ৎ নেই। তাই তারা বিএনপি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। শুধু সমশের মবিন নয় অচিরেই বিএনপি থেকে আরও অনেকে চলে যাবেন। আর কারা বিএনপি ছেড়ে যাবেন সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সময়মতোই এই খবর পাবেন। এই যে মওদুদ সাহেব (ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ) তিনি এখন কোথায়? নির্মাণকাজের বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী বলেন, পোস্তগোলা শ্মশানঘাটে ৬ তলাবিশিষ্ট অত্যাধুনিক টার্মিনাল করা হবে। সদরঘাটে মানুষ ও লঞ্চের যে চাপ তাতে স্থান সংকুলান হয় না। তাই এখানে টার্মিনাল  তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশ্বব্যাংক এ প্রকল্পে কাজ করার আগ্রহ দেখিয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে এ কাজ শেষ করা হবে। নৌ-মন্ত্রীর সঙ্গে এসময় মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ভরসা নেই, তাই অনেকেই বিএনপিকে গুডবাই জানাবে: হাছান মাহমুদ
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ও সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, বিএনপির প্রতি নেতাদের ভরসা নেই, তাই আরও অনেক নেতাই বিএনপিকে গুডবাই জানাবেন। দলের ভাইস চেয়ারম্যান সমশের মবিন চৌধুরী এ প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। গতকাল সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাব সম্মুখে ‘বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট’ আয়োজিত মানববন্ধনে এ কথা বলেন তিনি। হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির রাজনীতিতে জনগণ ভরসা করে না। এজন্য বিএনপি থেকে অনেকে বেরিয়ে আসছেন। সমশের মবিন নিজেই বলেছেন, বিএনপির অনেক কর্মকাণ্ড তার পছন্দ নয়। বর্তমান বিএনপি তার আগের আদর্শে নেই। বিএনপির সমালোচনা করে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি এখন ভাড়াটে খুনির দলে পরিণত হয়েছে। দলটি বর্তমানে আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে পরিচালিত হয়ে পেশাদার খুনি-সন্ত্রাসীদের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এজন্যই সমশের মবিনের মতো নেতারা দল থেকে পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, লন্ডনে বসে খালেদা জিয়া বাংলাদেশে কিভাবে বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করা যায় এ বিষয়ে ষড়যন্ত্র করছেন। কিন্তু তার এ মিশন সফল হবে না।  ষড়যন্ত্রকারীদের বিষদাঁত ভেঙে দেয়া হবে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রতিদ্বন্দ্বী হবে প্রগতিশীলরা। তাদের কোন প্রতিপক্ষ থাকবে না। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অরুণ সরকার রানার নেতৃত্বে মানববন্ধনে আরও বক্তব্য রাখেন- সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সামছুল হক টুকু, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সহ-সম্পাদক বলরাম পোদ্দার, এমএ করিম প্রমুখ।
সমশের মবিনের অবসরে দলের ক্ষতি হবে না: ফখরুল
সিলেট অফিস জানায়, সমশের মবিন চৌধুরী পদত্যাগ করেননি, তিনি অবসরে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, সমশের মবিনের অবসরে বিএনপি ভাঙার গুঞ্জন অমূলক। তার অবসর গ্রহণে দল ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তিনি গতকাল সিলেট সফরকালে সাংবাদিকদের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত মতবিনিময়কালে এসব কথা বলেন। সিলেট নগরীর দরগাহ গেইটস্থ হোটেল হলিসাইডে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘সমশের মবিন চৌধুরী অবসরে যাওয়ায় আওয়ামী লীগ যে বক্তব্য দিয়েছে এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। দুই বিদেশী হত্যার ব্যাপারে বিএনপির কোন সম্পৃক্ততা নেই। প্রধানমন্ত্রীসহ আওয়ামী লীগ নেতারা বিএনপিকে জড়িয়ে যে বক্তব্য দিচ্ছেন তা ভিত্তিহীন।’ আর তদন্ত শেষ করার আগেই এ ধরনের মন্তব্য করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন তিনি। মাজার জিয়ারতে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানযোগে সিলেটে আসেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। এ সময় ওসমানী বিমানবন্দরে তাকে নেতাকর্মীরা ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। এরপর তিনি ওলিকুল শিরোমণি হজরত শাহজালাল (রহ.) দরগাস্থ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। নামাজের পর হজরত শাহজালাল (রহ.) মাজার জিয়ারত করেন তিনি। পরে চলে যান হজরত শাহপরান (রহ.) মাজারে। সেখানে মাজার জিয়ারতের পর বিকাল পৌনে ৩টায় ফেরেন হোটেল হলিসাইডে। সেখানে তিনি প্রথমেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বক্তব্যের শুরুতেই বলেন, ‘বিএনপি তিনবার ক্ষমতায় গিয়েছে। সফলভাবে রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। বাংলাদেশের জনগণ বিএনপিকে ভালোবাসে। ৩৫ বছর বিএনপি অনেক ঘাত ও প্রতিঘাতের শিকার হয়েছে। চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের শিকার হয়েছে। কিন্তু বিএনপির কোন ক্ষতি হয়নি। বিএনপি থেকে সমশের মবিন চৌধুরী অবসরে যাওয়ায় তিনি যে দায়িত্বগুলো পালন করতেন এ দায়িত্ব পালনের অনেক লোক বিএনপিতে আছে। বিএনপিতে অনেক কূটনীতিক রয়েছে। তাই দলের কার্যক্রমে প্রভাব পড়ার কোন সম্ভাবনা নেই বলেও জানান তিনি। এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি হত্যা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। বিএনপিতে কোন কোন্দল নেই। দুই বিদেশী হত্যার পর বিএনপি নিন্দা জানিয়েছে। দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বিশ্বদরবারে দেশের ইমেজ নষ্ট হয়েছে। দেশের এই ক্লান্তিকালে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে সবাই মিলে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করা উচিত বলে বিএনপি মনে করে।’ তিনি বলেন, ‘সমশের মবিনের দল ও রাজনীতি থেকে অবসরের পত্র এখনও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কাছে যায়নি। তিনি দেশে ফিরে আসার পর তার অবসরপত্র চেয়ারপারসনের কাছে দেয়া হবে। তবে বিষয়টি চেয়ারপারসনকে অবগত করা হয়েছে বলে জানান তিনি।’ সিলেট আসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি অসুস্থ থাকাকালে শাহজালালের মাজার জিয়ারতের মানত করেছিলাম। তাই আজ সিলেট এসেছি। এটা কোন দলীয় সফর নয়।’ এদিকে, সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর মধ্যাহ্নভোজে অংশ নেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। পরে তিনি সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সঙ্গে একান্তে কথা বলেন। এ সময় সিলেট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নেতারা ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে দলের সাংগঠনিক অবস্থা জানান। তারা বলেন, সিলেট জেলা বিএনপি শুধু সদর উপজেলা ছাড়া সব উপজেলায় সফল সম্মেলনের মাধ্যমে কাউন্সিল শেষ করেছে। সুতরাং দলের সাংগঠনিক গতি আনতে জেলা কাউন্সিল জরুরি হয়ে পড়েছে। নেতাদের কাছ থেকে বক্তব্য শুনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ মুহূর্তে নেতাকর্মীদের ধৈর্য ধারণ করে দলকে শক্তিশালী করার তাগিদ দেন। বলেন, এখন সময় দল গোছানোর। ঐক্যবদ্ধভাবে দল গোছাতে হবে। আর ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের দলের দায়িত্ব দিতে হবে। তিনি বলেন, সিলেট জেলা বিএনপির কাউন্সিল করতে হবে। এটি দ্রুত যাতে করা হয় সে ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কমিটি আলোচনা করবে। এরপর সময় তারিখ জানাবে। ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি এমএ হক, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নুরুল হক, যুগ্ম আহ্বায়ক বিএনপি নেতা দিলদার হোসেন সেলিম, অ্যাডভোকেট আব্দুল গাফ্‌ফার, আব্দুর রাজ্জাক, আবুল কাহের শামীম ও আলী আহমদ। এছাড়া ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আব্দুল আহাদ খান জামালও উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠক প্রসঙ্গে সিলেট জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আলী আহমদ জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দল গোছানোর তাগিদ দিয়েছেন। তার নির্দেশনা মতোই আমরা পরবর্তীতে দলের কার্যক্রম পরিচালনা করবো।’ জেলার নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর মহানগর নেতাদের সঙ্গেও একান্তে বৈঠক করেন ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব। এ সময় মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম দলের সাংগঠনিক অবস্থান তুলে ধরে বক্তব্য রাখেন। নেতারা জানান, ইতিমধ্যে মহানগর কমিটির নতুন কমিটি হয়েছে। এখন প্রয়োজন কেবল মহানগর সম্মেলন। ওই বৈঠকেও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দ্রুত মহানগরের সম্মেলন করা হবে বলে নেতাদের আশ্বস্ত করেন। এ সময়ও তিনি বলেন, সিলেটে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে হবে। নতুনরাই কাঁধে তুলে নিতে হবে দলের দায়িত্ব। বিএনপি একটি বিশাল দল। এখানে নেতার অভাব নেই। সুতরাং দলের জন্য সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন মহানগরের আহ্বায়ক ডা. শাহরিয়ার হোসেন, সদস্য সচিব বদরুজ্জামান সেলিম, অধ্যাপক মকসুদ আলী, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও প্যানেল মেয়র রেজাউল হাসান কয়েছ লোদী, সাবেক অর্থ সম্পাদক ফরহাদ চৌধুরী শামীম, অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান, আজমল বক্স সাদেক, এমদাদ চৌধুরী, হুমায়ুন কবির শাহীন, ফখরুল ইসলাম ফারুক, মহবুব চৌধুরী, মহিলা দল নেত্রী কাউন্সিলর রুকশানা বেগম শাহনাজ, ছামিয়া চৌধুরী, কাউন্সিলর আব্দুল তৌফিক হাদী প্রমুখ। বৈঠক থেকে বেরিয়ে এসে সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী মানবজমিনকে জানান, মহাসচিব দল গোছানোর তাগিদ দিয়েছেন। খুব শিগগিরই সম্মেলন করা হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন। এদিকে, মির্জা ফখরুল হোটেলে অবস্থানকালে তার সঙ্গে দেখা করেন সাবেক এমপি কলিম উদ্দিন মিলন, ছাতক পৌরসভার চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিজানসহ সিনিয়র নেতারা।
ছাত্রদলের বিদ্রোহীদের সঙ্গে বৈঠক: হোটেলে অবস্থানকালে ছাত্রদলের বিদ্রোহী অংশের নেতারা হোটেলে সামনে জড়ো হন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ছাত্রদল নেতা রেজাউল করিম নাচন, ভিপি মাহবুবুল হক চৌধুরী, মিফতা সিদ্দিকী, শাকিল মুর্শেদ, এখলাছুর রহমান মুন্নাসহ অর্ধশতাধিক নেতা। এ সময় তারা মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করতে স্লোগান দেন। মহাসচিব তাদের সঙ্গে দেখা করেন। উপস্থিত ছাত্রদল নেতারা জানান, দলের মহাসচিব সিলেটে এসেছেন। কিন্তু ছাত্রদলের জেলা কিংবা মহানগরের কোন নেতা এখানে নেই। দলের কেউ এলে তারা আসে না। কিন্তু কোন বিশেষ ব্যক্তি সিলেটে এলে তার সঙ্গে দেখা করেন। দ্রুত সিলেট জেলা ও মহানগর ছাত্রদলের কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি ঘোষণার দাবি জানান বিদ্রোহী নেতারা। এ সময় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দলের চেয়ারপারসন বিদেশে রয়েছেন। তিনি ফিরে এলে এসব ব্যাপারে আলোচনা করা হবে। এ মুহূর্তে দলকে শক্তিশালী করতে সবাইকে এক হয়ে কাজ করার নির্দেশ দেন তিনি। মির্জা ফখরুল ইসলাম সিলেট সফরকালে সঙ্গে তার স্ত্রীও ছিলেন। বিকাল ৪টায় বিমানের অপর ফ্লাইটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.