প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০ মিনিট চান মেডিকেল ভর্তি-ইচ্ছুকরা

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত চিকিৎসক, প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন ছাত্র মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। আজ শুক্রবার প্রশ্ন ফাঁস বিষয়ক গণশুনানিতে এই অভিযোগ তোলেন ভর্তি-ইচ্ছুক শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা। তাঁরা প্রমাণ উপস্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে দশ মিনিট সময় চান।
গণশুনানির শুরুতে গণতদন্ত কমিটির আহ্বায়ক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘শুরু থেকে কর্তৃপক্ষ প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে এবং দমন-পীড়নের পথ বেছে নিয়েছে। এতে করে এই ঘটনার সঙ্গে উচ্চপদস্থ কেউ জড়িত কি না প্রশ্ন ওঠে। শিক্ষার্থীরা আমরণ অনশনে বসায় তাদের নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়। সে কারণে সংবিধান প্রদত্ত ক্ষমতা বলে নাগরিকদের মধ্য থেকে সত্যাসত্য যাচাইয়ের উদ্যোগ নেওয়া হয়।’
আনু মুহাম্মদ আরও বলেন, গণশুনানিতে অংশ নিতে তাঁরা স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও র‍্যাব, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ), বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি), ঢাকা ও সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। আগামী ৫ তারিখ পর্যন্ত এই সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা যখন যেখানে বসতে চান সেখানেই কমিটি বসতে রাজি আছে।
গণতদন্ত কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আহমেদ কামাল, চিকিৎসক শাকিল আক্তার, সাংবাদিক আবু সাঈদ খান, শিক্ষাবিদ এ এন রাশেদা, ব্যারিস্টার সারা হোসেন ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, প্রযুক্তিবিদ ফিদা হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মো. নুরুল হুদা বলেন, তিনি এ ধরনের কোনো আমন্ত্রণ পাননি। পেলে আলোচনায় বসবেন কি না জানতে চাইলে বলেন, অংশগ্রহণ করার আইনগত বাধা থাকতে পারে।
শুনানিতে টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন কিনেছে এমন একজন শিক্ষার্থীর কথোপকথন শোনান একজন শিক্ষার্থী। এ ছাড়াও তাঁরা পুলিশি হামলার সমালোচনা করেন। টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পেয়েছে এমন একজন শিক্ষার্থী আজকের শুনানিতে হাজির ছিল। তার পক্ষ থেকে একজন বলেন, ছাত্রটি ছয় লাখ টাকা দিয়ে প্রশ্ন কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়। চুক্তির প্রমাণ হিসেবে যারা প্রশ্ন পাইয়ে দিয়েছে তাদের কাছে মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল ও প্রবেশপত্রের অনুলিপি জমা রাখতে হয়েছিল। ভর্তির সুযোগ পাওয়ার পর তারা আট লাখ টাকা দাবি করছে এবং কাগজপত্র ফেরত দিচ্ছে না।
আশরাফ কামাল নামের একজন অভিভাবক শুনানিতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একজন কর্মকর্তার বরাত দিয়ে বলেন, ওই কর্মকর্তার মেয়ে রংপুর থেকে এই বছর পরীক্ষা দিয়েছিল। পাস করতে পারেনি। ওই কর্মকর্তাকে কোচিং সেন্টারের সঙ্গে যুক্ত কয়েকজন চিকিৎসক ১০ লাখ টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পাইয়ে দেওয়ার কথা বলেছিলেন। যারা টাকা দিয়েছে তাদের পরীক্ষার আগের দিন রাতে একটি বাসায় রাখা হয়। সেই বাসা থেকেই পরীক্ষা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। ঢাকায় একজন চিকিৎসকসহ র‍্যাবের হাতে যে চক্রটি ধরা পড়েছিল তাদের প্রতিনিধিরা পরীক্ষার আগের রাত পর্যন্ত তৎপর ছিল বলে অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক। সাক্ষ্যপ্রমাণ থাকা স্বত্বেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তর অভিযোগ অস্বীকার করতে থাকা নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা।
মনিরুল আলম ভূঁইয়া নামের একজন অভিভাবক বলেন, ‘অধিদপ্তর প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করেছে। পরীক্ষা আগিয়ে ঈদের আগে নিয়ে আসা হয়েছে, যেন ঈদের ছুটির কারণে কেউ কোনো আন্দোলন করতে না পারে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দয়া করে আমাদের ১০টা মিনিট সময় দিন। আমরা আপনার কাছে সব প্রমাণ দেব।’
শুনানিতে এক শিক্ষার্থী বলেন, পরীক্ষার দিন সকাল বেলা একটি ফেসবুক পেজে পরীক্ষার প্রশ্ন পাওয়া যায়। ফেসবুক আইডিটি তিনি তদন্ত কমিটিকে জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন। ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, কোনো প্রভাবশালীর ছত্র ছায়ায় থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।
বরিশাল থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে এমন এক ছাত্র টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন পেয়েছে এমন দুজন শিক্ষার্থীর নাম জানায়। সে আরও বলে, ‘স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন মন্ত্রণালয় চালাতে গেলে মাঝে মাঝে ভুল-ত্রুটি হয়। এই যদি হয় ভুল-ত্রুটির নমুনা তাহলে আমরা কোথায় যাব? তাঁর কারণে ১২ বছর লেখাপড়ার পর আমি এখন ছাত্রত্বহীন অবস্থায় আছি। আমি কি করব?’
শুনানিতে এক আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের এক শিক্ষার্থীর মা কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। তিনি বলছিলেন, ‘আমার মেয়ে রাত জেগে পড়াশোনা করত। আমি প্রাণীবিদ্যা পারি না। মেয়েকে উৎসাহ দিতেও আমিও প্রাণীবিদ্যা পড়তাম ওর সঙ্গে। প্রশ্ন ফাঁস যারা করে তাদের ফাঁসি হওয়া উচিত।’

No comments

Powered by Blogger.