তারুণ্যের বিজয়, শুভবুদ্ধির বিজয় by সাজেদুল হক

বাংলাদেশের তরুণদের গৌরবোজ্জ্বল অতীত ছিল। বৃটিশবিরোধী আন্দোলনে এ দেশের তরুণরা অসীম সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিল। ইতিহাস সাক্ষী, কিভাবে বাঙালি তরুণরা স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপ দেয়ার জন্য জাতীয় নেতৃত্বের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিল। মহান মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ত্যাগ এই তরুণরাই স্বীকার করেছিল। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও মূল চালিকাশক্তি ছিল তারুণ্য। বলা বাহুল্য, এসব আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। পৃথিবীর আর কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এমন গৌরবদীপ্ত অধ্যায় আছে কি-না তা বলা মুশকিল। তবে গণতান্ত্রিক জমানায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর চেহারা ক্রমশ ম্লান হতে শুরু করে। ডাকসু নির্বাচন বন্ধ হয়ে যায়। অন্যান্য ছাত্র সংসদ নির্বাচনও বন্ধ রয়েছে বহুদিন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নেতৃত্ব সরকারের স্বার্থরক্ষায় নিজেদের ব্যস্ত রেখেছেন। এসব বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণমানুষের পক্ষে আর কোন আন্দোলন হয়নি।
সাম্প্রতিক অতীতে বাংলাদেশে প্রাইভেট উচ্চ শিক্ষার দ্রুত বিকাশ হয়েছে। ৫ লাখের কাছাকাছি শিক্ষার্থী এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এখন পড়ালেখা করছে। সাধারণভাবে ধারণা করা হতো, সমাজের উচ্চবিত্তের ছেলেমেয়েরাই এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করে। কিন্তু এক অনুসন্ধানে দেখা যায়, এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৫০ ভাগের বেশি শিক্ষার্থীই নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের। মূলত মধ্যবিত্তরাই এখন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তবুও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের কোন বিষয়ে আন্দোলনের সামর্থ্য নিয়ে সংশয় ছিল।
প্রাইভেট উচ্চ শিক্ষায় সাড়ে সাত ভাগ ভ্যাট আরোপের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তিন মাসের বেশি সময় ধরে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। তবে তাদের সে আন্দোলন খুব কম লোকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পেরেছিল। গত বুধবার এ আন্দোলনটি নতুন মোড় নেয়। ওইদিন রামপুরায় ইস্ট-ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরদিন সব কয়টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক যোগে রাস্তায় নেমে আসে। তারা পুরো রাজধানী অচল করে দেয়। রোববারও একই ঘটনা ঘটে। এ আন্দোলনের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য পর্যবেক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে-
১.আন্দোলন ছিল অহিংস। কোথায়ও কোন গাড়ি ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেনি। ২. আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছে। আন্দোলনে তারা বড় কোন বাধা দেয়নি। ৩. অহিংস আন্দোলন সত্ত্বেও জনগণকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। কিলোমিটারের পর কিলোমিটার তাদের পায়ে হাঁটতে হয়েছে।
সোমবারও যথারীতি শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ-অবরোধ চলছিল। তবে এরই মধ্যে মন্ত্রিসভার বৈঠকে নীতিগত সিদ্ধান্তের খবর এসেছে যে,  উচ্চ শিক্ষায় টিউশন ফির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করা হবে। এ সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মন্ত্রিসভা অবশ্যই ধন্যবাদ পেতে পারে। সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর বাংলাদেশে কোন আন্দোলন সফল হলো। একই সঙ্গে সরকারও খুব দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে পেরেছে। ভ্যাট প্রত্যাহারের এ সিদ্ধান্ত একই সঙ্গে তারুণ্যের বিজয় এবং সরকারের শুভবুদ্ধির বিজয়।

No comments

Powered by Blogger.