পুলিশের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করতো শীর্ষ সন্ত্রাসী তুষার! by নুরুজ্জামান লাবু

হাতে তার অত্যাধুনিক অস্ত্র। মাথায় ১৯ মামলা। এর মধ্যে খুনের মামলা ৫টি। আছে অস্ত্র আইনেও একাধিক মামলা। খিলগাঁও-রামপুরা এলাকার ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল সে। সর্বশেষ যেই অস্ত্র সে ব্যবহার করতো সেটি আর দশটি সাধারণ অস্ত্র নয়, এই পিস্তল সাধারণত ব্যবহার করে থাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। প্রতিপক্ষ গ্রুপের কাছে হিরো সাজার জন্য লাখ টাকা ব্যয় করে এই অস্ত্র কিনেছিল সে। অত্যাধুনিক পিস্তল বহনের জন্য প্রতিপক্ষরা তাকে সমীহ করতো। আড়াই বছর জেল খাটার পর বছর পাঁচেক ধরে আত্মগোপনে ছিল। আড়াল থেকেই খিলগাঁও-রামপুরা এলাকার সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতো। অনেক দিন ধরেই তাকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালিয়ে আসছিল র‌্যাব-পুলিশের একাধিক দল। অবশেষে অত্যাধুনিক সেই অস্ত্রসহ ডিবি পুলিশের হাতে ধরা পড়েছে সে। তার নাম ইব্রাহীম খান ওরফে তুষার (২৬)। গোয়েন্দা পুলিশের ধারণা, তার কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোন সদস্যের। খোয়া যাওয়া অস্ত্রটি কয়েক হাত বদল হয়ে তুষারের কাছে এসেছে। গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে পুলিশের অস্ত্রাগারের তালিকার সঙ্গে উদ্ধারকৃত পিস্তলের নম্বর মিলিয়ে দেখার প্রক্রিয়া চলছে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইকবাল হোছাইন বলেন, তুষারকে গ্রেপ্তারের জন্য বহুদিন ধরে চেষ্টা চলছিল। তাকে গ্রেপ্তার করায় রামপুরা-খিলগাঁও এলাকার অপরাধ অনেক কমে যাবে। সে মূলত রামপুরা-খিলগাঁও এলাকার ত্রাস ছিল। ইকবাল হোছাইন জানান, আমাদের কাছে তথ্য ছিল তুষারের কাছে ৪-৫টি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে। একটি উদ্ধার হয়েছে। বাকিগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রটি অত্যাধুনিক ও আগে এটি পুলিশ ব্যবহার করতো। এই অস্ত্র কোন পুলিশ সদস্যের খোয়া যাওয়া অস্ত্র কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রামপুরা এলাকার ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী তুষার। তার বিরুদ্ধে ৫টি হত্যা মামলা রয়েছে। অস্ত্র মামলা রয়েছে ৮টি। এ ছাড়া ছিনতাই-চাঁদাবাজির অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য। তুষারের মামা কাইল্যা পলাশও রামপুরা-খিলগাঁও এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী। মূলত মামার হাত ধরেই অপরাধ জগতে পদচারণা শুরু হয় তুষারের। অষ্টম শ্রেণীতে পড়ার সময় ২০০৪ সালে প্রথম অস্ত্র হাতে তুলে নেয় সে। মামা কাইল্যা পলাশের তখন এলাকায় ব্যাপক প্রভাব। মামার হয়ে কাজ করতে থাকে সে। ছিনতাই চাঁদাবাজি তার নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। ওই বছরই কুঞ্জবনের প্রতিপক্ষ দীলিপকে প্রথম সে গুলি করে হত্যা করে। পরের বছর ২০০৫ সালে একজনকে, ২০০৬ সালে একজনকে, ২০০৯ সালে একজনকে ও সর্বশেষ ২০১৩ সালে একজনকে হত্যা করে সে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, তুষার ছিল দুঃসাহসী সন্ত্রাসী। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সে নিজে উপস্থিত থেকে অস্ত্র চালিয়েছে। সবসময় নিজের কাছে অস্ত্র রাখতো সে। গত মার্চ মাসে প্রতিপক্ষ গ্রুপকে ভয় দেখাতে রামপুরার  প্রকাশ্যে লোকজনের সামনে ১০-১২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। যাতে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কেউ তার কাজে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এসময় তার সঙ্গে আরও অন্তত ২০-২২ জন শিষ্যও ছিল।
পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর তুষার জানায়, বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সে। তার নানা ইউনূস আলী খান রামপুরা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ছিলেন। তাদের অনেক সম্পত্তিও রয়েছে। এলাকায় মামা কাইল্যা পলাশের ব্যপক প্রভাব ছিল। মামার দেখাদেখি সে নিজেও প্রভাব খাটাতে গিয়ে অন্ধকার জগতে ঢুকে যায়। তার গ্রুপে অন্তত ৩০-৪০ জন ছেলে ছিল। এদের সবার খরচ বহন করতো সে। প্রতি মাসে তার আয় ছিল অন্তত ১০ লাখ টাকা। আয়ের প্রধান উৎস চাঁদাবাজি। এ ছাড়া রামপুরা-খিলগাঁও এলাকার ঝুট ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ করতো সে। রামপুরা থানার ছাত্রলীগ নেতা তপুর সঙ্গে তার ভাল  সখ্য ছিল। তপুর হয়ে কাজ করতো সে। এ কারণে তপুও তার চাঁদাবাজির একটি অংশ তাকে দিত। তুষার জানায়, প্রথম দিকে সে রামপুরা এলাকার শীর্ষ আরেক সন্ত্রাসী কারাবন্দি শাহাজাদা ও ঘাতক স্বপনের সঙ্গে কাজ করতো। পরে নিজেই বাহিনী তৈরি করে। রামপুরা-খিলগাঁও এলাকায় সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালালেও এলাকায় রাত্রি যাপন করতো না সে। বেশির ভাগ সময় গাজীপুরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতো। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে পুলিশের অভিযানের কড়াকড়ি হওয়ায় সে রাজশাহী ও জামালপুরেও থেকেছে। তবে মোবাইল ফোন ও ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে রামপুরা-খিলগাঁও এলাকা নিয়ন্ত্রণে ছিল তারই। তুষার জানায়, সে নানা ধরনের অস্ত্র ব্যবহার করেছে। তার অনেক দিনের শখ ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে থাকা অত্যাধুনিক ৭.৬২ বোরের অস্ত্র ব্যবহার করবে। এ কারণে তপুর কাছ থেকে লক্ষাধিক টাকা দিয়ে এই অস্ত্রটি কিনেছিল সে। অস্ত্রটি সবসময় নিজের সঙ্গেই রাখতো। তবে অস্ত্রটি তপু কোথায় পেয়েছে তা জানাতে পারেনি সে। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, সহযোগীদের গ্রেপ্তারের জন্য তুষারকে রিমান্ডে  নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

No comments

Powered by Blogger.