কালিহাতীতে চলছে শোকের মাতম, গুলির ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

নিহত শামীমের স্বজনদের আহাজারি
টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে পুলিশের গুলিতে নিহত তিনজনের বাড়িতেই চলছে শোকের মাতম। ভারি হয়ে উঠেছে গোটা এলাকার পরিবেশ। সবার কথা একটাই- পুলিশ কেন গুলি করে নিরপরাধ মানুষগুলোকে মারল। এ ঘটনায় পুলিশের প্রতি তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাস্থল কালিহাতী ও হামিদপুরে পুলিশের টহল চলছে। থমথমে অবস্থায় বিরাজ করছে পুরো এলাকায়। পুলিশের খামখেয়ালীতেই এই হতাহতের ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। গুলির ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ অভিযুক্ত রফিকুল ইসলাম রোমা ও তার ভগ্নিপতি হাফিজুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের ক্যাডার হিসেবে পরিচিত।
মা ও ছেলেকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের প্রতিবাদে শুক্রবার বিকেলে এলাকাবাসীর বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশ গুলি করলে তিনজন নিহত হন। নিহতরা হলেন- কালিহাতী পৌরএলাকার কুষ্টিয়া গ্রামের মৃত সানু শেখের ছেলে ফারুক হোসেন (৩০), কালিহাতী কামারপাড়ার রবি চন্দ্র দাসের ছেলে শ্যামল চন্দ্র দাস (১৮) ও ঘাটাইলের শালাঙ্কা গ্রামের শামীম (৩২)। শুক্রবার সন্ধ্যায় কালিহাতী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে ফারুক ও টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর শামীম এবং রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকায় নেয়ার পথে শ্যামল দাস মারা যান। নিহতদের লাশ টাঙ্গাইল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে তাদের স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।
আজ বিকেলে ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মাহফুজুল হক নূরুজ্জামান ও অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলীসহ পুলিশের অন্যান্য কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
ডিআইজি সাংবাদিকদের জানান, ঘটনা তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এই গুলির ঘটনায় যেসব পুলিশ সদস্যের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফুল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোন মামলা হয়নি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার প্রক্রিয়া চলছে।
নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকেও কোনো মামলা করা হয়নি। নিহত ফারুক হোসেনের বোন শাহিনা আক্তার বলেন, যাদের কাছে মামলা করব তারাইতো গুলি কইরা আমার ভাইকে মারছে! তাইলে মামলা করবকার কাছে? নিহত অন্যদের স্বজনদের বক্তব্যও একই।
নিহতদের পারিবারিক সূত্র জানায়, ফারুক একটি রাইস মিলে কাজ করতেন। আগে অটো চালাতেন। শুক্রবার বিকেলে সে কালিহাতীতে চাউল কিনতে গিয়ে মাথায় গুলিবিদ্ধ হন। আর শ্যামল দাস কালিহাতী বাসস্ট্যান্ডে একটি স্যালুনের কর্মচারি ছিলেন। জনতা-পুলিশ সংঘর্ষের সময় তিনি দোকান বন্ধ করে বাড়ি ফেরার পথে গুলিবিদ্ধ হন। তারও মাথায় গুলি লাগে। অন্যদিকে শামীমের পেটে গুলি লেগে পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়। কিছুদিনের মধ্যে তার সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল।

No comments

Powered by Blogger.