বাংলাদেশে মুক্তমতের ওপর চাপাতি হামলা -হিউম্যান রাইটস ওয়াচের বিবৃতি

দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী
বাংলাদেশে ব্লগারদের হত্যা, মুক্তমতের ওপর হামলা, সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে গ্রেপ্তার ইত্যাদি বিষয়ে বিবৃতি দিয়েছে নিউইয়র্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার সংস্থাটির দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলী এ বিবৃতিটি প্রকাশ করেন। "বাংলাদেশ ম্যাচেট অ্যাটাকস অন ফ্রি স্পিচ" (বাংলাদেশে মুক্তমতের ওপর চাপাতি হামলা) শিরোনামের বিবৃতিটি হুবহু তুলে ধরা হলো :
বাংলাদেশে মুক্তমত নজিরবিহীন হামলার শিকার। একদিকে চাপাতিধারী ক্রুদ্ধ মৌলবাদী এবং অন্যদিকে একটি সরকার যে খুব দ্রুতই ক্ষুব্ধ হয়। এই দুইয়ের মধ্যে মুক্তমত জিম্মি।
ধর্মনিরপেক্ষতা ঊর্ধ্বে তুলে ধরার জন্য ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা এ বছর চার ব্লগারকে খুন করেছে। কারণ ধর্মনিরপেক্ষতাকে ইসলামবিরোধী মনে করে তারা। চলতি মাসের শুরুতে ব্লগার নিলয় নীলকে খুন করার পর আল-কায়েদার সঙ্গে সম্পৃক্ত জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলাম দায় স্বীকার করে; তাদের দাবি, এ জন্য ‘আল্লাহর অনুমতি’ নিয়েছে তারা এবং আরো হামলার হুমকি দেয়। নিলয় নীল ও নিহত অন্যান্য ব্লগারকে দেওয়া হুমকির ব্যাপারে পুলিশ জানলেও জীবন বাঁচাতে ব্যর্থ হয়েছে।
একটি ন্যায়পরায়ণ সরকার সঙ্গে সঙ্গেই এসব হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানাত এবং হামলাকারীদের ধরার চেষ্টা করত। যদিও পুলিশের প্রথম আহ্বান ছিল আত্ম-নিষেধাজ্ঞার। বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক সতর্ক করে বলেন, ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা একটি অপরাধ।’ নিলয় হত্যার এক সপ্তাহের বেশি সময় পর পুলিশ সন্দেহভাজন তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করে, যদিও হামলাকারীদের পরিচয় পুলিশ আগে থেকে জানত।
পুলিশপ্রধানের মন্তব্য দুঃখজনক, তবে আশ্চর্যজনক নয়; কারণ বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষ ক্রমবর্ধমানভাবে মুক্তমতের ওপর দমন-পীড়ন চালাচ্ছে।
স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় মন্ত্রী ও অন্য রাজনীতিকদের যুদ্ধপরাধ নিয়ে ফেসবুকে অভিযোগ করায় এই সপ্তাহেই সাংবাদিক প্রবীর সিকদারকে গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) লোকজন গ্রেপ্তার করেছে। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রবীর একজন মন্ত্রীর সম্মানহানি করেছেন।
গত সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি আদালত আইটির প্রভাষক মোহাম্মদ রুহুল আমিন খন্দকারকে তাঁর অনুপস্থিতিতে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাঁর অপরাধ ছিল ২০১১ সালে বাংলাদেশের একজন জনপ্রিয় চলচ্চিত্রকার সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন, এ ঘটনায় সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত না করায় রাজনীতিকদের দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দেন রুহুল আমিন এবং বিস্ময় প্রকাশ করেন যে প্রধানমন্ত্রী কীভাবে এসব দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে যান। এই মন্তব্যের জন্য বিচারকরা তাঁকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে অভিযুক্ত করেন।
মাত্র সপ্তাহ দুই আগে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রতিবেদন করায় দুটি মানবাধিকার সংস্থার সমালোচনা করে পুলিশ বিবৃতি দেয়। এতে বলা হয়, যে কর্মকাণ্ডে পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ণ, হয় তা নাশকতা হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
বাংলাদেশকে পথ পরিবর্তন করতে হবে, আন্তর্জাতিক মানদণ্ড গ্রহণ এবং সাংবিধানিক স্বাধীনতা রক্ষা করতে হবে। কারণ কর্তৃপক্ষ যতক্ষণ মুক্তমতের ওপর দমন-পীড়ন চালাবে, যারা কথা বলবে তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

No comments

Powered by Blogger.