প্রধানমন্ত্রী হয়ে ফেরার আশা রাজাপক্ষের

পার্লামেন্ট নির্বাচনে গতকাল সোমবার ভোট দিয়েছেন শ্রীলঙ্কাবাসী। এর মধ্য দিয়ে শ্রীলঙ্কার প্রধানমন্ত্রী হয়ে ক্ষমতায় ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন মাত্র কয়েক মাস আগে প্রেসিডেন্টের পদ হারানো মাহিন্দা রাজাপক্ষে। খবর এএফপি ও রয়টার্সের। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা নির্ধারিত সময়ের এক বছর আগেই এই পার্লামেন্ট নির্বাচন ডাকেন। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল সাতটায় (গ্রিনিচ মান সময় রাত দেড়টা) শুরু হওয়া নির্বাচনের প্রাথমিক ঘণ্টাগুলোতে ব্যাপক ভোটার উপস্থিতি চোখে পড়েছে। ভোটের ফল প্রকাশিত হবে আজ মঙ্গলবারই। গত ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সবাইকে বিস্মিত করে দিয়ে জয়লাভ করেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষেরই সাবেক সহযোগী সিরিসেনা। দুজনই রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড পিপলস ফ্রিডম অ্যালায়েন্সের (ইউপিএফএ) সদস্য। তবে প্রেসিডেন্ট হলেও সিরিসেনা দলে নিজের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি।
রাজাপক্ষের প্রধানমন্ত্রী হওয়া ঠেকাতে নিজের নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগের হুমকি দিয়েছেন সিরিসেনা। তবে রাজাপক্ষে বলছেন, নির্বাচনে শক্ত অবস্থান দেখাতে পারলে, প্রেসিডেন্ট তাঁকে সমর্থন দিতে বাধ্য হবেন। নিজের নির্বাচনী আসন হাম্বানটোটায় ভোট দেওয়ার পর রাজাপক্ষে বলেন, ‘আমরা জিতবই, এটা নিশ্চিত। আমার বার্তা হলো—সবাই শান্ত থাকুন এবং শান্তিপূর্ণভাবে বিজয় উদ্যাপন করুন।’ ৬৯ বছর বয়সী রাজাপক্ষে এখনো শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘু সিংহলি সম্প্রদায়ের একটা বড় অংশের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয়। ২০০৯ সালে তামিল বিচ্ছিন্নতাবাদীদের মেরুদণ্ড ভেঙে দিয়ে দেশটিতে ৩৭ বছরের গৃহযুদ্ধের অবসানের কৃতিত্ব তাঁরই। তবে বিশ্লেষকদের অনুমান বলছে, কোনো দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে না। আর রাজাপক্ষে কট্টর জাতীয়তাবাদী হওয়ায় তাঁর জোট গঠনের চেষ্টাও হালে পানি পাবে না। প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা পরবর্তী সরকার গঠনে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংঘের ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) পক্ষে বলে মনে করা হচ্ছে। রাজাপক্ষের বিরোধিতাকারী তামিল ও মুসলিম দলগুলোরও সমর্থন পাবে তারা। রাজধানী কলম্বোয় ভোট দেওয়ার পর রনিল বলেছেন, নতুন সরকার গঠনের বিষয়ে তিনি আত্মবিশ্বাসী। সেই সরকার ‘৮ জানুয়ারির বিপ্লব’কে সুসংহত করবে। ৮ জানুয়ারির নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আগে ইউপিএফএ দলের মহাসচিব ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের অধীনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন সিরিসেনা। বর্তমানে তিনি দলটির প্রধানের দায়িত্বে থাকলেও রাজাপক্ষের অনুগত সদস্যদের কারণে দলের ওপরে তাঁর নিয়ন্ত্রণ সীমিতই।
যেসব তথ্য জানা জরুরি
২২৫ আসনবিশিষ্ট পার্লামেন্ট নির্বাচনে এমপিদের বেছে নিতে গতকাল সোমবার ভোট দিলেন শ্রীলঙ্কার বাসিন্দারা। এর আগে এক মাসজুড়ে নির্বাচনী প্রচারণার পুরো সময়টাতেই আলোচনার শীর্ষে ছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষে। তিনি প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়ে রাজনীতিতে ফেরার চেষ্টায় মরিয়া। এমন পরিপ্রেক্ষিতে দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কা ও এই নির্বাচন সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরা হলো:
জনসংখ্যা ও ভোটার: মোট জনসংখ্যা ২ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার (২০১২)। এর মধ্যে ৭৪ দশমিক ৯ শতাংশ সিংহলি সম্প্রদায়ের আর ১৫ দশমিক ২৬ শতাংশ তামিল সম্প্রদায়ের সদস্য। ভোটার সংখ্যা দেড় কোটি।
ধর্ম: বৌদ্ধ ৭০ দশমিক ২ শতাংশ, হিন্দু ১২ দশমিক ৬ শতাংশ, মুসলমান ৯ দশমিক ৭ শতাংশ এবং ক্যাথলিক খ্রিষ্টান ৬ দশমিক ১ শতাংশ
রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান: সরাসরি ভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট দুই মেয়াদে পাঁচ বছর করে ক্ষমতায় থাকতে পারেন। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা রাজাপক্ষেরই সাবেক সহযোগী। ২০০৫ সালের নভেম্বর থেকে প্রেসিডেন্ট থাকা রাজাপক্ষে হঠাৎ করেই গত জানুয়ারি মাসে আগাম নির্বাচন দেন। এতে সবাইকে বিস্মিত করে জয়লাভ করেন সিরিসেনা। দেশটিতে পার্লামেন্ট নির্বাচন হয় পৃথকভাবে। ২০১৫ সালের সংশোধিত সংবিধান মোতাবেক, পার্লামেন্টের মেয়াদ সর্বোচ্চ পাঁচ বছর।

No comments

Powered by Blogger.