কিডনি পাচার চক্রের হত্যা মিশন

গ্রামের সাধারণ মানুষকে মোটা অঙ্কের টাকার লোভ দেখানো হতো। বলতো রক্ত নেয়ার কথা। কৌশলে আনা হতো ঢাকায়। পরে রক্ত দেয়ার নাম করে কেটে নেয়া হতো কিডনি। কিডনি নেয়ার পর অবস্থা খারাপ হলে তাদের মেরে ফেলার পরিকল্পনাও ছিল। এমনকি লাশ বস্তায় ভরে আগে থেকেই অন্য নামে বুকিং দেয়া লঞ্চের কেবিনে করে পাঠিয়ে দেয়ার পরিকল্পনাও ছিল আন্তর্জাতিক কিডনি পাচারকারী চক্রের। শুক্রবার ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ গাবতলী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে আন্তর্জাতিক কিডনি পাচার চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে। তারা হলো আবদুল জলিল, শেখ জাকির ইবনে আজিজ শাকির, আশিকুর রহমান জেবিন, ফজলে রাব্বি ও জিহান রহমান। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুজন ভিকটিমকেও উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতদের কাছ থেকে দুটি চেতনানাশক ইনজেকশন, সিরিঞ্জ ও একটি ধারালো অস্ত্র ও একটি তোয়ালে উদ্ধার করা হয়। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গোপন সংবাদের পরিপ্রেক্ষিতে কিডনি পাচারের এ চক্রটিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ চক্রের মূলহোতা হচ্ছে আবদুল জলিল। সে ১০ বছর ধরে কিডনি পাচারের কাজ করে আসছে। আবদুুল জলিল ভারতেও কিডনি বিক্রি করেছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছে। গোয়েন্দা পুলিশের শীর্ষ এ কর্মকর্তা জানান, যারা কিডনি দিতে অস্বীকার করতো, তাদের অজ্ঞান করে কিডনি নেয়া হতো। এ চক্রটি এর আগে একাধিকবার কিডনি কেনাবেচা করেছে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, জলিল কিডনি কেটে নেয়ার জন্য জয়পুরহাট থেকে আবু হাসান নামের এক যুবককে ঢাকায় নিয়ে আসে। একটি কিডনির বিনিময়ে হাসানকে একটি সিএনজি দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। অপর ভিকটিম মাহবুবুর রহমানকে রক্ত দেয়ার নাম করে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকায় আনা হয়। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার মাহফুজা আক্তার লাকী বলেন, সাভার ও নারায়ণগঞ্জে কিছু ক্লিনিকে কিডনি ম্যাচিং পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়। পরে ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে তাদের ভারতের কলকাতায় নিয়ে বা বাংলাদেশের কোন হাসপাতালে নিয়ে কিডনি বের করে নেয়। প্রতিটি কিডনি চার থেকে ছয় লাখ টাকায় বিক্রি হয়। বিক্রেতা পায় এক থেকে দুই লাখ টাকা। বাকি টাকা মধ্যস্বত্বভোগীরা নিয়ে যায়। এসব ঘটনায় বাংলাদেশে কোন কোন হাসপাতাল জড়িত তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে জানান এ গোয়েন্দা কর্মকর্তা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশে কিডনি বেচাকেনা বেআইনি। তবে কারও যদি কিডনির প্রয়োজন হয়, তাহলে তার রক্তের সম্পর্কের লোকজন স্বেচ্ছায় দিতে পারবেন। তবে এ বিষয়ে কেউ তাকে জোর করতে পারবে না। সূত্র জানায়, কিডনি পাচার চক্রের সদস্যদের কয়েকজন আগে ঢাকায় অজ্ঞান পার্টির সদস্য হিসেবে কাজ করতো। তাদের পরিকল্পনা ছিল কিডনি কেটে নেয়ার পর অবস্থা খারাপ হলে তাদের মেরে ফেলা হবে। এমনকি লাশ বস্তায় ভরে আগে থেকে অন্য নামে বুকিং দেয়া লঞ্চের কেবিনে করে পাঠিয়ে দেয়া বা নদীতে ফেলে দেয়ার পরিকল্পনাও ছিল তাদের। গ্রেপ্তারকৃতদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া চলছে বলে গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.