সাংসদের ভাই ও পৌর মেয়র মুক্তি ফিরে আসায় উত্তপ্ত টাঙ্গাইল

আওয়ামী লীগের সাংসদ আমানুর রহমান খানের (রানা) ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খানের (মুক্তি) ফিরে আসাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে টাঙ্গাইল। মেয়রের বাড়িতে পাল্টাপাল্টি হামলা এবং জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় পুলিশ ও র্যা ব আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে। আমানুর ও তাঁর ভাইদের প্রতিরোধের লক্ষ্যে মিছিল-সমাবেশ হয়েছে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদ হত্যা মামলায় রাজা ও মোহাম্মদ আলী নামে দুই আসামিকে গত বছরের আগস্টে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সাংসদ আমানুর ও তাঁর তিন ভাই টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র সহিদুর রহমান খান, ব্যবসায়ী নেতা জাহিদুর রহমান খান (কাকন) ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সানিয়াত খান (বাপ্পা) জড়িত বলে উল্লেখ করেন। এরপর থেকে আমানুর ও তাঁর ভাইয়েরা আত্মগোপন করেন।
১২ জুলাই আমানুর ও সহিদুর হাইকোর্টে হাজির হয়ে ফারুক হত্যা মামলায় জামিনের আবেদন করেন। হাইকোর্ট ১৪ জুলাই আমানুর ও সহিদুরকে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন। এ সময়ের মধ্যে তাঁদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি না করতেও পুলিশকে নির্দেশ দেন আদালত।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে মেয়র সহিদুর তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসভবনে ফিরে আসেন। পরদিন শুক্রবার সকালে তাঁর অনুসারী শতাধিক নেতা-কর্মী বাসভবনে সমবেত হন। তাঁকে দলীয় কার্যালয়ে অভ্যর্থনা জানাতে শহর আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী সেখানে অবস্থান নেন।
এদিকে সহিদুর টাঙ্গাইলে ফিরে আসার খবরে ফারুক আহমেদ হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তাঁরা মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে অবস্থানকারী মেয়র অনুসারীদের ওপর হামলা করেন। এতে টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ খানসহ পাঁচ-ছয়জন আহত হন। ঘটনার দৃশ্য ধারণ করতে গিয়ে সময় টেলিভিশনের চিত্রগ্রাহক রাশেদ খান হামলার শিকার হন। হামলাকারীরা তাঁর ক্যামেরা ভাঙচুর করেন। এ সময় ঘটনাস্থলে র্যা ব পৌঁছে নুরুজ্জামান ও মহসিনকে গ্রেপ্তার করে। হামলাকারীরা মিছিল নিয়ে মেয়রের বাসভবন ঘেরাওয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হন। তাঁরা মেয়রের বাসা লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। মেয়রের বাসায় অবস্থানরত তাঁর অনুসারীরা পাল্টা ঢিল ছোড়েন। পরে পুলিশ ও র্যা ব এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনার কিছুক্ষণ পর পুলিশ মেয়রের বাসভবনে তল্লাশি চালায়। সেখান থেকে টাঙ্গাইল শহর যুবদলের সভাপতি মোমিনুর রহমানসহ ২৭ জনকে আটক করা হয়। পরে ছয়জনকে গ্রেপ্তার করে রাতে অন্যদের ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় মেয়র-সমর্থকদের অভিযুক্ত করে জেলা তাঁতী লীগের আহ্বায়ক সোলায়মান হাসান টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলা করেছেন। অপর দিকে মেয়রের স্ত্রী ফারজানা খান ঝুমা বাদী হয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মুস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছেন। আওয়ামী লীগ অফিসে হামলার ঘটনায় র্যা বের উপসহকারী পরিচালক বজলুর রশীদ বাদী হয়ে টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক সুখন খানসহ দশজনের নাম উল্লেখ করে মামলা করেছেন। মামলায় অজ্ঞাত দেড় শতাধিক ব্যক্তিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
গতকাল সোমবার মেয়র পৌরসভায় যোগদান করতে পারেন—এই খবরে সকাল থেকে নিহত ফারুক আহমেদের স্ত্রী নাহার আহমেদের নেতৃত্বে ‘নির্যাতিত আওয়ামী সমর্থক পরিবার’-এর ব্যানারে ফারুক হত্যার বিচারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা পৌর ভবনের পাশে শহীদ মিনারে অবস্থান নেন। সেখানে অনুষ্ঠিত সমাবেশে জোয়াহেরুল ইসলাম, শামসুজ্জামান পাশা, সোলায়মান হাসান, মাহমুদুল হাসান, আবদুর রউফ, সাইফুজ্জামান খান, তানভীর হাসান প্রমুখ বক্তব্য দেন। পরে তাঁরা সাংসদ আমানুর ও তাঁর ভাইদের বিচারের দাবিতে মিছিল করেন।
মেয়র সহিদুর গতকাল সোমবার পৌরসভায় না এলেও বাসা থেকে তিনি যোগদানপত্র পাঠিয়ে দিয়েছেন বলে পৌরসভা সূত্র জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ১৮ জানুয়ারি রাতে মুক্তিযোদ্ধা ফারুক আহমেদকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তাঁর কলেজপাড়া এলাকার বাসার কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়। টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

No comments

Powered by Blogger.