দুর্ঘটনায় জীবনের এ অপচয় মানা যায় নাঃ ঈদ আনন্দে মৃত্যুর শোক

ঈদের আনন্দের অপর পিঠে থাকছেই দুর্ঘটনার ভয়। সড়কের নৈরাজ্যের টোল হিসেবে প্রতিবছরই এ সময় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটে। এবার তা সবচেয়ে বেশি গেছে সিরাজগঞ্জ থেকে। ঈদের সপ্তাহে দুটি ভয়াবহ দুর্ঘটনায় সিরাজগঞ্জের মহাসড়কেই ঝরেছে ১৭টি অমূল্য প্রাণ। কুমিল্লা ও নড়াইলেও নিহত হয়েছেন আরও পাঁচজন। দেশের অন্যান্য সড়কেও কমবেশি প্রাণহানি ঘটেছে। উৎসব কাটিয়ে ফেরার পর্বেও থাকছে বৃষ্টি, যাত্রীর চাপ আর গাড়িচালক ও সড়ক প্রশাসনের অনিয়মজনিত ঝুঁকি। জড়িত সবার কাছে সনির্বন্ধ অনুরোধ, মানুষ বাঁচাতে সম্ভব সবকিছু করুন, যাত্রীরাও থাকুন সর্বোচ্চ সাবধান। নিহত ব্যক্তিদের স্বজনদের জানাই সমবেদনা। আহতদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার দাবি জানাই সরকারের প্রতি।
প্রথম আলোর খবরের সূত্রে জানা যাচ্ছে, সিরাজগঞ্জে গত দুই মাসে ১৪টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৫৯ জন। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিম সংযোগ মহাসড়ক ও হাটিকুমরুল-বনপাড়া সড়কেই ঘটেছে অধিকাংশ ঘটনা। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ঘটেছে মুখোমুখি সংঘর্ষ। এই সড়কে প্রতিদিন ২২ জেলার ১০ থেকে ১২ হাজার গাড়ি চলাচল করে। অথচ এটি হওয়া দরকার ছিল চার লেনের। দ্বিমুখী দুটি লেনে মুখোমুখি সংঘর্ষের আশঙ্কা থাকে অনেক বেশি। দ্বিতীয় দায় অদক্ষ, ক্লান্ত ও গতিসীমা না-মানা চালকদের। এঁদের নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব মালিক ও সড়ক কর্তৃপক্ষের। তারা বরাবরের মতোই দায়সারা।
বাংলাদেশে প্রতিবছর ১২ থেকে ১৫ হাজার মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায়। এত মৃত্যুর জন্য দায়ী অবকাঠামো ও সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনার সংকট। যোগাযোগ, সড়ক ও জনপথ বিভাগ এবং পরিবহন মালিক-শ্রমিক কর্তৃপক্ষের মজ্জাগত সুবিধাবাদ ও গাফিলতির খেসারতও প্রাণের এমন অপচয়। সুতরাং এত মৃত্যুকে দুর্ঘটনা না বলে কাঠামোগত হত্যাকাণ্ড বলাই শ্রেয়।
ঈদে বাড়ি ও কর্মস্থলের মধ্যে যাতায়াতকারী মানুষ লাখে লাখে রাস্তায় নামে। হাজার হাজার গাড়ি যার যার গন্তব্যে হন্যে হয়ে ছোটে। সড়কের অব্যবস্থা ও দুর্দশার মধ্যে আনাড়ি চালক-শ্রমিকের হাতে তুলে দিতে হচ্ছে জীবন ও সম্পদ। এভাবে আর কত দিন?

No comments

Powered by Blogger.