আমি পালাইনি অপহরণ করা হয়েছিল -আদালতে শিফা by ওয়েছ খছরু

‘প্রেমের টানে আমি পালাইনি। আমাকে নেশাজাতীয় দ্রব্য খাইয়ে অপহরণ করা হয়েছে। আমি কিছু বলতে পারিনি। আমার স্বামী আছে। দুটি সন্তান আছে।’- গতকাল সিলেটের আদালতে এ কথা বলেন সিলেটের মোগলাবাজার থেকে অপহৃত প্রবাসী বধূ ফারজানা আক্তার শিফা। বিকালে তিনি আদালতে জবানবন্দি দেন। তার জবানবন্দি গ্রহণ করেন সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতের বিচারক মো. শাহেদুল করিম। এদিকে, জবানবন্দি দেয়ার পর ফারজানা আক্তার শিফা আদালতে জানান, সে তার পূর্বের স্বামীর ঘরে যেতে চায়। তার দুটি সন্তান রয়েছে। সন্তানদের নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে চায়। এ কারণে আদালত ফারজানা আক্তার শিফাকে তার পিতা  গোলাপগঞ্জের লক্ষ্মণাবন্দের আব্দুল মান্নানের জিম্মায় দিয়েছেন। আদালত সূত্রে জানা গেছে, মোগলাবাজার থেকে অপহৃত প্রবাসী বধূ ফারজানা আক্তার রিফার ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্নের পর গতকাল বিকাল ৩টায় সিলেটের মুখ্য মহানগর হাকিম শাহেদুল করিমের আদালতে তোলা হয়। আদালতে শিফা স্বইচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। আর তার এই জবানবন্দিতে জানা গেছে, সে অপহৃত হয়েছে। শিফা আদালতে জবানবন্দি দেয়ার আগে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোগলাবাজার থানার এসআই স্বপন কান্তি দাশ মানবজমিনকে জানিয়েছিলেন, ফারজানা আক্তার শিফা প্রেমের টানে পালিয়েছে না তাকে অপহরণ করা হয়েছে সেটি স্পষ্ট নয়। আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পর পুরো ঘটনাটি খোলাসা হবে। এদিকে শিফা আদালতে অপহরণের ঘটনা জানানোর পর পুলিশ পুরো ঘটনাটিকে সেই দিকেই তদন্ত করবে বলে তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন। আদালতে ফারজানা আক্তার শিফা জানিয়েছেন, গত ৯ই জুন তিনি স্বামীর বাড়ি থেকে বেরিয়ে আল হিকমা কিন্ডারগার্টেন স্কুলে আসেন। সেখান থেকে সিএনজি ড্রাইভার খালেদ আহমদ তাকে অপহরণ করে। এ সময় তার কোলে চার বছরের সন্তান শিশু রাফি ছিল। নেশাজাতীয় দ্রব্য খাওয়ানোর পর সে কিছুই বলতে পারে না। যখন জ্ঞান ফিরে তখন তিনি জানতে পারেন গাজীপুরে আছেন। এরপর খালেদ তাকে নিয়ে হোটেলে থাকেন। খালেদ এ সময় তার সঙ্গে খারাপ আচরণ করে বলেও আদালতে জানান তিনি। শিফা আরও জানান, যাওয়ার সময় তার কাছে প্রায় দেড় লাখ টাকা ছিলো। ওই টাকা খালেদ তাকে ভয় দেখিয়ে নিয়ে গেছে। আরও মূল্যবান কিছু সামগ্রী ছিলো সেগুলোও খালেদ নিয়ে গেছে বলে আদালতে জানান শিফা। শিফা জানান, তার দুটি সন্তান রয়েছে। তার স্বামী রয়েছে। স্বামী বসবাস করেন  সৌদি আরবে। তিনি স্বামীর ঘরেই ফিরতে চান। পূর্বের মতো তিনি স্বামীর ঘরে সন্তানদের নিয়ে সুখে-শান্তিতে বসবাস করতে চান। আদালত সূত্র জানায়, বিকাল ৩টা থেকে পৌনে ৪টা পর্যন্ত আদালতে শিফার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এরপর শিফার অনুমতি নিয়ে তাকে তার পিতা ও মামলার বাদী আব্দুল মান্নানের জিম্মায় জামিন দেয়া হয়। জামিনের পর পিতা আব্দুল মান্নান তাকে নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। আদালতে জামিন শুনানিকালে উভয়পক্ষের আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। শুনানি শেষেই আদালত তার জামিন মঞ্জুর করেন। আদালতে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, ফারজানা আক্তার শিফা নিজের ইচ্ছায় প্রেমিক খালেদের সঙ্গে পালিয়েছে। এখন ধরা পড়ার পর সে নিজেকে অপহৃতা বলে দাবি করছে। সিলেটের মোগলাবাজার এলাকার সৌদি প্রবাসী মজির উদ্দিনের স্ত্রী ফারজানা আক্তার শিফা। গত ৯ই জুন শিফা মোগলাবাজার থেকে প্রেমিক খালেদের সঙ্গে পালিয়েছে বলে এলাকাবাসী জানিয়েছিলেন। কিন্তু এ অভিযোগ মানেননি শিফার পিতা আব্দুল মান্নান। তার মেয়ে অপহৃত হয়েছেন দাবি করে তিনি ১১ই জুন সিলেটের মোগলাবাজার থানায় অপহরণ মামলা করেন। মামলা দায়েরের পর পুলিশ রিফাকে উদ্ধারে অভিযান শুরু করে। এরপরও  মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে গত বুধবার রাতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই স্বপন কান্তি দাশ অভিযান চালিয়ে গাজীপুরের কোনাবাড়ি এলাকা থেকে তাকে উদ্ধার করেন। এ সময় পুলিশ সিএনজি চালক খালেদকে গ্রেপ্তার করে। পরে বৃহস্পতিবার তাদের আদালতে পাঠানো হলে আদালত ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শিফাকে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ও খালেদকে সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রেরণ করেন। আর গতকাল ফারজানা আক্তার শিফাকে সিলেটের আদালতে হাজির করা হলে সে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। এদিকে, সিলেটের মোগলাবাজার থানায় দায়ের করা মামলায় আব্দুল মান্নান দাবি করেছিলেন তার মেয়ের কাছে টাকা ছিলো। গতকাল আদালতেও শিফা জানিয়েছেন, তার কাছে দেড় লাখ টাকা ছিল। সেই টাকাগুলোও খালেদ ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিয়ে গেছে। তিনি অপহরণ ও অপমানের বিচার দাবি করেন আদালতের কাছে।

No comments

Powered by Blogger.