যোগাসনে ৩৭ হাজার মানুষ- সব পথ মিলছে আজ নয়াদিল্লির রাজপথে by সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায়

আজকের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার জন্য গতকাল
হায়দরাবাদে দুই যোগ প্রশিক্ষকের প্রস্তুতি l ছবি: এএফপি
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ইচ্ছাই এখন ভারতবাসীর কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজ রোববার কাকভোর থেকে রাজধানী দিল্লির সবচেয়ে জনপ্রিয় ঠিকানা রাজপথজুড়ে যা হতে চলেছে, আগামী দিনে তা গিনেসের বিবেচনায় বিশ্ব রেকর্ড হবে কি না, সেই চ্যালেঞ্জটা প্রধানমন্ত্রীই ছুড়ে দিয়েছেন দেশবাসীর কাছে। অতএব, ২১ জুন রোববারের দিনটা শুরু হবে একেবারে অন্যভাবে।
কী রকম? রাইসিনা হিল থেকে সোজা নেমে আসা রাজপথ, যা পৌনে তিন কিলোমিটার দূরে ইন্ডিয়া গেটে শেষ হয়েছে, সেখানে কম করে ৩৭ হাজার মানুষ যোগাসনের ম্যাটে বসে থাকবেন ভোর ৬টা ৪০ মিনিট থেকে। এই রাজপথ বেয়েই ফি বছর এগিয়ে চলে ২৬ জানুয়ারি প্রজাতন্ত্র দিবসের প্যারেড, যা ভারতের উন্নতি ও গরিমার নিদর্শন। সেই প্রশস্ত রাজপথে আমলা, প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্য, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, সাধারণ মানুষ, ছাত্রছাত্রীরা ৩৫ মিনিট ধরে যোগাভ্যাস পালন করবেন। অন্তত ৫০টি দেশের বিদেশি নাগরিকেরাও উপস্থিত থাকবেন এই যোগ-আসরে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উপস্থিত থাকবেন অস্থায়ী মঞ্চে। তাঁর সঙ্গে থাকবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন যোগ শিক্ষকেরা, যাঁদের অন্যতম গেরুয়াধারী বাবা রামদেব। মঞ্চে তাঁরা যা করবেন, রাজপথে সমবেত জনতা তা অনুসরণ করবেন।
এ জন্য দীর্ঘ রাজপথের দুই ধারে ২৮টি ইলেকট্রনিক জায়ান্ট স্ক্রিন লাগানো হয়েছে। মোতায়েন করা হচ্ছে সাত হাজার নিরাপত্তারক্ষী। ৪০টি অ্যাম্বুলেন্স হাজির থাকবে বিভিন্ন এলাকায়। রোববারের ছুটির দিনের আলসেমি কাটিয়ে সংক্ষিপ্ত সময়ের এই অনুষ্ঠান কোনো একটি স্থানে সর্ববৃহৎ যোগ প্রদর্শন হিসেবে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে স্থান পায় কি না, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সেই চ্যালেঞ্জ আজ ভারতবাসীরও।
অথচ এই নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। যোগের মধ্যে সূর্য প্রণাম রাখা হয়েছিল। তাতে আপত্তি ওঠে মুসলমান সমাজের একাংশ থেকে। কেউ কেউ যোগকেই অমুসলিম বলে অভিহিত করতে থাকেন। এই বিতর্কের ফলে রোববারের অনুষ্ঠান থেকে সূর্য প্রণাম বাদ দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের আমলারা অফিসে একটি করে ব্যাগ পান। তাতে যোগ দিবসের লোগোসহ একটি করে সাদা টি-শার্ট, একটা যোগের ডিভিডি এবং একটি আমন্ত্রণপত্র, যাতে রোববার ৬টা ৪০ মিনিটে রাজপথের নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছানোর অনুরোধ। আমলারা বুঝতে পারেননি, আমন্ত্রণপত্রটি সরকারি নির্দেশ কি না। ছুটির দিনে না এলে তা গরহাজিরা হিসেবে গণ্য হবে কি না। আমলাদের এই দোলাচল কিন্তু ভারতীয় সেনানীদের মধ্যে নেই। তিন হাজার সেনানীর সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন সেনাপ্রধান দলবীর সিং সুহাগ, এয়ার চিফ মার্শাল অরূপ রাহা ও নৌ সেনাপ্রধান অ্যাডমিরাল রবীন ধোবান। এমনকি ভিন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতেরাও। গিনেসে নাম তুলতে সব মিলিয়ে এ এক এলাহি কাণ্ড।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ ও শ্রীশ্রী রবিশঙ্কর থাকবেন নিউইয়র্কে যোগ দিবসে জাতিসংঘের মূল অনুষ্ঠানে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং থাকবেন উত্তর প্রদেশের রাজধানী লক্ষ্ণৌয়ে, মানেকা গান্ধী সেই রাজ্যের পিলভিটে, প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পারিক্কর মীরাটে, সংসদীয় মন্ত্রী ভেঙ্কাইয়া নাইডু চেন্নাইয়ে। অন্তত ২০-২২ জন মন্ত্রী সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে যোগাভ্যাসকে একটা আন্দোলনে পরিণত করতে চান। প্রধানমন্ত্রীর বিশ্বাস, যোগ মানুষকে সুস্বাস্থ্য দেয়, সুযোগ্য করে তোলে, সুমনের অধিকারী করে, সুমতি দেয়, যা সৎ পথে থাকতে সাহায্য করে। যোগাভ্যাসের মাধ্যমে তিনি সরকারের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়তে আগ্রহী।

No comments

Powered by Blogger.