ফাতেমা রিয়াজের ছন্দময় প্রকৃতি by মুজিবুল হক

গাছের ডালপালা ও শিকড় দিয়ে ফাতেমা তৈরি করেন শিল্পকর্ম
মরা গাছের শিকড় বা শুকিয়ে যাওয়া কাণ্ডের মধ্যে মানুষ, সাপ বা পাখির অবয়ব দেখে চমকে উঠতে হয়। দেখার চোখ থাকলে কত কিছুই না ধরা পড়ে! ‘নেচার অব হারমনি’ শিরোনামের প্রদর্শনীতে শৌখিন শিল্পী ফাতেমা রিয়াজ প্রকৃতির এসব অনুষঙ্গ হাজির করেছেন দর্শকদের সামনে। ১৪ জুন তিন দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী শেষ হয় নগরের সার্সন রোডের হাটখোলা গ্যালারিতে। প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন চারুকলা ইনস্টিটিউটের শিক্ষক অধ্যাপক অলক রায়, অতিথি ছিলেন বাঁশিবাদক ওস্তাদ আজিজুর ইসলাম, আলোকচিত্র শিল্পী শোয়েব ফারুকী, মউদুদুল ইসলাম ও হাটখোলার পরিচালক ইউসুফ মুহাম্মদ। ইতালির রেনেসাঁ যুগের ভাস্কর মিকেলেঞ্জেলো এন্টোনিওনি বলেছিলেন, এক খণ্ড পাথরের ভেতরে ভাস্কর্য আগে থেকেই থাকে। শিল্পীর কাজ হলো সেটা দক্ষতার সঙ্গে বের করে আনা। নির্দ্বিধায় বলা যায়, ফাতেমা মরা গাছের গুঁড়ি বা শেকড়ে যে অবয়ব ছিল তা দক্ষতার সঙ্গেই বের করে আনতে পেরেছেন। প্রদর্শনীতে মানুষ ও বিভিন্ন জীবজন্তুর অবয়ব ফুটিয়ে তুলেছেন শিল্পী তাঁর ৩৫টি উপস্থাপনায়। ব্যবহার করেছেন বাঁশ, কাঠের টুকরো ও গাছের শেকড়।
প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে ‘ড্যান্সিং বার্ড’ শিরোনামের একটি শিল্পকর্ম। এখানে দেখা যায় একটি পাখি খানিকটা গলা উঁচু করে নৃত্যরত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে গাছের ওপরে। গাছের শেকড়টিকে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে, যা দেখলে মনে পড়ে খালের ধারে গাছের ওপর বসে থাকা শিকারি বকের কথা।
তবে শিল্পের উপকরণ হিসেবে বৃক্ষ বা পাথরের ব্যবহার নতুন নয়। মৌলিকত্ব না থাকলেও ফাতেমার কাজ নিছকই ‘শো-পিস’ নয়। প্রকৃতিকে গভীরভাবে অনুধাবনের চেষ্টা আছে তাঁর মধ্যে। আছে আখ্যান আর নাটকীয়তা।
কী করে এমন ভিন্নধারার কাজ করার ইচ্ছে তৈরি হলো, জানতে চাইলে শিল্পী ফাতেমা রিয়াজ বলেন, ‘কয়েক বছর ধরে আমি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে পাহাড়, ঝরনা, জঙ্গল ও সাগরের ভেসে আসা গাছের গুঁড়ি ও শিকড় সংগ্রহ করেছি। এরপর সেসবের নিজস্বতা অক্ষুণ্ন রেখে শৈল্পিক রূপ দেওয়ার চেষ্টা করেছি।’

No comments

Powered by Blogger.