তুরস্কে নতুন সরকার কেমন হবে

রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান
সরকার গঠন করতে বিরোধী দলগুলোর সঙ্গে জোট গঠনে হিমশিম খাচ্ছে তুরস্কের ইসলামপন্থী জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি (একেপি)। এই প্রথমবারের মতো পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায়নি একেপি। তাই সরকার গঠনে বিরোধী দলের সঙ্গে জোট বাঁধা ছাড়া উপায় নেই প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের।
জোট গঠনে কয়েক সপ্তাহ ধরে বিরোধী দলের মন গলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। কিন্তু এরদোয়ানের পক্ষে কাজটি সহজ হচ্ছে না। এখন একেপির সামনে কয়েকটি পথ খোলা আছে। সেগুলো হলো:
ডানপন্থী ন্যাশনালিস্টের সঙ্গে জোট: একেপি ডানপন্থী দল ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) সঙ্গে জোটে যেতে পারে। এটিই তাদের জন্য সবচেয়ে সহজ। রক্ষণশীল ও জাতীয়তাবাদী মতাদর্শের মিশেলে থাকা এই দলের সঙ্গে মানিয়ে চলাটা ইসলামপন্থী একেপির জন্য সহজ। এমএইচপি দলের নেতা ডেভলেট বাহসেলি এর আগে তুরস্কে প্রেসিডেন্ট পদ্ধতির সরকার চালু করতে এরদোয়ানের সমালোচনা করেন। জোট গড়তে চাইলে এসব ব্যাপারে এরদোয়ানকে ছাড় দিতে হবে। নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর গত রোববার বাহসেলি বলেন, এরদোয়ানের সাংবিধানিক সীমাবদ্ধতার মধ্যে থাকা উচিত। তিনি বলেন, পার্লামেন্টে থাকা দুটি বিরোধী দলের সঙ্গে জোট গড়তে না পারলে নতুন নির্বাচনের ব্যাপারে ভাবতে হবে এরদোয়ানকে। এতে জোট গড়া কতটা সম্ভব হবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেল। এটা ঠিক যে একেপি-এমএইচপি জোট গড়লে কুর্দি জঙ্গিদের সঙ্গে শান্তি প্রক্রিয়া আরও খানিকটা এগিয়ে যাবে। এমএইচপির সমর্থকেরা কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) সঙ্গে ঐকমত্যকে সমর্থন করে না। একেপি-এমএইচপি জোট হলে পার্লামেন্টের ৫৫০ আসনের মধ্যে ৩৩০ আসন দখল করা সম্ভব।
ধর্মনিরপেক্ষ রিপাবলিকানের সঙ্গে জোট: নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর তুর্কি প্রধানমন্ত্রী ও একেপি নেতা আহমেদ দাভুতোগলু মন্তব্য করেন, তিনি কুর্দি-সমর্থিত দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টিসহ (এইচডিপি) নির্বাচনে আসন পাওয়া তিনটি দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন। যদি দাভুতোগলু জোট গড়তে ব্যর্থ হন, তাহলে এরদোয়ানের পরের টার্গেট হতে পারে পার্লামেন্টের আরেক বড় দল রিপাবলিক পিপলস পার্টি (সিএইচপি)। নির্বাচনের প্রাথমিক ফল অনুসারে সিএইচপি ১৩২ আসনে জয়ী হয়েছে। এতে সিএইচপি একেপির সঙ্গে জোট গড়তে আগ্রহী না-ও হতে পারে। এর কারণ হলো এমএইচপি ও কুর্দি-সমর্থিত পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টির (এইচডিপি) সঙ্গে তারা সহজেই জোট বাঁধতে পারে। তবে এমএইচপি ও এইচডিপি এতে কতটা আগ্রহী হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এরই মধ্যে তুরস্কের উপপ্রধানমন্ত্রী বুলেন্ট আরিঙ্ক জোট গড়তে তিন বিরোধী দলকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন। তিনি হুঁশিয়ার করেন, যদি বিরোধীরা জোট গড়তে না পারে, তাহলে একেপি যেকোনো পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত থাকবে।
সংখ্যালঘু সরকার: বিরোধী দলের নেতাদের সমর্থন নিয়ে একেপি সংখ্যালঘু সরকার গড়ার চেষ্টা করতে পারে। এভাবে একেপি পার্লামেন্টে আস্থা ভোটে জয়ী হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যেতে পারে। আগাম নির্বাচনের শর্ত জুড়ে দিয়ে এমএইচপি এ ব্যাপারে একেপিকে সমর্থন দিতে পারে। তবে সিএইচপি ও এইচডিপি এ ব্যাপারে একেপিকে খুব বেশি সমর্থন দেবে না।
আগাম নির্বাচনের ডাক: একেপি যদি জোট গঠন করতে না পারে অথবা নির্বাচনের ৪৫ দিনের মধ্যে আস্থা ভোটে জয়ী হতে না পারে, তাহলে সংবিধান অনুসারে আগাম নির্বাচনের ডাক দিতে বাধ্য হবেন এরদোয়ান। ৯০ দিন পরে ওই নির্বাচন হবে।
গত বৃহস্পতিবার তুরস্কে যত শিগগির সম্ভব নতুন সরকার গঠনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান এরদোয়ান। পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিনি এ বিষয়ে নীরবতা ভাঙেন। এরদোয়ান বলেন, সাংবিধানিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে শিগগিরই একটি সরকার গঠন করতে হবে। এ জন্য প্রত্যেকেরই নিজ নিজ অহংবোধ উপেক্ষা করে তৎপর হওয়া উচিত।
এত দিন ক্ষমতায় থাকা এরদোয়ানের সমর্থনপুষ্ট দল একেপি এবারের নির্বাচনে প্রত্যাশিত সাফল্য পায়নি। এতে অন্য দলগুলোর সমন্বয়ে নতুন জোট সরকার গঠনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে মনে হচ্ছে, জোট গড়তে অনেকটাই নমনীয় একেপি। এমনকি আলোচনা ব্যর্থ হলে আগাম নির্বাচনের জন্যও একেপির প্রস্তুতি রয়েছে। ৫৫০ আসনের পার্লামেন্টে একেপি পেয়েছে ২৫৮টি। ১৩ বছরের মধ্যে এবারই কম আসন পেল দলটি। রয়টার্স অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.