সৌদি আরবের ৫ লক্ষাধিক নথি ফাঁস করলো উইকিলিকস

সৌদি আরবের ৫ লক্ষাধিক গোপন কূটনৈতিক নথি ফাঁস করছে উইকিলিকস। এক বিবৃতিতে সংস্থাটি বলেছে, এরই মধ্যে ইন্টারনেটে গুরুত্বপূর্ণ তারবার্তাসহ প্রায় ৭০,০০০ নথি প্রকাশ করা হয়েছে। এ নথিসমূহের বেশির ভাগই আরবি ভাষায় লেখা। ২০১০ সালে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে লাখ লাখ গোপন তারবার্তা ও নথি প্রকাশ করেছিল উইকিলিকস, এবারও সেই একই ধারায় তথ্য ফাঁস করছে। সৌদি আরবের বাকি কূটনৈতিক নথিসমূহ ফাঁসের প্রক্রিয়ায় রয়েছে উইকিলিকস। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। বিভিন্ন রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ সরকারি নথি ফাঁসের ক্ষেত্রে উইকিলিকসের রেকর্ড থাকা সত্ত্বেও, এ নথিগুলো আসল কিনা, তা তাৎক্ষণিকভাবে যাচাইয়ের কোন উপায় নেই। অধিকাংশ নথির ওপরের অংশ সবুজ রঙে চিহ্নিত করা এবং ওপরের অংশে লেখা ‘কিংডম অব সৌদি অ্যারাবিয়া’ বা ‘মিনিস্ট্রি অব ফরেইন অ্যাফেয়ার্স’। কয়েকটি ‘আর্জেন্ট’ বা ‘ক্ল্যাসিফাইড’ হিসেবে মার্ক করা। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত সৌদি দূতাবাস থেকে পাঠানো একটি নথিও রয়েছে এর মধ্যে। প্রকাশিত নথিসমূহ আসল হলে, সৌদি আরবের অভ্যন্তরীণ কূটনীতি প্রকাশ্যে চলে আসবে। ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের দীর্ঘদিনের যে আঞ্চলিক প্রতিযোগিতা চলছে, সিরীয় বিদ্রোহী ও মিশরের সেনাসমর্থিত সরকারকে সমর্থন ও সহযোগিতা এবং তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি ইস্যুতে আন্তর্জাতিক যে চুক্তি হতে চলেছে, সেখানে দেশটির বিরোধিতাসহ বহু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দেশটির অভ্যন্তরীণ নীতি সম্পর্কে সুস্পষ্ট তথ্য পাওয়া যাবে।
২০১২ সালের একটি নথিতে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সৌদি আরবের চিরায়ত সন্দেহের কথা উঠে এসেছে। তেহরানে সৌদি আরবের দূতাবাস থেকে রিয়াদে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক বার্তায় বলা হয়েছে, অশনাক্ত এক তুর্কি মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে আমেরিকার বার্তা পৌঁছানো হচ্ছে ইরানের কাছে। আরেকটি বার্তায় দেখা গেছে, ইরানে সৌদি দূতাবাসে কূটনীতিকরা আলোচনা করেছেন, কিভাবে ফেসবুক ও টুইটারকে ব্যবহার করে হতাশ যুবকদের মধ্যে অস্থিরতা ছড়িয়ে দেয়া যায়। খার্তুমে সৌদি দূতাবাসের একটি বার্তায় সুদানে ইরানের সামরিক সহায়তার তথ্য দেয়া হয়েছে। ২০১২ সালে আবুধাবিতে সৌদি দূতাবাস থেকে পাঠানো আরেক বার্তায় বলা হয়েছে, গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত মিশরের সাবেক প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারকের বিচার না করতে তৎকালীন মিশরীয় কর্তৃপক্ষের ওপর ব্যাপক চাপ দিচ্ছে সংযুক্ত আরব আমিরাত। ২০০৮ সালের একটি ‘ক্ল্যাসিফায়েড অ্যান্ড ভেরি আর্জেন্ট’ মাত্রার একটি বার্তায় সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওয়াশিংটনে সৌদি দূতাবাসকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছিল, একটি আন্তর্জাতিক লিডারশিপ প্রোগ্রামের অংশ হিসেবে মার্কিন রাজধানীতে ইসরাইলি দূতাবাস ঘুরতে গেছে বহু সৌদি ও উপসাগরীয় দেশের শিক্ষার্থী। সে বার্তায় আরও বলা হয়েছে, ইসরাইলি দূতাবাসের কর্মীদের কাছ থেকে রাষ্ট্রদূতের ব্রিফিং পেয়েছে শিক্ষার্থীরা। তারা বিভিন্ন প্রশ্ন করেছে ও ছবি তুলেছে। এ ব্যাপারে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে দূতাবাসকে নির্দেশ দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
উইকিলিকসের ফাঁস করা আরেকটি নথির তথ্যানুযায়ী, লাদেনের জ্যেষ্ঠ পুত্র আবদুল্লাহ বিন লাদেন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পিতার মৃত্যু সনদ চেয়ে আবেদন করেছিলেন। পরে এব্যাপারে তার কাছে সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদের মার্কিন দূতাবাস থেকে একটি চিঠি পাঠানো হয়। শীর্ষ মার্কিন রাষ্ট্রদূত গ্লেন কেইজার চিঠিটিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। ২০১১ সালের ৯ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ, লাদেন নিহত হওয়ার ৪ মাস পর চিঠিটি পাঠানো হয়েছিল লাদেনপুত্র আবদুল্লাহ বিন লাদেনের কাছে। আবদুল্লাহকে পাঠানো ওই চিঠিতে গ্লেন লিখেছিলেন, আপনার পিতা ওসামা বিন লাদেনের মৃত্যু-সনদের ব্যাপারে আপনার আবেদন আমি পেয়েছি। অবশ্য, পরে লাদেনের মৃত্যু-সনদ প্রদান করা হয়নি তার পুত্রের কাছে। সামরিক অভিযানে নিহতদের ক্ষেত্রে মৃত্যু-সনদ পাঠানো নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ বলে জানান গ্লেন কেইজার। এর পরিবর্তে আবদুল্লাহ বিন লাদেনকে তিনি মার্কিন আদালতের বিভিন্ন রেকর্ডপত্র পাঠিয়েছেন। ওই নথিসমূহে লাদেনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে এবং মৃত্যুর কারণে তার বিরুদ্ধে আনীত অপরাধ কর্মকাণ্ডের সব অভিযোগ তুলে নেয়া হয়েছে। গ্লেন লিখেছিলেন, আমি আশা করি মার্কিন সরকারের এই নথিপত্রগুলো আপনার এবং আপনার পরিবারের জন্য সহায়ক হবে। সৌদি আরবে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী পরিবার হিসেবে সুনাম রয়েছে ওসামা বিন লাদেনের পরিবারের। ১৯৯৪ সালে সৌদি আরব লাদেনের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়।
উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ কিভাবে এ নথিসমূহ পেয়েছে, তা স্পষ্ট নয়। অবশ্য, প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে দেয়া বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সম্প্রতি সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ‘ইয়েমেন সাইবার আর্মি’ হ্যাকার সংগঠন একটি বড় ধরনের সাইবার হামলা চালিয়েছিল। তবে এব্যাপারে উইকিলিকস বিস্তারিত আর কোন তথ্য দেয়নি। হ্যাকাররা উইকিলিকসের কাছে কেন বা কিভাবে নথিসমূহ হস্তান্তর করলো, সে ব্যাপারেও কোন কিছু জানানো হয়নি। উইকিলিকসের নীতি মেনেই সূত্রের গোপনীয়তা বজায় রাখা হচ্ছে। এদিকে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ লন্ডনস্থ ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় প্রার্থনা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। সেটার ৩ বছর পূর্তির সঙ্গে ব্যাপক আকারে নতুন গোপন নথিও ফাঁস করলো উইকিলিকস কর্তৃপক্ষ এবং এ প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।

No comments

Powered by Blogger.