যেকোনো প্রকারে সিটি নির্বাচনে জিততে হবে: মন্ত্রী মোশাররফ by একরামুল হক

আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থীর পক্ষে নেতা-কর্মীদের কাজ করার আহ্বান জানিয়ে চট্টগ্রামে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেছেন, ‘তিনটি সিটি করপোরেশনে অবশ্যই যেকোনো প্রকারে হোক আমাদের জিততে হবে।’
গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জিইসি মোড় এলাকার একটি হোটেলে সিটি নির্বাচনে দলের নির্বাচনী কৌশল ঠিক করা নিয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বৈঠকে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর, ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী, ছয়জন সাংসদসহ নগর আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈঠকে মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন না।
মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘আমরা কিন্তু বিগত কয়েকটি সিটি নির্বাচনে পরাজিত হয়েছি। এখন তিনটি সিটি করপোরেশনে আমাদের অবশ্যই যেকোনো প্রকারে হোক জিততে হবে। জিততে হবে এ জন্য যে, ১৫০ জন পেট্রলবোমায় নিহত হয়েছে। যদি পরাজিত হই তাহলে পেট্রলবোমার রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যাবে।...এই রাজনীতি কেউ পছন্দ করছে না। তিন সিটি করপোরেশনে আমাদের জিততে হবে...।’
বৈঠকে দুই প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর ও সাইফুজ্জামান চৌধুরী, সাংসদ এম এ লতিফ, মাঈন উদ্দীন খান বাদল, নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক মেয়র এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসিসহ আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা বক্তব্য দেন।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টি সমর্থিত তিন মেয়র প্রার্থীকে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযাগে গত সোমবার কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, সরকারের কোনো মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী বা উপমন্ত্রী নির্বাচনপূর্ব সময়ে নির্বাচনী প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না।
গতকালের সভায় মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সব ভোটারের কাছে যেতে হবে। অনেকে বলেন, এরা আমাদের রিজার্ভ ভোট, ওখানে না গেলেও চলবে। কিন্তু প্রত্যেকের কাছে যেতে হবে। প্রত্যেকের কাছে গেলে তাঁরা ভোট কনফার্ম (নিশ্চিত) করবেন। প্রত্যেকে মনে করবেন যে, নিজেই প্রার্থী। আমাকে জয়যুক্ত হতে হবে।’ মন্ত্রীর বক্তব্যের রেকর্ড প্রথম আলোর কাছে রয়েছে।
বৈঠকে দেওয়া বক্তব্য আচরণবিধির লঙ্ঘন কি না, তা জানতে মুঠোফোনে মন্ত্রী মোশাররফ হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাঁর ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা যায়নি।
বৈঠকের পর ভূমি প্রতিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে দলীয়ভাবে বসেছি। নির্বাচনের কৌশল নিয়ে কথাবার্তা হয়েছে। বৈঠকে একাধিকবার নির্বাচিত অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা ছিলেন। তাঁরা অভিজ্ঞতা বিনিময় করেছেন।’
এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাননি প্রতিমন্ত্রী বীর বাহাদুর। নগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরীকে বৈঠকের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি দুঃখিত। কিছু বলার নেই।’ সাবেক সাংসদ নুরুল ইসলাম কোনো কথা না বলে গাড়িতে উঠে যান।
নির্বাচনী ওই বৈঠকে মন্ত্রীদের অংশ নেওয়া ও বক্তব্যের বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ মুঠোফোনে প্রথম আলোকে জানান, বৈঠকটি রুদ্ধদ্বার হওয়ায় এর মাধ্যমে সরাসরি আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে, তা বলা যায় না। তবে মন্ত্রীরা কোনো সিদ্ধান্ত দিলে ও তার বাস্তবায়ন করতে হলে এটি নির্বাচনকে প্রভাবিত করে। তা ছাড়া, যেকোনো প্রকারে জিততে চাওয়া সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্তরায়। এই বক্তব্য প্রশাসনকেও প্রভাবিত করতে পারে।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন জাসদের সাংসদ মাঈন উদ্দীন খান বাদল, আওয়ামী লীগের সাংসদ এম এ লতিফ, শামসুল হক চৌধুরী, দিদারুল আলম, মাহফুজুর রহমান মিতা, আশেক উল্লাহ, চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন, কোষাধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আমিনুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেমউদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, উত্তরের সভাপতি নুরুল আলম চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম, তিন শতাধিক নেতা-কর্মী।
বৈঠকের বিষয়ে চট্টগ্রামের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবদুল বাতেন বলেন, কী বৈঠক করেছেন, কাদের নিয়ে বৈঠক করেছেন, আদৌ বৈঠক করেছেন কি না, সে ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.