ইয়েমেনে অসহায় দিন কাটাচ্ছেন বাংলাদেশীরা, ইয়েমেনে বাংলাদেশীদের উদ্ধারে সহায়তা দেবে ভারত

মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক যুদ্ধের কবলে পড়া দেশ ইয়েমেনে যেসব বাংলাদেশী আটকা পড়েছেন তারা বলছেন সেখানে তারা এক রকম অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন।
প্রায় ১১ বছর ধরে সানায় বসবাস করছেন জহিরুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে জানান গত কয়েক দিন ধরে সেখানে মূর্হ মূর্হ বিমান হামলা হচ্ছে।
ইয়েমেনে বাংলাদেশের কোন দূতাবাস নেই। সেক্ষেত্রে কুয়েতের দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে তাদের।
মি. ইসলাম বলছিলেন কুয়েত দূতাবাস থেকে ফোন করে কয়েকজনের খোঁজ নেওযা হয়েছে। তবে এতে মোটেই আশস্ত হতে পারছেন না সেখানকার বাংলাদেশিরা।
দেশে ফিরে আসার ব্যাপারে সহযোগিতা পেতে প্রতিদিন ভারতের দূতাবাসের সামনে লাইনে দাড়িয়ে রয়েছেন কয়েকশ বাংলাদেশী।
মি. ইসলাম বলছিলেন সানাতে রান্না করার জন্য গ্যাস সিলিন্ডারের সংকট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় তারা শুকনা খাবার রাখছেন সাথে।
সব অফিস আদালত বন্ধ হয়ে গেছে। ব্যাংক বন্ধ, আর তাই সব রকম আর্থিক আদান প্রদান বন্ধ হয়ে আছে।
শ্রমিক যারা রয়েছেন তারা বেতন নিতে পারছেন না বলে তিনি জানান।
এছাড়া বিমান হামলা সন্ধ্যা থেকে শুরু করে ফজরের আযান পর্যন্ত চলে। তিনি বলছিলেন এ অবস্থায় এক রকম অসহায় অবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।
সে দেশের হুতি শিয়া বিদ্রোহীরা সুন্নি সরকারকে উৎখাতের পর তাদের বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছে প্রতিবেশী সৌদি আরবের নেতৃত্বাধীন এক সামরিক জোট।
ঢাকার কর্তৃপক্ষ বলছে, ইয়েমেনে মোট বাংলাদেশীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। কিন্তু সেখানকার বাসিন্দারা বলছেন এই সংখ্যা তার তিনগুণ বেশি হবে।
এদিকে নিরাপদে তাদের দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সরকার আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম এবং ভারত সরকারের সাথে কথাবার্তা বলছে।
ইয়েমেনে বাংলাদেশীদের উদ্ধারে সহায়তা দেবে ভারত
যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেনের মৃত্যুকূপে আটকা পড়া বাংলাদেশীদের উদ্ধার করে দেশে ফিরিয়ে আনতে সহায়তা দেবে ভারত। দেশটিতে বাংলাদেশের দূতাবাস না থাকায় সেখানে আটকা পড়াদের উদ্ধারে ভারতের সহায়তা চাওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বলেছেন, দেশটির সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রাথমিক আলাপে সহায়তার বিষয়ে ভারতের সম্মতি মিলেছে বলেও গতকাল দুপুরে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান তিনি। এদিকে সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকাস্থ ভারতীয় হাই কমিশন টুইটার বার্তায় ইয়েমেন থেকে বাংলাদেশী কর্মীদের উদ্ধারে সহায়তায় দিল্লির সিদ্ধান্তের বিষয়টি প্রকাশ করে। তাছাড়া, ইয়েমেনের পার্শ্ববর্তী ওমানে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শেখ সিকান্দার আলী সমপ্রতি ঢাকাকে পাঠানো এক বার্তায়ও দেশটিতে আটকা পড়া কর্মী উদ্ধারে ভারতের সহায়তা পাওয়া যাবে জানিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা চেয়েছেন। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, আটকা পড়া বাংলাদেশীদের উদ্ধারে কায়রোস্থ আইওএম আঞ্চলিক অফিসসহ ইয়েমেনের আশপাশের দেশগুলোর বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে চেষ্টা করছে সরকার। সানায় নিযুক্ত অনারারি কনসালের সঙ্গে ঢাকা নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে পরিস্থিতি বুঝার জন্য। কিন্তু দেশটিতে কোন কমার্শিয়াল ফ্লাইট না থাকা এবং সেখানে স্পেশাল ফ্লাইট পরিচালনায় সৌদি কর্তৃপক্ষের আগাম অনুমতির প্রয়োজন হওয়ায় বাংলাদেশীদের উদ্ধার করা জটিল হয়ে পড়েছে। ওমানসহ বিভিন্ন দূতাবাসের পাঠানো রিপোর্টে দেশটির এডেন বন্দরে এই মুহূর্তে ভারতের জাহাজ রয়েছে এমন বার্তা পাওয়ার পর ঢাকার তরফে ভারতের সহায়তা নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। তবে গতকালের সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব জানিয়েছেন, কেবল ভারত নয়, শ্রমিক উদ্ধারের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম), সৌদি আরব ও কুয়েতের দূতাবাসের সঙ্গে এ নিয়ে ঢাকার যোগাযোগ ও আলোচনা চলছে। দেশটিতে যুদ্ধ শুরুর আগে দেড় থেকে তিন হাজার বাংলাদেশী ছিলেন জানিয়ে সচিব বলেন, বেশির ভাগ বাংলাদেশী এডেন এলাকায় রয়েছেন। এখনও ইয়েমেন সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকা ওই এলাকা ‘তুলনামূলকভাবে নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভারত নীতিগতভাবে রাজি হয়েছে। তারা বলেছে, নিজেদের সব নাগরিককে ফিরিয়ে আনার পর এবং আটকা পড়া বাংলাদেশীরা শনাক্ত হয়ে  গেলে ভারত সহযোগিতা করতে পারে। কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ইয়েমেনের বাড়তি দায়িত্ব  দেয়া আছে। কিন্তু দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব অনেক  বেশি হওয়ায় বর্তমান পরিস্থিতিতে আশপাশের সৌদি, মিশর ও ওমান দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাজে লাগাচ্ছে সরকার। তবে এখনও সেখানে কোন কর্মকর্তা যাননি। এ প্রসঙ্গে সচিব বলেন, “আমরা ইয়েমেনে আমাদের কর্মকর্তাদের পাঠানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে  সেখানে যাওয়ার একমাত্র উপায় হলো সমুদ্রপথ। আমরা আশা করছি, আমরা লোক পাঠাতে পারব।” আটকা পড়া বাংলাদেশীরা যাতে সহজে যোগাযোগ করতে পারেন সে জন্য সানা ও কুয়েতে কয়েকটি  ‘হেল্পলাইন’ নম্বর চালু করা হয়েছে বলে পররাষ্ট্র দপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, যে কোন পরিস্থিতিতে যে কেউ কুয়েতে বাংলাদেশী দূতাবাসের মোবাইল নম্বর ০০৯৬৫ ৫০৫৭ ০৭৫৪, টেলিফোন ০০৯৬৫ ২৪৯১ ৩২০১ এবং  ধসনধংংধফড়ৎ.শঁধিরঃ@সড়ভধ.মড়া.নফ ু ই-মেইলে যোগাযোগ করতে পারবেন। একইসঙ্গে দূতাবাসের কাউন্সিলর এস এম মাহবুবুল আলমের সঙ্গে ০০৯৬৫ ৯৪৯৩ ৪৩৬৩ মোবাইল নম্বরে বা সধযনঁন৫০@ুধযড়ড়.পড়স ই-মেইলে  যোগাযোগ করতে পারেন। দেশটিতে বাংলাদেশের অনারারি কনসাল জেনারেল সালেহ আল ঘালেবির সঙ্গে ০০৯৬৭ ৭৩৩ ৮৫৬ ৯৯৮ মোবাইল নম্বরে ও  এঐঅখঊইও@ণ.ঘঊঞ.ণঊ ই-মেইলে এবং  কনসাল জেনারেলের ছেলে মোহাম্মদ আল ঘালেবির সঙ্গে ০০৯৬৭ ৭৩৫ ৮০০ ২৪৭   মোবাইল নম্বরে  এবং গড়যধসবফ.ধষমযধষবনর@মরু.ফব  ই-মেইলে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশীদের যোগাযোগ করতে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশে আটকে পড়া বিহারিদের পাকিস্তান ফিরিয়ে নেবে না বলে দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পাঠানো চিঠি সম্পর্কে সচিবের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জবাবে তিনি বলেন, এ বিষয়ে দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। আমি এ নিয়ে কোন মন্তব্য করতে চাই না।
জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে দেশের ৪ কোটি লোক: জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ। সমুদ্রে এক মিটার পানি বৃদ্ধি পেলে বাংলাদেশের ২-৪ কোটি মানুষ বাস্তুহারা হবেন। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক এ তথ্য জানান। ‘রিজিওনাল ডায়ালগ অন অ্যা গ্লোবাল ইস্যু, ক্লাইমেট চেঞ্জ ডিজাস্টার অ্যান্ড হিউম্যান  মোবাইলিটি ইন সাউথ এশিয়া ইন দ্য ইন্ডিয়ান ওশেন রিজিওন’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে সচিব বলেন, ২০০৮ থেকে বিশ্বে প্রতিবছর ২৭ মিলিয়ন মানুষ জলবায়ু সংকটের কারণে বাস্তুচ্যুত হচ্ছেন। সংকট মোকাবিলায় সবার সম্মিলিত প্রয়াস প্রত্যাশা করেন তিনি। দুপুরের ওই আয়োজনে ঢাকায় নিযুক্ত সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত খ্রিশ্চান ফোর্সি, নরওয়ের চার্চ দ্য অ্যাফেয়ার্সের হাগার্নি হাগ এবং আইওএম বাংলাদেশ প্রধান শরদ দাসসহ পররাষ্ট্র দপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘দি মেনসন ইনিশিয়েটিভ’র উদ্যোগে আগামী ৩-৫ই এপ্রিল খুলনায় জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক এক সম্মেলনে বাংলাদেশসহ ১৫টি দেশের প্রতিনিধিরা অংশ  নেবেন। দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে-ভারত, মিয়ানমার, নেপাল, সুইজারল্যান্ড, থাইল্যান্ড, যুক্তরাজ্য, আফগানিস্তান, ভুটান, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, মরিশাস, ওমান, মাদাগাস্কার ও ফিলিপাইন।

No comments

Powered by Blogger.