যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট খেয়ে বলাৎকারের চেষ্টা করায় মন্টুকে খুন করি -আদালতে রাজুর স্বীকারোক্তি by ওয়েছ খছরু

অনৈতিক কাজের জন্য মন্টু দেবের নিজ প্রতিষ্ঠানের ধারালু ছোরা দিয়ে
ঘুমন্ত অবস্থায় গলা কেটে ব্যবসায়ী মন্টু দেবকে হত্যা করে পালিয়ে যায়
হত্যাকারী। গতকাল শুক্রবার সিলেটের চীফ জুডিশীয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ২য়
জেরিন সুলতানার আদালতে ১৬৪ ধারায় মন্টু হত্যা মামলার প্রধান আসামী
জুবায়ের আহমদ মাছুম ওরফে রাজু স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে সে
এসব কথা বলে। ম্যাজিস্ট্রেট জেরিন সুলতানার খাস কামরায়
শুক্রবার বিকেলে ২ ঘন্টা জবানবন্দীর রেকর্ডের পর আদালত রাজুকে
জেল হাজতে প্রেরণ করার নির্দেশ প্রদান করেন। ঘাতক রাজু নেত্রকোনা
জেলার মদন থানার বাঘমারা গ্রামের আব্দুন নূর ওরফে সবুজ মিয়ার
পুত্র। গত এক মাস পূর্বে সে সিলেটের ওসমানীনগরে রবিদাস গ্রামের
তার মামা সুরত মিয়ার বাড়িতে কাজের সন্ধানে আসে। ঘাতক রাজুকে
গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার তাজপুর বাজার থেকে
গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে রাজু মন্টু দেবের ব্যবহৃত
মোবাইল ফোনটি তার মামাতো ভাই আব্দুর রহিমের নিকট বিক্রি করেছে
বলে তথ্য প্রদান করে। এর প্রেক্ষিতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গত শুক্রবার
রাতে রাজুর মামাতো ভাই উপজেলার রবিদাস গ্রামের সুরত মিয়ার
ছেলে আব্দুর রহিমকে গ্রেফতার করে তার নিকট থেকে নিহত মন্টু
দেবের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে। আব্দুর রহিমও আদালতে
স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। রাজু ও রহিমের হত্যার
সাথে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে স্বীকারের বরাত দিয়ে মামলার
তদন্ত কর্মকর্তা এসআই সনক কান্তি দাশ বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
“গভীর রাতে মন্টু দেব যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট খেয়ে আমাকে বলাৎকারের চেষ্টা করে। আমার সঙ্গে জোর-জবরদস্তি চালায়। আমি বারবার বাধা দিই। কিন্তু কোনভাবেই ক্ষান্ত হচ্ছিল না মন্টু দেব ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে আমি দোকানে থাকা মাফলার ও রড দিয়ে মন্টুকে হত্যা করে পালিয়ে যাই।” গতকাল সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক জেরিন সুলতানার কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এ কথা জানায় ঘাতক রাজু। সোমবার ওসমানীনগর থানার সামনের একটি দোকানে মন্টু দেবকে (৪৫) খুন করে তার মোবাইল ফোন সেট নিয়ে পালিয়ে যায় ঘাতক রাজু (১৯)। ঘটনার দুদিন পর বৃহস্পতিবার ওসমানীনগর থানাপুলিশ রাজুকে নেত্রকোনো থেকে গ্রেপ্তার করে।
সোমবার প্রতিদিনের ন্যায় মন্টু দেব রাত ১২টার দিকে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ওসমানীনগর থানার নবনির্মিত ভবনের লেবার রাজু নামের এক ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে শুয়েছিলেন। ওই দিন ভোর সাড়ে ৬টার দিকে স্থানীয় লোকজন মন্টু দেবের দোকানে চা খেতে এলে দেখা যায় মন্টু দেবের দোকানের শাটার খোলা এবং দোকানের ভেতর তার লাশ পড়ে রয়েছে। বিষয়টি ওসমানীনগর থানা পুলিশকে জানানো হলে পুলিশ মন্টু দেবের লাশ উদ্ধার করে। লাশ উদ্ধারের সময় নিহত মন্টু দেবের মুখের ভেতর মাফলার ঢুকানো ও গলার বাম পাশে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মন্টু দেবের ভাই নবীন দেব বাদী হয়ে ওসমানীনগর থানায় হত্যা মামলা করেন।
এদিকে, ঘটনার পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে। এবং এক পর্যায়ে ঘটনার সঙ্গে রাজু নামের এক তরুণের সম্পৃক্ততা পায়। ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মুরসালি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ওসমানীনগরের মুদির দোকান ব্যবসায়ী মন্টু দেব হত্যায় মাছুম আহমদ রাজু ও তার মামাতো ভাই আবদুর রহিমকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে রাজু আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। হত্যাকাণ্ডের পর লাশ উদ্ধার করতে গেলে পুলিশ মন্টুর দোকান থেকে দুটি যৌন উত্তেজক ‘এগ্রা’ ট্যাবলেটের প্যাকেট উদ্ধার করে। তবে প্যকেটগুলোতে একটিতেও ট্যাবলেট ছিল না। এদিকে, গ্রেপ্তারের পুলিশ রাজুকে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। রাজু পুলিশের কাছে নিজে খুন করেছে বলে স্বীকার করে। পরে গতকাল দুপুরে পুলিশ ঘাতক রাজুকে আদালতে হাজির করে। গ্রেপ্তারকৃত মাসুম আহমদ রাজু নেত্রকোনা জেলার মদনের আবদুন নুরের ছেলে। ঘটনার পরপরই সে মোবাইল ফোনটি তার মামাতো ভাইয়ের কাছে রেখে নেত্রকোনো চলে যায়। পরে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এদিকে, গতকাল দুপুর আড়াইটা থেকে বিকাল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত প্রায় দুই ঘণ্টা সিলেটের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতে রাজু নিজের দোষ স্বীকার করে।
জবানবন্দিতে রাজু জানায়, ওসমানীনগরের রবিদাস পুরের সুরত মিয়া বাড়ি তার মামার বাড়ি। ওখান সে বসবাস করতো। সে সুবাদে মণ্টুর দোকান থেকে বাজার খরচ করতো। যার কারণে নিহত মন্টুর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠে। সোমবার সে দোকানে এলে মধ্যরাত হয়ে যায়। ফলে নিহত মন্টু রাজুকে দোকানে থেকে যাওয়ার কথা বলে কাকুতি মিনতি করে। একপর্যায়ে রাজু সেখানে থেকে যায় বলে আদালতে জানায়। কিন্তু গভীর রাতে নিহত মন্টু দেব যৌন উত্তেজক ট্যাবলেট এগ্রা খেয়ে রাজুকে বলাৎকার করার চেষ্টা করে। রাজু তাতে রাজি না হলে মন্টু ধস্তাধস্তি শুরু করে। একপর্যায়ে দোকানে থাকা মাফলার ও রড দিয়ে মণ্টুকে হত্যা করে পালিয়ে যায়। সে পালানোর সময় মন্টুর মোবাইল ফোন নিয়ে যায় এবং ফোনটি নিয়ে ওসমানীনগরের রবিদাস পুরের সুরত আলীর ছেলে আবদুর রহিমের কাছে রেখে যায় বলে জানায়।

No comments

Powered by Blogger.