জনপ্রতিনিধি অপসারণ- আইন প্রয়োগের একচোখা নীতি পরিহার করুন

প্রথম আলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, মামলার জালে জড়িয়ে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও উপজেলা পরিষদের অন্তত ২৫ জন বিএনপি ও জামায়াত সমর্থক নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে গত এক বছরে সাময়িক বরখাস্ত কিংবা দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং মামলা ও গ্রেপ্তারের ভয়ে সমসংখ্যক জনপ্রতিনিধি পালিয়ে রয়েছেন। এ তথ্য যেমন অস্বাভাবিক তেমনি উদ্বেগজনক। কিন্তু তার চেয়েও বিস্ময়কর হলো, একই অভিযোগে অভিযুক্ত ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী জনপ্রতিনিধিরা উচ্চ আদালতে আপিল করে কিংবা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ছুটি নিয়ে স্বপদেই বহাল রয়েছেন।
আইনের গুণাগুণ বিচারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হলো, সেই আইন নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না। স্থানীয় সরকার সংস্থার জনপ্রতিনিধিদের ক্ষেত্রে দ্বিবিধ ব্যত্যয় ঘটেছে। বিরোধী দলের সমর্থক জনপ্রতিনিধি হলে আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার এবং সরকারি দলের সমর্থক হলে আইনের গতি থেমে যাওয়া কোনোভাবে কাম্য হতে পারে না। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করা হয়েছে। কিন্তু সেটি সবার ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য হলো না কেন? সরকারি দলের সমর্থক জনপ্রতিনিধি ছুটির দরখাস্ত দিয়ে স্বপদে বহাল থাকলেও বিরোধী দলের সমর্থক জনপ্রতিনিধিরা সেই সুযোগ থেকে কেন বঞ্চিত হবেন?
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ব্যক্তিমাত্র নন, তাঁরা নিজ নিজ প্রতিষ্ঠান এবং এলাকাবাসীর প্রতিনিধিত্ব করেন। তাই সেই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয় এমন কোনো পদক্ষেপ মন্ত্রণালয় নিতে পারে না। এ ক্ষেত্রে প্রামাণ্য অভিযোগ ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানিমূলক মামলার মধ্যে ফারাক থাকতে হবে। অন্তত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দিতে হবে। সবার বেলায় সেই সুযোগ না দেওয়া আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন।
স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে সরকার একদিকে ক্ষমতাশালী করার কথা বলবে, অন্যদিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সেগুলো অকার্যকর রাখবে—এই দ্বৈতনীতি চলতে পারে না। মন্ত্রণালয় বা প্রশাসন এভাবে জনগণের ভোটে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে, তা যে স্তরেরই হোক না কেন, সরিয়ে দিতে পারে না।

No comments

Powered by Blogger.