৮৩ দিন ধরে তালাবদ্ধ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলতে দিচ্ছে না পুলিশ

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কলাপসিবল গেটের ভেতরে পড়ে থাকা
সংবাদপত্রের ওপর ধুলার আস্তরণ। ৮৩ দিন ধরে কার্যালয়টি তালাবদ্ধ।
ইনসেটে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়। গতকাল তোলা ছবি l প্রথম আলো
রাজধানীর নয়াপল্টনে ৮৩ দিন ধরে তালাবদ্ধ বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় খুলতে দিচ্ছে না পুলিশ। সেখানে পালা করে পাহারায় রয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সদস্যরা। সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও আশপাশে দায়িত্ব পালন করছেন। একই অবস্থা কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের উল্টোদিকের ঢাকা মহানগর (ভাসানী ভবন) কার্যালয়েরও।
বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, চলমান হরতাল-অবরোধ কর্মসূচিতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের তৎপরতার কারণে নেতা-কর্মীরা কার্যালয় দুটি এড়িয়ে চলছেন। আবার পুলিশ কার্যালয় দুটির মূল ফটকে তালা মেরে চাবি নিয়ে যাওয়ায় তা খুলতেও পারছেন না কর্মচারীরা। ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে গত মঙ্গলবার দুপুরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের কর্মচারী দলিল উদ্দিন তালা খোলার জন্য পল্টন থানায় যান। কিন্তু ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রাজি হননি। এর ফলে স্বাধীনতা দিবসে কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যায়নি বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দলিল উদ্দিন গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘অফিসের তালা খুলে দিতে আমি ওসি স্যারের কাছে গেছি। উনি আমারে ডিসি স্যারের লগে কথা কইতে কন। পরে আমার অনুরোধে ওসি স্যার ডিসির লগে কথা কইছেন। ডিসি স্যার নাকি কইছেন কমিশনারের লগে কথা কইতে। কমিশনার স্যার নাকি ব্যস্ত। হেরপর আর কিছু অয় নাই।’
গত ৩ জানুয়ারি মধ্যরাত থেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তালা ঝুলছে। ওই দিন রাত ১২টার দিকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের একটি দল বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীকে আটক করে রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে নিয়ে যায়। তখন ওই কার্যালয়ে কয়েকজন কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। পরে ডিবি পুলিশ কার্যালয় থেকে সব কর্মচারীকে বের করে ফটকে তালা দিয়ে চাবি নিয়ে চলে যায়। এর পর থেকেই ওই কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
অবশ্য পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘তাদের অফিসের (বিএনপির) তালা তারা খুলবে না বন্ধ রাখবে, সেটা তাদের ব্যাপার। এতে আমাদের কী।’ বিএনপির অফিসের কর্মচারী দলিল উদ্দিন মঙ্গলবার তালা খুলে দিতে চাবির জন্য তাঁর কাছে গিয়েছিলেন কি না, এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমার কাছে এসেছিল। আমি বলেছি, তালা খোলা না খোলা আপনাদের ব্যাপার।’ পুলিশ তালা দেয়নি, চাবিও তাদের কাছে নেই বলে দাবি করেন তিনি।
ওই কার্যালয়ের বয়োজ্যেষ্ঠ কর্মচারী দলিল উদ্দিন জানান, অফিস বন্ধ থাকায় তিন মাস ধরে কার্যালয়ের পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও টেলিফোন বিল বকেয়া পড়েছে। কার্যালয়ের ১৪ জন কর্মচারীর বেতনও বন্ধ। তিনি আরও জানান, কর্মচারীদের বেতনের জন্য যে তবহিল আছে, তার চেক বইতে সই করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনিও জেলে আছেন। এ অবস্থায় ১৪ কর্মচারীর দু-তিনজন ছাড়া বাকিরা গ্রামের বাড়ি চলে গেছেন।
গতকাল নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ফটকে গিয়ে দেখা যায়, কলাপসিবল গেটের ভেতরে বেশ কিছু পত্রিকা মেঝেতে পড়ে আছে। তাতে ধুলা-বালির আস্তরণ জমেছে।
কর্মচারীরা কার্যালয়ের তালা খুলতে চাইলে পুলিশ বাধা দেবে কি না, জানতে চাইলে পল্টন থানার ওসি মোরশেদ আলম বলেন, ‘তাদের অফিস। তালা খুলবে, আমরা বাধা দেব কেন?’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘সরকার বা পুলিশ যতই টালবাহানা করুক, মানুষ জানে বিএনপির কার্যালয়ে কারা তালা মেরেছে, কারা রিজভীকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক ও নিন্দার ব্যাপার যে পুলিশ তালা খুলছেও না, আবার বলছে তালা মারেনি। একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় একটি বড় রাজনৈতিক দলের প্রধান কার্যালয় এভাবে তালাবদ্ধ করে রাখার পরিণতি ভালো হবে না।’

No comments

Powered by Blogger.