এক আরব শেখের বিয়ে সন্তান ও বিলাসী প্রতারনার জীবন by মেহেদী হাসান

সাঈদের বয়স ৬ বছর। কিন্তু আজো পিতার চোখের দিকে তাকানোর সৌভাগ্য হয়নি তার। কারণ তার মা-বাবার বিয়ে হয়েছিল গোপনে এবং তার জন্মের পর তার পিতা তাকে সন্তানের স্বীকৃতি দিতে অস্বীকার করে। সাঈদের পিতা বিশ্বের শীর্ষ ধনীদের একজন। তার নাম শেখ আহমেদ বিন সাঈদী আল মাখতুম। বিশ্বের অন্যতম এ ধনকুবের দুবাই আমিরের একজন চাচা। আর সাঈদের মা নিভিন এল গামাল। তার বাড়ি মিশর। আর সেও মিশরের একটি ফ্যাশনঅ্যাবল ধনী পরিবারের মেয়ে। শেখ আহমেদ বিন সাঈদ আল মাখতুমের বয়স এখন ৫৬ আর নিভিন এল গামালের ৩৮। কিভাবে তাদের দুজনের পরিচয় এবং গোপন বিয়ে হয়েছিল সে বিষয়ে নিভিন এল গামাল বলেন, তিনি ইন্টেরিয়র ডিজাইনার হিসেবে কাজ করছিলেন। ২০০৪ সালে একদিন এমিরেটস টাওয়ার হোটেলে তার এক বান্ধবীর সাথে লাঞ্চ করছিলেন। এসময় পাশের টেবিলে বসা ছিলেন শেখ আহমেদ। তার সাথেও অনেক বন্ধুবান্ধব ছিল। পাশপাশি টেবিলে বসে লাঞ্চ করার এক পর্যায়ে শেখ আহমেদের সাথে তার কথা হয়। শেখ আহমেদ তাকে জানানয় সে একজন ব্যবসায়ী। এসময় আহমেদ তার কাছ থেকে ফোন নম্বর নেয়। এর ২০ মিনিট পর শেখ আহমেদ তাকে ফোন করে রাতে ডিনারের আমন্ত্রণ জানায় । সে তাতে সাড়া দিয়ে তার বান্ধবীদের ডিনারে যোগ দেয়। নিভিন বলেন, আমি যেহেতু ব্যবসা করছিলাম এবং শেখ আহমেদও যেহেতু ব্যবসায়ী তাই সে আমার একজন ভাল ক্লায়েন্ট হতে পারে এ আশা ছিল। এছাড়া তার আর কোন পরিচায় আমার জানা ছিলনা। নিভিন বলেন, এর একমাস পরে আমি লন্ডনে যাই এবং সেখানে একটি প্রাইভেট জেটে করে আসেন শেখ আহমেদ। সে আমাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। নিভিনের মতে সেও তখন আহমেদের প্রেমে পড়ে যায়। সে শেখ আহমেদের প্রতি খুবই দুর্বলতা অনুভব করে যা সে আগে কখনো অন্য কোন পুরুষের প্রতি করেনি। এরপর তারা দুজনে একসাথে বসবাস শুরু করে। কখনো আহমেদের নাইটসব্রিজ ফ্লাটে আর কখনো দুবাইর বিলাসবহুল ইয়টে (ব্যক্তিগত প্রমোদ তরী)। ধনকুবের শেখ আহমেদ কর্তৃক একের পর এক দামী গিফটে ভেসে যেতে লাগল নিভিন এল গামেল। সোনা, হিরার দামী গহনা, মূল্যবান সব পোশাক, ব্যগ, জুতা, শোপিস আসতে লাগল বানের মত। শেখ আহমেদের বিলাসবহুল জীবন যাপনে বিমোহিত হতে লাগল নিভিন। দামী উপহার দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেনি আহমেদ, কমতি ছিলনা নিভিনের প্রতি ভালোবাসায়ও। তার প্রতি বেশ যত্নশীল ছিল সে। সকালে নিভিন ঘুম থেকে ওঠার আগেই তার ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে তার দিকে এগিয়ে দিত সে। এভাবে চলার পর ২০০৭ সালে তাদের বিয়ে হয় খুবই গোপনে। দুজন মাত্র অপিরিচিত পুরুষকে নিয়ম অনুযায়ী সাক্ষী মানা হয় এবং একজন ইমাম তাদের বিয়ে পড়ান। নিভিন জানান, রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্য হিসেবে বিদেশী কোন মেয়েকে বিয়ে করা নিষিদ্ধ ছিল আহমেদের জন্য। সে কারনে সে এটা মেনে নিয়েছিল। আহমেদ তাকে জানিয়েছিল বিয়ের পর শিঘ্রই সে এটা প্রকাশ করবে। কিন্তু নিভিনের মতে সব পাল্টে গেল যখন সে তাকে জানাল তার গর্ভবতী হবার খবর। এরপর আহমেদ তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। এরই মধ্যে শেখ আহমেদ তার চাচাত বোনকে বিয়ে করে। সাঈদ জন্মের আগে নিভিন চলে যায় লসঅ্যাঞ্জেলস। সেখানেই ২০০৮ সালে জন্ম হয় সাঈদের। আহমেদ তাকে পিতার পরিচয় দিতে অস্বীকার করে। এরপর নিভিন লন্ডনে ফিরে এসে দীর্ঘ আইনী লড়াইয়ে নামে। অবশেষে পিতৃত্ব পরীক্ষা শেষে লন্ডনের আদালত রায় দেয় শেখ আহমেদ বিন সাঈদী আল মাখতুমই হল সাঈদের পিতা। আদালত তাকে বাধ্য করে ২১ বছর পর্যন্ত খরচ বহন করার জন্য । এ বাবদ মাসিক ১৫ হাজার পাউন্ড করে প্রদানের জন্য আহমেদের প্রতি নির্দেশ দেন আদালত। শেখ আহমেদ তা করে যাচ্ছেন। কিন্তু সন্তানের মুখোমুখি তিনি হননি আজো। এরই মধ্যে নিভিনের ওপর আবার বিপর্যয় নেমে এসেছে। যুক্তরাজ্য সরকার তাকে লন্ডন ত্যাগরে নির্দেশ দিয়েছে। তাই গত সপ্তাহে আবার নিভিন আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন লন্ডনে তার অবস্থান নিশ্চিত করার জন্য। কারণ লন্ডনে থাকতে না পারলে তিনি তার প্রাক্তন স্বামী শেখ আহমেদের কাছ থেকে কোন ভরনপোষন পাবেননা। মিশন ফিরে গেলে আবার নতুন করে তাকে আইনী লড়াইয়ে নামতে হবে। নতুন আদেশ পেতে হবে। সর্বশেষ লন্ডন ত্যাগের সরকারি আদেশে বিপর্যন্ত নিভিন জানান, তার নিজের জন্য সে যতটা না দু:খিত তার চেয়ে বেশি অনুশোচনা ভোগ করেন তার ছয় বছর বয়সী সন্তান সাঈদের জন্য। কারণ সে আজো তার পিতার চোখের দিকে তাকানোর সুযোগ পায়নি। সে তার পিতা সম্পর্কে সব সময় জিজ্ঞাসা করে। আমি তাকে শুধু মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছি একের পর এক। লন্ডন ত্যাগের সরকারি নির্দেশ বিষয়ে নিভিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমি যুক্তরাজ্যে কোন বোঝা নেই। আমার যথেষ্ট সম্পদ আছে। সাঈদের পিতা আমাদের প্রতি মাসে ১৫ হাজার পাউন্ড দিচ্ছে। আমাদের স্বাস্থ্য সেবাও যুক্তরাজ্য সরকারকে ফ্রি বহন করতে হয়না।
সূত্র : ডেইলি মেইল অনলাইন

No comments

Powered by Blogger.