কোটি টাকা ব্যয়ে সমালোচনা by কাজী সোহাগ

সংসদে শুধু বিরোধী জোটের সমালোচনা করেই ব্যয় হচ্ছে কোটি টাকা। বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে এ টাকা ব্যয় হচ্ছে সংসদ সচিবালয়ের। ১৯শে জানুয়ারি থেকে শুরু হওয়া ১০ম জাতীয় সংসদের ৫ম অধিবেশনে এ পর্যন্ত  ৯টি কার্যদিবস শেষ হয়েছে। প্রতিটি কার্যদিবসেই প্রায় ৩০ মিনিট ধরে সমালোচনায় অংশ নিয়েছেন সরকার দলীয় ও শরিক দলের এমপিরা। গত কয়েক দিনের সংসদ অধিবেশন পর্যালোচনা করে দেখা যায় ৪ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে প্রায় ১০ জন এমপি সমালোচনায় অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে বেশির ভাগ হয়েছে পয়েন্ট অব অর্ডারে। আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী সংসদ অধিবেশনে প্রতি মিনিটের জন্য ব্যয় হয় প্রায় ৮৫ হাজার টাকা। এ হিসেবে ৪ ঘণ্টায় সংসদের ব্যয় ২ কোটি ৪০ হাজার টাকা। পয়েন্ট অব অর্ডারের নামে দলীয় ও ব্যক্তিগত বক্তব্য দেয়ায় এ গচ্চা।  নিয়ম অনুযায়ী সংবিধান ও সংসদের কার্যপ্রণালি বিধি লঙ্ঘন হয় এমন বিষয় নিয়ে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখতে পারেন এমপিরা। কিন্তু ঘটছে উল্টোটা। বিষয় হিসেবে উঠে আসছে, বিএনপি, খালেদা জিয়া ও তার পরিবারের কঠোর সমালোচনা। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ৩০১ ধারায় বলা হয়েছে ‘কোন বৈধতার প্রশ্নকে এই বিধিসমুহের ও সংসদের কার্যাবলী নিয়ন্ত্রণকারী সংবিধানের অনুচ্ছেদসমূহের ব্যাখা ও কার্যকারিতা সম্পর্কে এবং স্পিকারের ক্ষমতার আওতাভুক্ত হইতে হইবে।’ দ্বিতীয় ধারায় বলা হয়েছে ‘কেবল সংশ্লিষ্ট সময়ে সংসদের বিবেচনাধীন বিষয়ের উপর বৈধতার প্রশ্ন উত্থাপন করা যাইতে পারে।’ কাগজে-কলমে পয়েন্ট অব অর্ডার নিয়ে এ বিধান থাকলেও মানছেন না কেউ। হাত তুলে সিনিয়র মন্ত্রী ও এমপিরা দাঁড়ালে অনেকটা অসহায় অবস্থায় পড়েন স্পিকার। বিধান উপেক্ষা করে রেওয়াজ মানতে মাইক দেন তাদের। কয়েকটি অধিবেশন পর্যালোচনা করে দেখা যায়, হাতে গোনা কয়েক এমপি ঘুরে ফিরে পয়েন্ট অব অর্ডারে বক্তব্য রাখেন। এ তালিকায় আছেন, আমির হোসেন আমু, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, তোফায়েল আহমেদ, হাসানুল হক ইনু, মাঈনউদ্দিন খান বাদল, হাজী সেলিম, আবুল কালাম আজাদ ও রুস্তম আলী ফরাজী। সংসদের কার্যক্রম নিয়মিত পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল অব বাংলাদেশ এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান এর আগে বিষয়টি নিয়ে মানবজমিনকে বলেন, সংসদ হচ্ছে সর্বশীর্ষ আইন প্রণেতাদের স্থান। সেখানে বিধি লঙ্ঘন করে আবার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়াটা কোন অবস্থাতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা একটি অনৈতিক কাজ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে স্পিকারের আরও শক্তভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। পাশাপাশি সকল সংসদ সদস্যদেরও দায়িত্ব রয়েছে। তারা জানেন কোন পয়েন্টে কোন কথা বলা যায় আর কোনটা বলা যায় না। ২০শে জানুয়ারি পয়েন্ট অব অর্ডারে হরতাল অবরোধের নামে বিএনপি-জামায়াতের নাশকতা বন্ধে আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান সরকারি ও বিরোধী দলের এমপিরা। তারা বলেন, সন্ত্রাস সহিংসতা কোন রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি হতে পারে না। তাই দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে অপারেশন ক্লিন হার্ট অথবা যৌথবাহিনী নামিয়ে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ এবং খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে মানবতা বিরোধী অপরাধে বিচার করার দাবি করেন। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে কোন সংলাপ বা আলোচনা না করারও দাবি জানান তারা। বিএনপি জামায়াতকে জঙ্গি সংগঠন উল্লেখ করে এ দল দু’টিকে নিষিদ্ধ করারও দাবি জানান তারা। ২২শে জানুয়ারি একই পয়েন্টে এমপিরা বলেন, জনগণের জীবন রক্ষায় খালেদা জিয়াকে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতেই হবে, এক্ষেত্রে কোন দয়া-মায়ার সুযোগ নেই। একজন অপরাধীর (খালেদা জিয়া) স্থান কোন কার্যালয় বা অন্য কোথাও নয়, একমাত্র স্থান হচ্ছে জেলখানা। আর খালেদা জিয়া যে সহিংস ও নিষ্ঠুর পথে হাঁটছেন, সেই পথেই একদিন তিনি নিঃশেষ হয়ে যাবেন। জনবিচ্ছিন্ন খালেদা জিয়া আজ দেশের ১৬ কোটি মানুষকে অবরোধ করেছেন, জনগণকে মুক্তিপণ হিসেবে ব্যবহার করছেন। জনসমর্থনহীন সন্ত্রাসী-জঙ্গিদের দিয়ে খালেদা কোনদিন কোনকিছু আদায় করতে পারবে না। আগেও খালেদা জিয়া পরাজিত হয়েছেন, এবারও হবেন।

No comments

Powered by Blogger.