সাক্ষাৎকার: জনগণ আম আদমি পার্টিকে জয়ী দেখতে চায় -অরবিন্দ কেজরিওয়াল

প্রশ্ন :গত বছরের নির্বাচনের সঙ্গে এবারের নির্বাচনের পার্থক্য কী?
উত্তর :গতবার আমাদের দল নতুন ছিল। আম আদমি পার্টি কী তা জনগণের বোধের মধ্যে আনা প্রয়োজন ছিল। তখন জনগণকে সচেতন করা ও আমরা যে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে সক্ষম তা বোঝানোরও প্রয়োজন ছিল। এখন মানুষ জানে আমরাও রাজনীতির হিসাবের মধ্যে এসে গেছি।
প্রশ্ন : আপনাদের অবস্থা কেমন?
উত্তর :বিভিন্ন জরিপের ফলে দেখা গেছে, আমাদের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা রয়েছে এবং আমরা অন্যান্য দল থেকে এগিয়ে রয়েছি। দিলি্লতে দলের (এএপি) ৪৯ দিনের সরকার পরিচালনার সময় আমাদের পারফরম্যান্সকে মানুষ এ ক্ষেত্রে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। আমাদের তখনকার সরকার সম্পর্কে বিরূপ সমালোচনা করে দেওয়া বিজ্ঞাপন বারবার প্রচার করা নিয়ে সাধারণ মানুষ অস্বস্তি অনুভব করছে। মানুষ এখন সেসবকে পেছনে ফেলে দিয়ে আমরা যাতে আসন্ন নির্বাচনে জয়ী হই তাই চাইছে।
গেলবার কেউ বিশ্বাস করেনি, দিলি্লর বিধানসভা নির্বাচনে আম আদমি পার্টির পক্ষে একটা জনস্রোত সৃষ্টি হয়েছে এবং সবাই আমাদের দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জিততে পারি বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিল। শেষ পর্যন্ত ওই নির্বাচনে আমরা দিলি্ল বিধানসভার মোট ৭০টি আসনের মধ্যে ২৮টি আসন লাভ করতে সক্ষম হই। এবারের নির্বাচনে ইত্যবসরে আম আদমি পার্টির পক্ষে ব্যাপক জনসমর্থন লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবং এবার আমাদের ভোটার জনগণ ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনবেই।
প্রশ্ন :বিজেপি যখন তাদের দিলি্লর ভাবি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে জনপ্রিয় কিরণ বেদিকে উপস্থাপন করছে, তখন আপনারা তার প্রভাবকে কীভাবে মোকাবেলা করবেন?
উত্তর :এটা হলো তাদের সর্বশেষ প্রচেষ্টা, যেটা ইতিমধ্যে বুমেরাং হয়েছে।
প্রশ্ন :আপনি আম আদমি পার্টির এক সময়কার নেত্রী সাজিয়া লিমিসহ আরও যারা বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন বা দিচ্ছেন সে ব্যাপারে কী বলবেন?
উত্তর :কিছু লোক আমাদের দলত্যাগ করে অন্য দলে চলে যাওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক। তবে নতুন করে নির্বাচনের আগে দিলি্লর ৩০ হাজার মানুষ আম আদমি পার্টিতে যোগ দিয়েছে, যেটাকে আমি সুখবর হিসেবে অভিহিত করতে পারি। আমাদের দলের সংগঠন আরও বিস্তৃত হয়েছে এবং আমাদের দলের সমাবেশগুলোতে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিজেপির সমাবেশগুলোতে এমনকি বড় নেতাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশগুলোতেও আমাদের সমাবেশগুলোর কাছাকাছি সংখ্যক মানুষকেও উপস্থিত হতে দেখা যাচ্ছে না।
প্রশ্ন :প্রার্থিতা নিয়ে দলের মধ্যে কিছুটা অসন্তোষ রয়েছে!
উত্তর :এসবই হলো পরিকল্পিত কাহিনী। আমরা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যাবতীয় প্রক্রিয়া যথাযথ অনুসরণ করেছি। প্রার্থিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে চরিত্র, অপরাধ ও দুর্নীতি বিষয়ে কোনো আপস করা হয়নি।
প্রশ্ন :আসন্ন নির্বাচনে আপনার দল যদি জয়লাভ করে তাহলে দিলি্লবাসীকে আপনারা কী উপহার দেবেন?
উত্তর :আমরা দিলি্লর জনগণকে ঘুষ ও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি থেকে মুক্ত করব। আমাদের একটা যোগ্য টিম রয়েছে, যারা দিলি্ল সংলাপের মাধ্যমে ভালো পরিকল্পনা প্রস্তুত করেছে। নারীদের নিরাপত্তা এবং জলবিদ্যুৎ, অবকাঠামো, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিত করা হলো আমাদের অগ্রাধিকারের বিষয়।
প্রশ্ন :বিজেপি এবার কোনো মেনিফেস্টো দিচ্ছে না নির্বাচনের সময়...
উত্তর :কারণ তাদের কোনো কর্মসূচিই নেই।
প্রশ্ন : লোকপাল, দুর্নীতি ও কালো টাকার মতো আপনার ইস্যুগুলো বিজেপি হাইজ্যাক করেছে...
উত্তর :এসব বিষয়ে কেবল কথা বলা বা লেখাই যথেষ্ট নয়। তারা এসব বিষয়ে কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। বিজেপি বলেছে, তারা মূল্যস্ফীতি হ্রাস করবে কিন্তু এ ব্যাপারে ভোটে জেতার মতো কোনো পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি। তারা বিদ্যুৎ চার্জ ৩০ শতাংশ হ্রাস করবে বলেছে। পক্ষান্তরে তারা দু'বারে বিদ্যুৎ চার্জ ১৫ শতাংশ বৃদ্ধি করেছে। এখন মানুষ বলা শুরু করেছে যে, বিজেপি জাতীয় নির্বাচনের আগে অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল; কিন্তু নির্বাচনে জয়লাভ করার পর তারা এর কিছুই বাস্তবায়ন করেনি বরং এর উল্টোটাই করছে। এখন বিজেপির ওপর মানুষের আস্থা নেই এবং আম আদমি পার্টির ব্যাপারে তারা আস্থাবান। কারণ তারা জানে যে, এই দল যা প্রতিশ্রুতি দেয় তা বাস্তস্নবায়ন করে।
প্রশ্ন :লোকসভা নির্বাচনের পর বিজেপি যে ক'টা রাজ্য বিধানসভার নির্বাচন হয়েছে তার সবক'টাতেই বিজয়ী হয়েছে ...
উত্তর :জাতীয় নির্বাচনে তারা দিলি্লতেও বিজয়ী হয়েছে। এখন তাদের ২০০ সংসদ সদস্য দিলি্লতে ঘাঁটি গেড়ে বসে আছে। সব মন্ত্রী তাদের মন্ত্রণালয়ের কাজকর্ম বাদ দিয়ে দিলি্লর নির্বাচনের জন্য কাজ করছেন। তাদের জনসভাগুলোতে এখনও লোকসমাগম তেমন হচ্ছে না।
প্রশ্ন :দিলি্লতে আম আদমি পার্টির সরকার প্রতিষ্ঠিত হলে সে সরকারকে কি কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারকে সহযোগিতা করবে?
উত্তর :এর আগে দিলি্লতে কংগ্রেস সরকার ছিল এবং কেন্দ্রীয় সরকারে ছিল ইউপিএ। ওই উভয় সরকারই দুর্নীতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ছিল। কেন্দ্রে ও রাজ্যে একই দলের বা জোটের সরকার হওয়া কখনোই উচিত নয়। এখানে প্রতিযোগিতা থাকা উচিত। কোনো দলকেই রাজ্যে ও কেন্দ্রে একই সঙ্গে নির্বাচিত করা উচিত নয়, এটা এখন মানুষও বলাবলি করছে। এটা বাস্তবিক পক্ষে গণতন্ত্রের জন্য বিপজ্জনক।
প্রশ্ন : বিজেপি নেতারা আপনাকে নৈরাজ্যবাদী বলছে।
উত্তর :তাদের বলার আর কিছুই নেই। তাদের কোনো কর্মসূচি নেই। আমরা নির্বাচিত হলে দিলি্লতে নতুন স্কুল-কলেজ প্রতিষ্ঠা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তারা বলছে, কেজরিওয়াল একজন নৈরাজ্যবাদী, আমরা দিলি্লকে সিসিটিভি ক্যামেরার চাদরে মুড়িয়ে দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছি। তারা বলবে, কেজরিওয়াল একজন নকশালবাদী; আমরা নারীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা বলেছি; তারা কেজরিওয়ালকে জঙ্গলে পাঠাবে বলছে; মোবাইলে জরুরি কলসেবা চালু করার কথা বলেছি আমরা; তারা বলেছে কেজরিওয়াল একটা বাঁদর (বিজেপি প্রার্থী নূপুর শর্মা এ কথা বলেছেন)। তারা আসলে কাদা ছোড়াছুড়ির রাজনীতি করে। আমরা উন্নয়নের রাজনীতি করি। আমাদের কর্মসূচিতেই এটা স্পষ্ট।
আমরা সরকারি স্কুলগুলোকে উন্নত করার কথা বলি আর তারা মেয়েদের জিন্স পরা এলাউ করবে না বলে; গ্রামীণ এলাকাগুলোয় বাস, মেট্রো চালুর মাধ্যমে আমরা যোগাযোগের কথা বলি; তারা নারীদের চারটি সন্তান গ্রহণের কথা বলে।
প্রশ্ন :আপনারা যখন ক্ষমতায় থাকবেন তখন বিক্ষোভ, সংঘাতের রাজনীতি করবেন না_ এ ব্যাপারে কি নিশ্চয়তা দেবেন?
উত্তর :যখন যা কিছু প্রয়োজন পড়বে আমরা তাই করব। দিলি্লর জনগণের প্রতি যদি কোনো অবিচার করা হয় তাহলে এ ব্যাপারে উচ্চকণ্ঠ হতে যা কিছু করার দরকার আমরা তাই করব। সংবিধানেই ধর্ণাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা কি সংবিধান থেকে বাদ দিয়ে দেওয়া হবে?
প্রশ্ন :একজন মুখ্যমন্ত্রীকে ধর্ণায় বসতে হলে কেমন দেখা যাবে?
উত্তর :নরেন্দ্র মোদি যখন গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন তিনিসহ ৩০ জন মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন সময়ে ধর্ণায় বসেছেন।
প্রশ্ন : বিজেপি তাদের লাভ হবে বিবেচনা করে কংগ্রেস দিলি্লতে শক্তিশালী হোক চায়? কংগ্রেস দিলি্লর নির্বাচনে জয়লাভ করুক বিজেপি চায় না। তারা কেবল আপনাদের ভোটের হিস্যা কমাতে চায়। নির্বাচনে যদি কোনো দলই সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায়, তাহলে আপনি কাদের সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করবেন?
উত্তর :এবার নির্বাচনে অবশ্যই ভাঙা রায় হবে না।
দ্য হিন্দু থেকে ভাষান্তর সুভাষ সাহা

No comments

Powered by Blogger.