অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাত্রা- দালালচক্রের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিন

বৃহস্পতিবার অবৈধভাবে মালয়েশিয়া যাওয়ার পথে কক্সবাজারের অদূরে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলে ট্রলারডুবির ঘটনার পর শুক্রবার একই দেশে যাওয়ার অপেক্ষায় থাকা ৪০ জনকে পুলিশ চট্টগ্রামের গোল্ডেন ড্রিম হোটেল থেকে আটক করেছে। বৃহস্পতিবার যে ট্রলারটি ডুবে যায় তার যাত্রীদেরও একই হোটেল থেকে কক্সবাজার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। শনিবার সমকালে 'কুতুবদিয়ায় ট্রলারডুবি :৭ যাত্রীর লাশ উদ্ধার, মামলা, ৬ দালাল কারাগারে' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদন পাঠ করলে উপরোলি্লখিত দুটি ঘটনার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে পাওয়া যাবে। ট্রলারডুবির পর জীবিত উদ্ধারপ্রাপ্তরা ছাড়া আর কতজন যাত্রী নিখোঁজ রয়েছেন এবং তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। যারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিদেশ যেতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারগুলো সম্ভাবনাময় আপনজনকেই হারালেন না, অনেক পরিবারে হয়তো তারাই ছিলেন একমাত্র উপার্জনক্ষম। যাদের উদ্ধার করা হলো তারা দালালদের হাতে তুলে দেওয়া অর্থ কখনোই ফেরত পাবেন না। এভাবে মানবপাচারের বিস্তৃত নেটওয়ার্ক সম্পর্কে পুলিশ কিছুই জানত না তা কতটা বিশ্বাসযোগ্য! অবৈধভাবে বিদেশ গমন বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের সুনামহানিসহ বাংলাদেশিদের বিদেশে অভিবাসন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কয়েক বছর আগে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পেছনে এটাও একটা কারণ ছিল। তদুপরি বাংলাদেশের জলসীমা ব্যবহার করে যারা বিদেশ পাড়ি দেয় তাদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন এলাকার লোক ছাড়াও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোহিঙ্গা থাকে। এসব রোহিঙ্গা বিদেশে গিয়ে নানা অপরাধে জড়িয়ে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করে, তেমনি আমাদের শ্রমিকদের সম্পর্কেও বিদেশি সরকার ও মানুষের মনে বাজে ধারণার জন্ম দেয়। এটা আমাদের আন্তর্জাতিক শ্রমবাজারকে সংকুচিত করার ক্ষেত্রে নেতিবাচক ভূমিকা রাখছে। অবৈধভাবে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়াগামী বাংলাদেশি যাত্রী নিয়ে প্রতিবছরই ট্রলারডুবির সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ পায়। সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিবারই অবৈধভাবে বাংলাদেশিদের এভাবে বিদেশ গমন বন্ধ করার জোর প্রচেষ্টা চালানোর প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। ঘটনা ঘটার পর পরই কিছু দালাল ও যাত্রী আটকের ঘটনা ঘটে; কিন্তু এ পর্যন্তই। এ কারণেই বাংলাদেশিদেরসহ থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারের জলসীমায় অবৈধভাবে বিদেশগামী অনেক নৌকা বা ট্রলারে গুলি চালানোর খবর আমাদের পাঠ করতে বা শুনতে হয়। যারা শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পেঁৗছতে পারেন তাদের ভাগ্যে জোটে অনেক বিড়ম্বনা। ধরা পড়ে অনেককে এ সব দেশের কারাগারে দিন কাটাতে হয়। অবৈধ অভিবাসী হওয়ার কারণে এদের পালিয়ে বেড়াতে হয়। অনেককে আফিম চাষের জন্য ক্রীতদাস হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশিদের এভাবে দুর্ভাগ্যকে বরণ করতে দেওয়া যায় না। অথচ দালালচক্র তাদের অনেক বেশি বেতনের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে বিদেশ যেতে প্রলুব্ধ করে থাকে। সারাদেশে বিস্তৃত সরকারের বিভিন্ন বাহিনী ও গোয়েন্দা নেটওয়ার্ককে পুরোপুরি ফাঁকি দিয়ে এসব কর্মকাণ্ড চলে বলে আমরা মনে করি না। এসব সংস্থার কর্মীদেরও দালালচক্রের সঙ্গে যোগসাজশ থাকা অসম্ভব নয়। তাই আমরা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে সমুদ্রপথে মানবপাচারের বিরুদ্ধে সার্বক্ষণিক নজরদারি ও কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানাই।

No comments

Powered by Blogger.