স্মরণ- বাংলার শাসক মূসা খাঁ by মো: আবদুর রউফ

১৫৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ সেপ্টেম্বর পিতা ঈশা খাঁর মৃত্যু হওয়ায় গাজীপুর জেলার কালীগঞ্জ থানার বক্তারপুর গ্রামে সমাহিত করার পর মূসা খাঁ বাংলার সোনারগাঁও ও ভাটি অঞ্চলের অধিপতি হন বৃহত্তর ঢাকা ও কুমিল্লা জেলার প্রায় অর্ধেকের। তিনি বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলা, রংপুর, বগুড়া ও পাবনা জেলার কিয়দংশ পান। তিনি তার বাবার মতো মসনদ-ই-আলা  এবং বারভূঁইয়াদের নেতা ছিলেন। মূসা খাঁর জন্ম ১৫৬৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ মে।  বাবা তার মায়ের নাম অনুসারে বাংলার রাজধানীর সোনারগাঁও নাম দেন। মূসা খাঁ সোনারগাঁও জমিদারিতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্জন  হলের স্থানটিতে এবং খিজিরপুরে কাতরাবো নামক স্থানে প্রাসাদবাটি ও  দালানকোঠা নির্মাণ করেছিলেন। কার্জন হলের পশ্চিম পাশে মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন। দক্ষিণে বুড়িগঙ্গা তীরের লালবাগ, সদরঘাট, পুরান ঢাকা থেকে শাহবাগ পর্যন্ত বাগ-ই-মূসা বিস্তৃত ছিল। ভাইসরয় লর্ড কার্জন ১৯০৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি ভবন নির্মাণ করার সময় মূসা খাঁর প্রাসাদটি ধ্বংস করা হয়। মূসা খাঁর রাজ্য দক্ষিণে বর্তমান ঢাকা শহরের বুড়িগঙ্গা নদীর তীর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। মূসা খাঁ শক্তিশালী সেনা ও নৌবাহিনীর অধিকারী ছিলেন। রাজধানী ছাড়াও খিজিরপুর, কাতরাবো, কদমরসুল, যাত্রাপুর, ডাকচর, শ্রীপুর ও বিক্রমপুর তার দুর্ভেদ্য সামরিক ঘাঁটি ছিল। অন্য বারভূঁইয়াদের সহায়তায় পূর্ববঙ্গে আধিপত্য অুণœ রাখার জন্য তিনি ১৫৯৯  থেকে ১৬১১ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত অবিরাম যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। শেষ পর্যন্ত মূসা খাঁ ও জোটে অংশগ্রহণকারী মুসলমান জমিদারেরা মুঘল সুবাদার ইসলাম খাঁর কাছে আত্মসমর্পণ ও বশ্যতা স্বীকার করেন এবং মূসা খাঁর পরগনাগুলো ইসলাম খাঁ তাকে জায়গির হিসেবে প্রদান করেন।
মূসা খাঁ জনদরদি শাসক ছিলেন। তিনি সুগঠিত প্রশাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। শিক্ষা ক্ষেত্রে মূসা খাঁ প্রভূত উন্নতি করেছিলেন। তার আমলে কৃষকসমাজ  উন্নতির শিখরে গিয়েছিল এবং ব্যবসায়-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছিল। মূসা খাঁ ১৬২৪ খ্রিষ্টাব্দের ১৯ অক্টোবর ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। ঢাকায় মূসা খাঁ মসজিদ ও কার্জন হলের পাশে তাকে সমাহিত করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.