সৎ বাবার অসৎ কাণ্ড

পাঁচ বছর বয়সি এক মেয়েকে হত্যার দায়ে সৎ বাবা এবং মাকে ৩১ বছর কারাদণ্ড দিয়েছে স্লোভাকিয়ার একটি আদালত। হত্যার পর লুকা নামের এ মেয়েটির মৃতদেহ তিন বছর লুকিয়ে রাখা হয় বলে জানায় মিরর। জানা গেছে, স্লোভাকিয়ার রাজধানী ব্রাতিসলাভার একটি এপার্টমেন্টে ভাড়া থাকতেন মেয়েটির মা আলেক্সান্দ্রা রোটাকোভা (৪৩) এবং সৎ বাবা জুরাজ রোটাক (৩৪)। ২০১২ সালে পুনঃনির্মাণের জন্য তাদেরকে এপার্টমেন্টটি ছাড়তে বলেন বাড়িওয়ালা। কিন্তু তারা ছাড়তে অস্বীকৃতি জানায়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় এ জুটিকে বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে গেলে একটি তালাবদ্ধ ঘরে লুকার মৃতদেহ পাওয়া যায়।
সৎ বাবা জুরাজ রোটাক আদালতে স্বীকার করেন, তিনি লুকা এবং তার মাকে মারপিট করতেন এবং মাঝে মাঝেই না খাইয়ে রাখতেন। আর এ নির্যাতনের কারণেই ২০০৯ সালে লুকা মারা যায়। মেয়েকে হত্যা করায় মা রোটাকোভার সহযোগিতা থাকলেও তিনি আদালতকে জানান, এ ছাড়া তার কোনো উপায় ছিলো না।
মেয়েটিকে নির্যাতন করে হত্যা করার দায়ে সৎ বাবাকে ১৭ বছর কারাদণ্ড দেয় ব্রাটিসলাভার আদালত। এবং বাড়িওয়ালার অনুমতি ছাড়া বাড়িতে থাকার জন্য আরো ১৮ মাসের দণ্ড দেয়া হয়। মাতৃত্বে অবহেলা এবং মেয়েকে ঠিকভাবে দেখভাল করতে না পারার দায়ে মা রোটাকোভাকে ১৪ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ বিষয়ে দেশটির কোর্ট সিনেট চেয়ারম্যান মাইকেল ক্যাসানি বলেন, সৎ মেয়ে লুকাকে চরম নির্যাতন করে হত্যা করেছে রোটাক।
লুকার আসল বাবা ৪৩ বছর বয়সি মিলান লুকনার বলেন, রোটাকের মোহে আমাকে ত্যাগ করেছে আলেক্সান্দ্রা। তখন আমার মেয়েকে আমার কাছেই রেখে দিয়েছিলাম। কিন্তু সে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় লুকাকে। মামলাটি নিয়ে স্লোভাকিয়ায় সমালোচনার ঝড় উঠেছে।  তিন বছরের মধ্যে শিশুটির খোঁজ না পাওয়ায় বিভিন্ন মহল থেকে সমাজকর্মীদের দোষারোপ করা হচ্ছে। বিশেষ করে লুকার স্কুলে আসা যাওয়া বন্ধ হওয়ার পরও তার ব্যাপারে কোনো খোঁজ না নেয়ায় তারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
লোকা কোথায় আছে? প্রতিবেশীদের এমন প্রশ্নের জবাবে মা রোটাকোভা জানাতেন, সে তার নানীর কাছে রয়েছে। আবার কখনো বলতেন খালার কাছে। কয়েকজন প্রতিবেশি এ ব্যাপারে সন্দেহ প্রকাশ করেন। তবে এতদিন অনেকেরই ধারণা ছিলো শিশুটি হয়তো সমাজকর্মীদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে।
দেশটির শিশু কল্যাণ সংস্থার আইন উপদেষ্টা জেলিনস্কা বলেন, এ মামলার রায়টি শিশুদের ওপর সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি সতর্ক বার্তা। এর মাধ্যমে অন্য অনেক শিশু নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
মামলার রায়ের পর লুকার আসল বাবা স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আমি লুকাকে ২০১২ সালে শেষ বারের মতো দেখেছিলাম। তখন তার বয়স ছিলো দুই বছর। আমি তাদের দুই জনেরই যাবজ্জীন কারাদণ্ড আশা করেছিলাম।

No comments

Powered by Blogger.