দীর্ঘশ্বাস বয়ে বেড়ানো উপন্যাস by কামরুজ্জামান জাহাঙ্গীর

অনিলা স্মরণে নামের উপন্যাসে চলমান এক দীর্ঘশ্বাস আছে, যা কখনও ট্রেনের সঙ্গে, কখনও লাবণ্য দেবীর সঙ্গে, আবার কখনও কখনও বা সারাক্ষণই অনিলাকে ঘিরে থাকে। বাবার প্রতি এত প্রেমও খুব কম উপন্যাসেই আছে। হায়, দীর্ঘশ্বাসময় জীবনের মায়ার খেলা! আমরা এমনই খেলার বাঁধনে আটকা পড়তে পড়তে এটি পাঠ করতে থাকি। আমরা প্রথমেই দেখি লাবণ্য দেবীর নির্ভরতার এক আবহ তাতে আছে। তবে এও হয়ত সত্য যে, আমরা শেষ পর্যন্ত তার নির্ভরতার জায়গাটি চিহ্নিত করতে পারি না, কারণ মানুষ স্বয়ং কনফিউজিং প্রাণী; যেন সে নিজেকেই নিজে বারবার অতিক্রম করতে চায়। এক ভ্রান্তি বা বিলাসের জায়গা বারবার পরিবর্তন করে। আমরা লাবণ্য দেবীকে কখনও কন্যার দায়বোধের কাছে, কখনও মৃত স্বামীর স্মৃতির কাছে, কখনও বা রঞ্জিত চ্যাটার্জির প্রেমের কাছে সঁপে দিতে দেখি। আমরা শেষ পর্যন্ত অনিলার স্মরণে প্রাপ্ত দীর্ঘশ্বাসের কাছে যেন নিজেদের আশ্রয় খুঁজি। পাঠকের সৃজনশীলতাকে আমরা স্মরণে রাখতে বাধ্য হই। এমনি নানা স্তর এখানে উন্মোচিত হয়। আবার নতুন পাঠস্মৃতি এসে পুরনো স্মৃতিকে ডুবিয়ে দেয়। কমলকুমার মজুমদারের বহুবিধ মায়ায় আমরা হয়ত জারিত হই। এই উপন্যাসটিতে নির্ভরতা আর অপেক্ষা, প্রেম আর মৃত্যুকে, একেবারে জড়াজড়ি করে রেখেছে। আমরা প্রথমে দেখি লাবণ্য দেবী, যিনি সম্পর্কে অনিলার মা হন, তিনি কিছু প্রক্রিয়ার কাছে নির্ভরশীল হয়ে আছেন। তিনি কেবল অপেক্ষাই করে গেলেন। তার মেয়ে আসছে, যৌবনের কাছাকাছি বয়সের মেয়ে স্কুল থেকে তার কাছে আসছে। তার আছে পিতৃপ্রেম। সেই প্রেম জান্তব আকারে মেয়ের বুকের গহীনে লেগে আছে। মা লাবণ্য দেবী সেখানেও নির্ভরতা খোঁজেন। মেয়েকে তার মানসিকতা থেকে পরিবর্তন করে বর্তমানকে মেনে নেয়ার অপেক্ষা তার আছে। কিন্তু মেয়ে তার বাবাকে রীতিমতো প্রেম করে। বাবাবিনে যেন তার চলে না। বাবা মারা গেছে, অথবা মানসিক যাতনায় তাকে হয়ত হত্যাই করা হয়েছে। কিন্তু মেয়ের কাছে বাবার স্মৃতি একেবারে জ্যান্ত। সে তার বাবার মৃত্যুর জায়গা, শ্মশানের জায়গা দেখতে চায়। তার ভিতরে সেইসব স্মৃতি একেবারে জীবন্ত করে রাখতে চায়। কিন্তু মায়ের আছে প্রেম, অপারে প্রেম। তিনি রঞ্জিত চ্যাটার্জিকে ভালোবাসেন। তাকে একপর্যায়ে বিয়েও করেন তিনি। কিন্তু মেয়ে তা মেনে নেয় না। বাবার স্থলে মায়ের স্বামী হিসেবে অন্য কাউকে মেনে নিতে সে রাজি নয়। তাই তো এক ধরনের মোহ তার জাগে। একপর্যায়ে রঞ্জিত চ্যাটার্জির ভেতরে তার বাবার ছায়া যেন সে আবিষ্কার করে। হয়ত তা ভূতের ছায়া হয়ে আসে। কিন্তু তা অবলম্বন করে তো সে বাঁচতে পারে না। অনিলা একপর্যায়ে আত্মহত্যা করে। পৃথিবীর প্রতিও এক ধরনের অবজ্ঞা দেখায় সে। আসলে সে যেন নিজেকেই নিজের হর্তাকর্তা হিসেবে আবিষ্কার করতে চায়।
এ উপন্যাসেও কাহিনী আছে, কাহিনীর সূত্র আছে, তাদের ভিতর আবার পরম্পরাও আছে। এর চরিত্রসমূহ আলাদা করে, কখনও বা একত্র হয়ে কিছু ম্যাসেজ রাখে, সৌন্দর্য প্রকাশে তৎপর হয়, তারা এমনকি হতচকিত অবস্থায় নানা অবস্থান প্রকাশ করে। তারা সময়ের চেয়ে পিছনের কথা বলে। পুঁজির বিকাশ তাতে দেখি- মধ্যবিত্ত উত্থানের সময় আছে তাতে; আছে উপনিবেশি আবহ। একজন লাবণ্য দেবী হাওড়া স্টেশনে এসেছেন। তিনি মূলত অপেক্ষা করছেন তার মেয়ের জন্য। সে আসবে। সে একা তো আসবে না, তার সঙ্গে দীর্ঘশ্বাস আছে, জীবনের অনেক কথা আছে, বৈদিক সৌন্দর্যকে প্রকাশের বিষয় আছে। কমলকুমার তো জীবন আঁকেন না, যেন ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জীবনবৈচিত্র্যকে জোড়া লাগান। এমন এক জীবন আমরা দেখি, যা আমাদের কাছে থেকেও কোনো এক সময় পর্যন্ত অচেনা ছিল হয়ত, কিন্তু তিনি, কমলকুমার তার তীব্র চাহনীতে এর সবকিছু পরিষ্কার করতে থাকেন। অনেক জীবনের কথকতা নিয়ে এক সময় অনিলা আসে। তারা অ্যামিলওয়ার্থ হোটেলে গেলেও, তাদের আদি বাসস্থান শাহানপুর যাওয়ার কথা ভাবলেও, তাদের ভিতর রঞ্জিত চ্যাটার্জি থাকলেও, এর সবকিছুর ভিতর একজন পিতা, ভালোবাসার এক মানুষ ক্ষণে ক্ষণে দেখা দেন। তিনি গঙ্গাকিশোর। আমরা স্মরণ করতে পারি, কমলকুমার যে জীবন দেখান তাতে গঙ্গা, রামকৃষ্ণ, সমন্বিত চৈতন্য থাকেই। এখানেও নানা কিছুর ভিতর দিয়ে যৌথযন্ত্রণা যেন প্রকাশিত হচ্ছেই। তাই তো লাবণ্য দেবীর সঙ্গে একজন রঞ্জিত চ্যাটার্জি যুক্ত হলেও অনেক বিচিত্র অনুসঙ্গ তাতে যুক্ত হয়। তারা বিয়ে করলেও, তাদের বিষয়ে আরও যেন জীবনের কথা আমরা স্মরণ করতে বাধ্য হই। কাহিনীতে একজন পিতার মৃত্যু, কন্যার আহাজারি, মায়ের অন্য পুরুষে আসক্তি, বিয়ে, স্মৃতিজাগরণ মিলে এক-একটা ঘটনার জন্ম দেয়। এক ঘটনা অন্য ঘটনাকে টেনে আনে। অনিলার বাবার মৃত্যু নিয়েও হয়ত রহস্য থাকে। লাঞ্চ খেতে খেতে তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন, একটা রাত পেরোয়, পরদিন সকালে তার মৃত্যু হয়। একটা রহস্য থাকে, সেই রহস্য লাবণ্য দেবী আর রঞ্জিত চ্যাটার্জির বিয়ের ভিতর দিয়ে নতুন রহস্যের জন্ম দেয়। অনিলা এসব চাপ যেন সইতে পারে না। তার মনোজগতে একটা হাহাকার জন্ম দেয়। সে কেন প্রতিশোধ নিতে চায়, তা আমরা ভাবতে বাধ্য হই। সে তো মাকে খুনিও বলে! এই সব মিলেই হয়ত তার ভিতরে পাগলামিরও জন্ম দেয়। সে আত্মহত্যা করে। অনিলা আর তার জীবনের মধ্যে যেন অনন্ত মরুভূমি দেখা দেয়। এভাবেই একটা চরম রহস্যের ভিতর উপন্যাসটি শেষ হয় না। কিংবা তা শেষ হয় না বরং আমাদের মনোজগতে নানা অনুসঙ্গ ঘুরে ঘুরে আসে। এভাবেই একটি উপন্যাসের ভিতর অনেক ভাবমুখর জীবন ছায়া ফেলে যায়।
এ উপন্যাসেও কমন কিছু বিষয় দেখা যায়। বাবার প্রতি প্রেম, বালিকার ভিতর হঠাৎ সৌন্দর্যের প্রকাশ, মৃত্যুজনিত শোকপ্রণালী যেন কমলকুমারের একটা ধারা হিসেবে এসেছে। একটার সঙ্গে আরেকটার যোগ আছে। অনিলা স্মরণের অনিলা আর শ্যাম-নৌকার কালাচাঁদ যেন একই বৃন্তের দুটি ফুল- উভয়ই পিতৃপ্রেমের হাহাকার লালন করে। অনিলার কিশোর-বয়সের সৌন্দর্য যেন সুহাসিনীর পমেটম’র সুহাসিনীর আরেক মায়া। তার লেখায় মৃত্যুও বারবার আসে। কমলকুমার মৃত্যু আর সৌন্দর্যের ভিতর দিয়ে জীবনের নানা মায়া নির্মাণ করেন। খেলার প্রতিভার ভিতর দিয়ে মৃত্যুর যে সর্বশেষ মায়াময় ছায়া দেখি, তাই তো অনিলা স্মরণের গঙ্গাকিশোর, অনিলার ভিতর, শ্যাম-নৌকার কালাচাঁদের বাবার ভিতর, অন্তর্জলী যাত্রা’র সীতারাম বা যশোবতীর জীবনপাতের ভিতর বারবার ঘুরে-ফিরে আসতে দেখি।
উপন্যাসটিতে নানা স্তর আমরা লক্ষ্য করি : ১. অনিলার ভিতর ভাঙচুরের নানা আবহ আছে, ২. আছে লাবণ্য দেবীর ভিতর নিজেকে এক জায়গায় স্থাপনের চেষ্টা, ৩. প্রেমের আলাদা মাত্রা আবিষ্কারের প্রতি লেখকের নবতর ভাবনা, ৪. আছে মানবপ্রেমের সহজাত জৈবিকতা খোঁজার ডেসপারেটনেস। অনিলা তার জগৎ নির্মাণের ব্যাপারে একেবারে আপোষহীন। এ কথাটা তার টিচার থেকে শুরু করে, বান্ধবী, এমনকি লাবণ্য দেবীর কথিত বান্ধবীরাও জানেন। তাই তো তাকে পাগল বানানোর প্রচেষ্টাও তারা করে। কিন্তু অনিলা তার জায়গায় স্থির থাকে। যেন একটা মায়াময় স্পিরিচুয়াল জগতের ভিতর দিয়ে সে তার জগতের চিত্র নির্মাণ করে যায়। রক্তের প্রবাহমানতাকে সে অনেক বড় করে দেখে। তাই হয়ত কমলকুমারও দেখেন। রক্তের ধারা সুফল নিয়ে তিনি অনেক কথা বলার পক্ষেই তিনি আছেন। তিনি বংশীয় প্রবহমানতা আর রামকৃষ্ণের বহু চরিত্রের মিলিত রূপের কাছে বারবার ধর্ণা দেন। অন্যদিকে লাবণ্য দেবী তার স্বামীর স্মৃতিকে আঁকড়ে থাকার অতি লৌকিক জগতে থাকতে রাজি নন। তিনি যেন বিকাশমান মধ্যচিত্তের লোভকে চেতনায় লালন করতে চান। আধুনিক মধ্যবিত্ত তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে থাকে। তাই তো রঞ্জিত চ্যাটার্জির প্রেম তার রক্তে খেলা করে। তারা জীবনকে একেবারে মিশিয়ে ফেলে। তারা জীবন আবিষ্কার করে, একে বহন করতে চায়। এটিই জীবন, এটিই হয়ত আধুনিক জৈবিকতার মৌলিক চেহারা।
শাহানপুর আর অ্যামলিওয়ার্থ হোস্টেল এ উপন্যাসের আরেক জীবন যেন। অনিলার স্কুলও এখানে গুরুত্ব দিয়ে এসেছে। অনিলাকে চেনার জন্য এসবের খুবই দরকার আছে। এ হচ্ছে চমৎকার অনুসঙ্গ। এত আধুনিকতা কমলের আর কোনো উপন্যাসে দেখা যায় না। এখানকার বর্ণনাশৈলীও অনেক স্মার্ট, লৌকিকতার বিষয়টা এখাবে বৈঠকি আমেজে এসেছে। তাকে আমরা ভিন্ন রূপে পাই। চিহ্নও এখানে আলাদা। অনেক লম্বা বাক্য আছে, ক্রিয়াবিশেষণ, অন্বয়ী ভাব নতুনরূপে বিকশিত হয়েছে। সমাপিকা ক্রিয়ার প্রতিও এখানে অনেক যত্নবান তিনি। সবচেয়ে বড় কথা, উপন্যাসের চেহারার সঙ্গে মিলিয়ে ভাষার মেজাজটা বিকশিত হয়েছে।
এ গল্প লাবণ্য দেবীকে আবিষ্কারের গল্পও বলা যায়। এমনকি বর্তমানতার সঙ্গে বৈদিক সৌন্দর্যও লেখক যুক্ত করার সাহস দেখিয়েছেন। আমরা এখানে নিমগ্নতার সাংস্কৃতিক ইতিহাস দেখি। শেষ পর্যন্ত অনিলার যে এমন করুণ পরিণতি হবে তা মোটেই যেন আন্দাজ করা যায়নি। স্কুল-পড়–য়া-মেয়ে অনিলার জন্য হাওড়া স্টেশনে অপেক্ষা করে তার মা লাবণ্য দেবী। এরপরই ধীরে ধীরে ছোট আয়তনের এ উপন্যাসটির প্যাঁচ খুলতে থাকে। গরিবী আয়তনের এ উপন্যাসটি ক্রমে ক্রমে মানবিক জটিলতার এক চমৎকার আখ্যান হয়ে ওঠে। এটি তার একেবারে প্রথম দিককার রচনা। একে ঠিক উপন্যাস না বলে বড়গল্প বলাটাই অধিক যুক্তিযুক্ত। এটা কমলকুমারের আরেক উপন্যাস গোলাপ সুন্দরী’র মতোই হালকা-পাতলাও। এর ভাষাসৌকর্যও তার অন্য যে কোনো উপন্যাসের চেয়ে কিছুটা সহজিয়া ধাঁচের। পাঠককে তাতে পাঠ-ক্রিয়ায় নিমগ্ন রাখে। আমরা ক্রমে ক্রমে জানতে পারি, অনিলার পিতৃবিয়োগ ঘটাতে লাবণ্য দেবী অন্যত্র, রঞ্জিত চ্যাটার্জিকে বিয়ে করেন। এটি যেন লাবণ্য দেবী নিজেকে আবিষ্কারের, সত্য খোঁজার এক প্রচেষ্টা। তার মেয়ে অনিলা যাতে এটি মেনে নেন, তার জন্য কৌশলও তিনি কম করেন না। এটি আধুনিকতার ফল বলেও জানাতে চান অনিলাকে। তবে এ বিষয়টারও জট খোলে ধীরে ধীরে। লাবণ্য দেবী যে রঞ্জিত চ্যাটার্জির গাড়িতে করে তার স্বামীর শেষকৃত্যানুষ্ঠানের দিকে যায় তখন কারও মনে হতে পারে ইংরেজ আমলের এ কাহিনীতে যেন প্রতীকায়িত সহমরণকেই সমর্থন করা হচ্ছে। তবে কিছুক্ষণ পরই রঞ্জিত আর লাবণ্য পরস্পরকে নতুন করে চেনে এবং বিয়ের সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে তা নিতান্তই ছেলেখেলা বলে মনে হয়। তবে আমরা এখানে যৌনতার কথা মনে করব,- এ দু’জনের শারীরিক সম্পর্কের কথা জানব। আমরা মোহিত হব। লেখকের জীবন পিপাসার ধরন দেখব। উপন্যাসের আয়োজনে লেখক নানাবিধ সত্য মোকাবিলা করছেন। সংসার ব্যাকুল দ্বন্দ্ব এখানে ম্যালা ডালপালা মেলেছে। আমরা অন্তত তিন ধরনের রিলেশন এবং রিলেশনজনিত ঝামেলা এখানে লক্ষ্য করতে থাকি। অনিলার সঙ্গে তার বাবার স্নেহময় প্রেম বা নির্ভরতাই এ গল্পের মৌলস্বর। অনিলা তার ওপর এত নির্ভরশীল যে অন্যসব সম্পর্ক যেন তার পরশে ধুলোয় মিশে যাবে! কিন্তু তা কি হয়। অনিলা তার বাবার ভিতর ঈশ্বরত্ব দেখে, তাতে সে লীন হতে চায়। এমনকি তা প্রতিষ্ঠাকল্পে তার দেহ-মনে নানা লীলার সঞ্চার হয়। যেন দেবী মহামায়া তাকে ভর করে, আলাদা সত্তা রূপে নিজেকে প্রকাশ করতে চায়, রক্ত বীজের উন্মাদনা সে প্রকাশ পেতে থাকে। কিন্তু অবশেষে তার অকাল মৃত্যুই ঘটে। যেন একধরনের শহীদত্ব বরণ করল সে। লাবণ্য দেবীর সঙ্গে রঞ্জিত চ্যাটার্জির বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনে স্বল্প আয়তনের এ উপন্যাসটি আলাদা রূপময়তা পেয়েছে। তাতে চরিত্রেরও বিকাশ ঘটেছে। পাঠক আরেক আধুনিকতার সঙ্গে পরিচিত হলেন। অনিলার সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্কটি হয়ে উঠেছে কখনও কখনও স্পর্শকাতর, কখনও প্রাণকাতর। কথাক্রমে আবারও বলতে হয়, জীবনকে সময়োপযোগী, ও বাস্তবমুখি করার নানাবিধ চেষ্টা লাবণ্য দেবীর ছিল। এমনকি তাতে যে আধুনিকতার উšে§ষ ঘটে, জীবনের আরেক প্রবহমানতা সৃজন হয় তাও বোঝাতে চেয়েছেন। কিন্তু কলির দেবত্ব যেখানে ভাবে, লীলায়, কামে ভর করেছে সেখানে পাঠক তো লেখকের কাছে বন্দিত্ব বরণ করা ব্যতীত উপায় নেই। এভাবেই কমলকুমার তার একরোখামির কাছে, স্বোপার্জিত আধুনিকতার কাছে নিজেকে সমর্পণ করে বসে আছেন।
এখানে রামকৃষ্ণকৃত পরমা সুন্দরীকে আবিষ্কারের নেশা আছে। চরিত্রের বিকাশের বিষয়টা এখানে খুবই স্পষ্ট, এর ধারাক্রমও বেশ কৌতূহলের। দীর্ঘবাক্যের নেশা এখানে আছে। এভাবেই অপার্থিব সাধনা আর জীবনবৈরাগ্যের এক মিলন আমরা দেখি। এভাবেই তিনি, কমলকুমার, কাব্যময়তার ভিতর অতি চমৎকার নান্দনিকতার স্বাদ দেন, ভাষা দেন, প্রাণপ্রবাহ আবিষ্কার করেন। আমরা ক্ষণে ক্ষণে তার মোহিনী মায়ায়, জীবনের অনেক রূপে, এমনকি জাদুময়তায় নিমগ্ন হই।

No comments

Powered by Blogger.