তসলিমা কেন দেশে ফিরতে চান?

বাংলাদেশে ফেরার চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন বাংলাদেশের বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। ভারতের নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নেতৃত্বাধীন সরকার যাতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করে এ জন্য তিনি সরকারকে অনুরোধ করেছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাস ও হাই কমিশনে গিয়ে ধরনা দিয়েছেন তার পাসপোর্ট নবায়নের জন্য। কিন্তু বার বারই শূন্য হাতে ফিরেছেন। তসলিমা নাসরিনের ভাষায়, এ বিষয়ে আমার আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। কেন তা করা হয়েছে তার পিছনে কোন কারণ দেখানো হয় নি। তবে দূতাবাসের কর্মকর্তারা আমার প্রতি সহানুভূতি দেখিয়েছেন। কিন্তু তারা তো সরকারের নির্দেশনার বিরুদ্ধে যেতে পারেন না। তবু তসলিমা দেশে ফেরার চেষ্টা চালিয়েই যাবেন। অনলাইন বিবিসিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ সব কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, তসলিমা নাসরিনের বয়স এখন ৫২ বছর। তিনি ইসলামের তীব্র সমালোচক। এ জন্য কট্টর মুসলমানদের পক্ষ থেকে হত্যার হুমকি দেয়ার পর তিনি ১৯৯৪ সালে বাংলাদেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এর পরপরই তার বাংলাদেশী পাসপোর্ট বাতিল করা হয়। তিনি প্রথমে চলে যান ভারতে। কিন্তু সেখানেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভের মুখে ২০০৮ সালে তিনি সুইডেন চলে যান। তারপর ফিরে আসেন ভারতে। এবারও স্থানীয় মুসলমানরা দেশে তার অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন। এর পর থেকে তিনি ভারতের রাজধানী নয়া দিল্লিতে বসবাস করছেন। বাংলাদেশ তার নাগরিকত্ব দেয়া নিয়ে অবস্থান পরিষ্কার করেনি। তবে তসলিমা নাসরিন দেশে ফিরতে নাছোড়বান্দা। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ, বিরোধী জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির খালেদা জিয়া অথবা তত্ত্বাবধায়ক সরকার- যে বা যিনিই ক্ষমতায় থাকুন না কেন তাদের অবস্থানের কোন পার্থক্য নেই। তসলিমা নাসরিনকে বাংলাদেশে প্রবেশের অনুমতি দেয়ার ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টিতে তারা সবাই একতাবদ্ধ। এ বিষয়ে তসলিমা নাসরিন বলেন, আমার লড়াই চলতেই থাকবে। সহজে আমি হার মানবো না। দিল্লির এপার্টমেন্টে বসে তিনি এ সব কথা বলেন বিবিসি’র সাংবাদিককে। ভারত সরকারের সঙ্গে তার ভিসা নিয়ে দীর্ঘ দিনের লড়াই শেষে এখানেই অবস্থান নিয়েছেন। গত দু’দশক ধরে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র ও সুইডেনে বসবাস করার পর তিনি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাকে দ্বিতীয় বাড়ি হিসেবে গ্রহণ করেন। কিন্তু এখানে তিনি অবস্থান করেন স্বল্প সময়ের জন্য। সেখানে তার উপস্থিতির বিরুদ্ধে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়। তিনি ২০০৮ সালে ওই শহর ছাড়তে বাধ্য হন। দিল্লিতে তার এপার্টমেন্টের প্রতিটি দেয়ালে বইয়ের শেলফ। তিনি সেখানে ব্যস্ত জীবন কাটান। পড়াশোনা ও লেখালেখির বাইরে সামাজিক মিডিয়া টুইটারে রয়েছে তার সরব উপস্থিতি। এছাড়া পোষা বিড়াল মিনুকে নিয়ে সময় কাটান। এ সবের বাইরে তিনি মাঝে মাঝেই বাংলাদেশ হাই কমিশনের দরজায় গিয়ে হাজির হন। তসলিমা নাসরিন বলেন, আমার লেখার বিরোধিতা করে বাংলাদেশের কট্টর ইসলামপন্থি ছোট্ট একটি গ্রুপ। কিন্তু সরকার কেন এসব মানুষকে ভয় পায়? তারা আমার মত মেনে নিতে পারে না বলেই কি আমি দেশের বাইরে থাকবো? নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেন নি তসলিমা। তিনি বলেন, আমি আমার ক্ষোভ দিয়ে সমাজকে নাড়িয়ে দিয়েছি। সেই ক্ষোভ ছাড়া আমি কিছুই নই। তাই এর সঙ্গে কোন সমঝোতা নয়। তসলিমা বলেছেন, তিনি ভারতের নতুন সরকারকে বাংলাদেশের কাছে তার বিষয় তুলে ধরার আহ্বান জানিয়েছেন। তার ভাষায়, যদি তারা তা করতে পারেন তাহলে তিনি তাদের কাছে অসীম কৃতজ্ঞতার বন্ধনে আবদ্ধ থাকবেন। বিবিসি লিখেছে, রাশিয়ার ভিন্নমতাবলম্বী লেখক আলেকসান্দর সোলজেনিৎসিন ১৬ বছর নির্বাসনে থাকার পর দেশে ফিরেছেন। ফরাসি লেখক এমিল জোলা লন্ডন থেকে ফিরেছেন দেশে। তসলিমা নাসরিনের বেলায় ২০ বছর পেরিয়ে যাচ্ছে। তিনি জানেন, সরকারিভাবে তিনি এ দেশের নাগরিক নন, যে দেশকে তিনি নিজের দেশ বলছেন। তিনি বুঝতে পারেন এর কারণ কি। তবে সে জন্য তিনি পিছিয়ে যাবেন না। তিনি বলেন, দেখুন এটা শুধু আমার একার সঙ্গে করা হচ্ছে এমন নয়। এটা মুক্তভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয়।

No comments

Powered by Blogger.