প্রত্যক্ষদর্শীর কণ্ঠে হামলার বর্বরতা

পাকিস্তানের সেনাবাহিনী পরিচালিত স্কুলে তালেবান জঙ্গিদের হামলায় মুহূর্তেই ঝরে পড়ল প্রায় দেড়শ’ চঞ্চল শিশু-শিক্ষার্থী। সেই বর্ণনাতীত বর্বরতা স্বচক্ষে দেখেছেন অনেকেই। মঙ্গলবার ওই ঘটনা কীভাবে ঘটেছিল তার বিস্তারিত বিবরণ জানা না গেলেও বেঁচে যাওয়া কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন সেই লোমহর্ষক ঘটনার সাক্ষ্য।
তখন পরীক্ষা চলছিল
গুলি শুরু হওয়ার পরপরই আমরা ক্লাসরুম ছেড়ে দৌড় দেই। নবম-দশম শ্রেণীতে পার্টি চলছিল, সেখানে অল্প কয়জন ছিল। ওপর তলায় একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর পরীক্ষা চলছিল। আমি দেখলাম, ৭-৮ জন লোক প্রত্যেকটা ক্লাসরুমে ঢুকছেন আর বাচ্চাদের ওপর গুলি চলাচ্ছেন।
মুদাসসির আওয়ান
গুলি চলছিল এলোপাতাড়ি
আমরা হলে বসে একজন কর্নেলের লেকচার শুনছিলাম। পেছন থেকে গুলির শব্দ শুনি। হঠাৎ পেছনের দরজা শব্দ করে খুলে গেল আর দু’জন লোক এলোপাতাড়ি গুলি চালাতে লাগলেন। আমার পায়ে গুলি লাগলেও বাঁচতে পেরেছি।
কাশান, নবম শ্রেণী।
যাকে পাচ্ছিল তাকেই গুলি
তারা সামনে যাকে পাচ্ছিল, তাকেই গুলি করছিল। আমরা চেয়ারের পেছনে ও টেবিলের নিচে লুকাই। কিন্তু তারা আমাদের পায়েও গুলি চালাচ্ছিল।
-একজন ছাত্র (নাম জানা যায়নি)।
শুধু রক্ত আর লাশ
আমি দেখলাম যেসব বাচ্চারা কাঁদছিল আর চিৎকার করছিল তারা মুহূর্তেই লাশ হয়ে ঢলে পড়ছিল। সবার গায়ে বুলেট লাগছিল, সবার থেকে রক্ত ঝরছিল।
আবদুল্লাহ জামাল।
মরার অভিনয় করে বেঁচে যাই
হঠাৎ করে কেউ একজন চিৎকার করে আমাদের শুয়ে পড়তে এবং ডেস্কের নিচে লুকাতে বলে। তখনই বন্দুকধারীরা ‘আল্লাহু আকবর’ বলে গুলি করে।
এরপর এক বন্দুকধারী চিৎকার করে বলে ‘বেঞ্চের নিচে অনেক শিশু রয়েছে, যাও তাদেরকে ধরো’। আমার দুই পায়ে হাঁটুর নিচে গুলি লাগে। প্রচণ্ড ব্যথায় আমার কান্না পাচ্ছিল। তখন আমি মরার মতো পড়ে থাকার কথা চিন্তা করি।
আমি টাই খুলে তা ভাঁজ করে মুখে গুজে দেই যাতে করে আমার গোঙানির আওয়াজ শোনা না যায়। বড় বুট জুতা পরা লোক বেঁচে যাওয়া ছাত্রদের খুঁজে খুঁজে গুলি করতে থাকে। আমি চোখ বন্ধ করে শুয়ে থেকে কখন গুলির অপেক্ষা করতে থাকি। আমার সারা শরীর কাঁপছিল। মৃত্যুর এত কাছকাছি চলে গিয়ে ছিলাম আমি।
সালমান খান (১৬)
রক্ত ও দেহের টুকরোগুলো ধুনা তুলার মতো উড়ছিল
‘বোমা বিস্ফোরণ ও গুলির আঘাতে ফুটফুটে শিশুদের দেহ টুকরো টুকরো হয়ে এবং তাদের শরীর থেকে ফিনকি দিয়ে বের হওয়া রক্ত যেন ধুনা তুলার মতো উড়ছিল। এর সঙ্গে আর্তনাদ, মৃত্যুযন্ত্রণা যোগ হয়ে সৃষ্টি হয়েছিল নারকীয় পরিস্থিতির।’
পাকিস্তানের পেশোয়ারে আর্মি পাবলিক স্কুলে তালেবান হামলায় বেঁচে ফেরা এহসান এলাহি ডেইলি মেইলের সঙ্গে কথা বলার সময় এমন বর্ণনা দিয়েছে। সেই বীভৎস মুহূর্তগুলোর কথা বলার সময় বারবার ডুকরে কেঁদে ওঠে সে।
এহসান এলাহী

No comments

Powered by Blogger.