কৌশল বদলেছে হামাস

গাজা উপত্যকায় গতকাল ইসরায়েলি বিমান হামলার আগাম
সর্তকবার্তা পেয়ে সন্তানদের নিয়ে বাড়িঘর থেকে
বেরিয়ে যান একদল ফিলিস্তিনি নারী। রয়টার্স
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি স্থল হামলা গতকাল মঙ্গলবার পঞ্চম দিনে গড়িয়েছে। ইসরায়েল বলছে, তাদের এই অভিযানের লক্ষ্য হামাসের নির্মিত সুড়ঙ্গগুলো ধ্বংস করা এবং গাজা থেকে ইসরায়েলের ভেতরে রকেট নিক্ষেপ থামানো। তবে হামাসের যোদ্ধারা আর আগের মতো অপেশাদার নেই। তাই ইসরায়েলও আগের অভিযানগুলোর তুলনায় এবার কৌশল পাল্টেছে। ২০০৮-০৯ সালের গাজা অভিযানের সময় যেসব স্থান থেকে রকেট ছোড়া হতো, সেগুলোই ছিল ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর মূল লক্ষ্যবস্তু। তবে এবার তারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোও লক্ষ্যবস্তু করছে।এর আওতায় তারা গাজা সিটির পার্শ্ববর্তী জনপদ শাজাইয়াতে আঘাত হেনেছে। আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, ২০০৮-০৯ এবং ২০১২ সালের অভিযানের তুলনায় ইসরায়েল এবার অনেক বেশি সেনা ও সামরিক সরঞ্জামের সমাবেশ ঘটিয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী যে গাজার ব্যাপক ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়ও অভিযান চালাবে, এটা তারই একটা ইঙ্গিত। তবে এ ধরনের এলাকায় অভিযান চালানো ইসরায়েলিদের জন্য বিপজ্জনক হবে। গত রোববারই তার একটি ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। হামাসের হামলায় এদিন অন্তত ১৩ ইসরায়েলি সেনার প্রাণহানি ঘটে। ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ব্যাপক প্রাণহানি হলেও এখন পর্যন্ত দেশটি ঘোষিত লক্ষ্য পূরণে খুব বেশি সফল হয়নি। হামাস ইসরায়েলি বাহিনীর ওপরে অতর্কিতে আক্রমণ চালাতে সুড়ঙ্গ ব্যবহার করে যাচ্ছে। ইসরায়েলের ভেতরে তাদের রকেট ছোড়াও অব্যাহত রয়েছে, যদিও সংখ্যাটা কমেছে।বাস্তবতা হচ্ছে, ইসরায়েলের পাশাপাশি হামাসেরও সক্ষমতা বেড়েছে। ইসরায়েল নতুন নতুন কৌশল নিয়ে আসছে, আর তা প্রতিহত করতে হামাসসহ অন্য গোষ্ঠীগুলোও নতুন নতুন পথ বের করে নিচ্ছে। সবচেয়ে লক্ষণীয় ব্যাপার হচ্ছে, হামাসের যোদ্ধারা এখন অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রশিক্ষিত। তাঁদের এমন কিছু কৌশলও জানা আছে, যেগুলো ইসরায়েল অনুধাবন করতে পারেনি বলে মনে হচ্ছে। শাজাইয়া অভিযান থেকে ফিরে আসা একজন ইসরায়েলি সেনার বরাত দিয়ে ইসরায়েলি গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, হামাস এখন হিজবুল্লাহর মতো করে লড়াই করছে।
লেবাননভিত্তিক কট্টর শিয়া সংগঠন হিজবুল্লাহ আশি ও নব্বইয়ের দশকে ইসরায়েলি দখলদারত্বের বিরুদ্ধে সফল গেরিলা যুদ্ধ চালিয়েছে। এ ছাড়া ২০০৬ সালে লেবাননে ইসরায়েলি অভিযানের সময় হিজবুল্লাহ বহু ইসরায়েলি সেনাকে ঘায়েল করতে সক্ষম হয়। গাজায় সর্বশেষ ২০০৮ সালের সম্মুখ লড়াইয়ের সময়ও হামাস যোদ্ধাদের অপেশাদার বলেই মনে হয়েছে। তাঁরা তখন গাজায় সশস্ত্র মহড়া দিলেও ইসরায়েলি সেনাদের থামাতে পারেননি। তবে সংগঠনটি দৃশ্যত বুঝে ফেলেছে, ওই কৌশল ভুল ছিল। নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করার চেয়ে যথাসম্ভব গোপন রাখাটাই ভালো। হামাসের এখনকার কৌশলকে কমান্ডো কৌশল বলা চলে। অলিগলি চেনা থাকার সুবিধা তো তারা পাচ্ছেই। হামাস এরই মধ্যে বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা পিছু হটবে না। তারা মিসরের মধ্যস্থতায় অস্ত্রবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। এর মাধ্যমে হামাস দেখিয়ে দিতে চায়, তারাও এমন একটা সামরিক শক্তি, যাকে সমীহ করতে হবে। হামাস দাবি করেছে, তারা ইসরায়েলি এক সেনাকে বন্দী করেছে। এ খবরের সত্যতা সম্পর্কে গতকাল পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে খবর সত্যি হলে তা হবে হামাসের জন্য বড় সফলতা এবং ইসরায়েলের জন্য বড় দুঃসংবাদ। এর আগে ২০০৬ সালে হামাস সীমান্ত এলাকা থেকে ইসরায়েলি সেনাসদস্য গিলাদ শালিতকে অপহরণ করেছিল। পাঁচ বছরের মাথায় এক হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীর মুক্তির বিনিময়ে তাঁকে ছাড়া হয়। এবারের সেনা আটকের খবর সত্যি হলে হামাস আবার ইসরায়েলের সঙ্গে দর-কষাকষি করার অস্ত্র হাতে পাবে। সেনাসদস্য অপহরণ ও হতাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে বলেই গাজায় এবার স্থল অভিযানের ব্যাপারে ইসরায়েলের অনেকেরই আপত্তি ছিল। ইসরায়েলি বাহিনীর হিসাবে, এখন পর্যন্ত যে ২৯ জন ইসরায়েলির প্রাণ গেছে, তার মধ্যে ২৭ জনই সেনাসদস্য। ইসরায়েল এর আগে হিজবুল্লাহর হাতে এ ধরনের ক্ষয়ক্ষতির শিকার হলেও হামাসের হাতে এই প্রথম তা ঘটল। এ ঘটনা ইসরায়েলের জনমতের ওপরে মারাত্মক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করা হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.